রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

নদ-নদী দখল দূষণ

অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর হোন

বাংলাদেশকে বলা হয় নদ-নদীর দেশ। দুনিয়ার কোনো দেশে বাংলাদেশের মতো এত নদ-নদী নেই। কিন্তু এই গর্বের বিষয়টি ক্রমেই নি®প্রভ হয়ে উঠছে। অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের নদ-নদীগুলো নাব্য হারাচ্ছে। পলি পড়ে ভরাট হয়ে হারাচ্ছে গভীরতা। চর পড়ে অনেক নদ-নদী যেমন সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে তেমন অনেক নদ-নদী হারাচ্ছে তাদের অস্তিত্ব। স্বাধীনতার পর গত ৪৮ বছরে দেশের নদীপথের দৈর্ঘ্য এক-পঞ্চমাংশে নেমে এসেছে। ’৭১-এর আগে দেশে নদীপথের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ হাজার ১০০ কিলোমিটার। এখন তা ৫ হাজারের নিচে। খনন না করায় পলি পড়ে অস্তিত্ব হারাচ্ছে একের পর এক নদ-নদী। ভাটির দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীগুলোয় প্রতি বছর ১২০ কোটি ঘনমিটার পলি প্রবাহিত হয়। এর বড় অংশই নদ-নদীর তলদেশে জমে সৃষ্টি করছে নাব্য সংকট। ৪৮ বছরে নদ-নদীগুলোয় পলি জমেছে ১৮০ কোটি টনের বেশি। পলির কারণে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৩০০ নদ-নদী। মাত্রাতিরিক্ত হারে পলি জমা, নদ-নদী সংরক্ষণে অবহেলা, অবকাঠামো নির্মাণ, খনন যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবলের অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদ-নদী রক্ষায় পরিবেশ অধিদফতর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিআইডব্লিউটিএ, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা গত ১০ বছরে অপদখলকারীদের উচ্ছেদে একের পর এক অভিযান চালিয়েছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে ১০ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা। তবে অভিযানের পরপরই নজরদারির অভাবে অপদখলকারীদের থাবা আবারও বিস্তৃত হয়েছে। ঢাকার চারপাশ ঘিরে থাকা বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। তুরাগ নদ দখল ও দূষণে সরু খালে পরিণত হয়েছে। নদ-নদী খননে প্রায়ই কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হলেও তাতে জনগণের ট্যাক্সের টাকার অপচয় ঘটছে। ড্রেজিং করে নদ-নদীর গভীরতা বাড়ানোর বদলে কর্তাব্যক্তিদের পকেট পূর্তি আসল উদ্দেশ্য হয়ে ওঠায় প্রায় প্রতিটি প্রকল্প প্রহসনে পরিণত হয়। দেশের নদ-নদীর  অস্তিত্ব রক্ষায় ব্যাপকভাবে ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিবাসীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। ড্রেজিংয়ের নামে হরিলুট যাতে না হয় সেদিকে রাখতে হবে তীক্ষè নজর। নদ-নদী অপদখল ও দূষণের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান শুধু অব্যাহত রাখা  নয়, এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর