সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

দিল্লির দরবার

জয়ন্ত রায় চৌধুরী

মহান মুঘলরা দিল্লির দরবার বা ‘কোর্ট অব দিল্লি’তে বসে ভারত শাসন করেছেন সাড়ে তিনশ বছর। তাদের জায়গায় অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝিতে আসে ব্রিটিশ। এরা বন্দরনগরী কলকাতা থেকে শাসন চালানো শুরু করলেও দিল্লির দরবারের আকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারেনি। তারা ভাইসরিগ্যাল প্যালেসের গ্রেট হল অব অডিয়ান্সের নাম দেয় ‘দরবার হল’। ভারতের ইতিহাস থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ফিকে হয়ে যাওয়ার সূচনাও হয়েছিল দিল্লি নগরীতেই। স্বাধীন ভারতের নেতাদের হাতে তারা দায়িত্ব দিয়ে বিদায় নেয় এখান থেকেই। প্রসারমান অর্থনীতি ভারতীয় উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের পক্ষবিস্তার ঘটিয়েছে এশীয় মহাদেশ ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলেশিয়ায়। এরই প্রভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার জন্য দিল্লির ‘দরবার’টি এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল হিল, বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব পিপল, লন্ডনের হোয়াইট হল ও বনের চ্যান্সেলারির সঙ্গে। এ লেখাটি ‘দিল্লির দরবার’ থেকে দেখা ভারতের কাহিনি বর্ণনা করবার চেষ্টা।

দুনিয়ার মহানতম উৎসব

ভারতে আবারও এসে পড়ল নির্বাচন মৌসুম। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের পোস্টার আর ব্যানার বিভিন্ন শহর ও গ্রামে ঠাঁই করে নেওয়ার জন্য মেতে উঠেছে। চলন্ত গাড়িতে লাগানো লাউড স্পিকার থেকে রাজনৈতিক স্লোগান শোনা যাচ্ছে। মাঝে একটু বিরতি দিয়ে বাজছে বলিউডের ছবির জনপ্রিয় গান। দেশের এখানে-ওখানে রাজনীতিকরা বড় বড় জনসভায় দিয়ে চলেছেন ভাষণ। কেউ কেউ একে বলছেন, ‘দুনিয়ার মহানতম উৎসব’ ১৩০ কোটি মানুষের গণতন্ত্র উদযাপন। দিল্লিতে পরবর্তী কেন্দ্রীয় সরকার কোন দলটি গঠন করবে তা নির্ধারণের জন্য ৯০ কোটি ভোটার ১০ লাখ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবে। চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে মোট সাত ধাপে ভোট গ্রহণ চলবে। ভারত হচ্ছে মহাদেশ আকৃতির দেশ, এর জনসংখ্যাও বিপুল। তাই ভোটের আনুষঙ্গিক সামগ্রীর জোগান দিতে গিয়ে অধিকাংশ দেশের তুলনায় এখানে নির্বাচনে বেশি সময় লাগে। ভারতের ভোটারের সংখ্যা ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলিত জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজের হিসাবে দলগুলো ও তাদের মনোনীত প্রার্থীরা ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ব্যয় করেছে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার। বিশ্লেষকদের ধারণা, এই অঙ্ক এ বছর দ্বিগুণ হয়ে যাবে। যে টাকা ব্যয় হয় তার বড় একটি অংশ ‘কালো’। কে কত খরচ করে তার ওপর নজরদারি থাকে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের। তা সত্ত্বেও ভোটের মাঠে গড়াগড়ি করতে প্রচুর টাকা আসে ভারতের বিরাটকায় সমান্তরাল অর্থনীতি থেকে। অনুমান করা হয়, এই টাকার আকৃতি ভারতের ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রকাশ্য অর্থনীতির অর্ধেক।

বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নির্বাচন বলে অভিহিত এবারের ভোটাভুটি সার্থক করার জন্য প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ পোলিং ও নিরাপত্তাকর্মী কাজ করবেন। ভোটগ্রহণ সংশ্লিষ্ট কর্মী ও ব্যালট মেশিন পরিবহনে নৌকা, হাতি, উট, উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার ছাড়াও ব্যবহৃত হবে ১২০টির বেশি ট্রেন এবং তিন সহস্রাধিক কোচ এবং দুই লাখ বাস ও কার। পৌঁছানো খুব কঠিন এমন ধরনের ভোটকেন্দ্রগুলোতে কয়েক হাজার ভোটগ্রহণ কর্মী দল ২-৩ দিন ধরে হেঁটে পৌঁছবেন। সংসদের নিম্নকক্ষের নাম ‘লোকসভা’। এর ৪৫৩ আসনের জন্য নির্বাচন হচ্ছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ ভারতে নিবন্ধিত দল ১৭০৯টি। এর মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকটি দলের দুই বা তিনটির বেশি রাজ্যে প্রভাব আছে। পাঁচ বছর ধরে দেশ শাসন করতে নির্বাচিত লোকসভা সদস্যরা তাদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেবেন।

কে শাসন করবে?

স্বাধীন হওয়ার সময় ৭২ বছর আগে ভারত নিজেকে গণতান্ত্রিক দেশ করার পথ বেছে নেয়। তবু দেখা যায়, সব সময় ভোটাররা শক্তিমান নেতাদেরই অনুরাগী, এমনকি তারা একটা বংশকেও লালন করে। প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৪-তে তার মৃত্যু পর্যন্ত ভারতের নেতৃত্ব দেন। তিনি সুলেখক ছিলেন; স্বৈরতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বনের মানুষ হিসেবেও নাম ছিল তার। নেহেরুর মেয়ে ইন্দিরা গান্ধী, তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সম্ভবত আজ অব্দি তার মতো ব্যক্তিমাধুর্যে উজ্জ্বল নেতা আর কেউই নন। তিনি দেশের নেতৃত্ব দেন ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত। আবার ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সালে করুণ মৃত্যু পর্যন্ত ভারত শাসন করেন তিনি। বলা হতো ‘ইন্দিরার মন্ত্রিসভায় ইন্দিরাই শুধু পৌরুষধারী।’ নেহেরু ও ইন্দিরার পরে দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শুধু একজনই- ধীরস্থির প্রকৃতির ড. মনমোহন সিং। তিনি প্রশিক্ষিত অর্থনীতিবিদ। তার নেতৃত্বেই ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের নানা প্রান্ত স্পর্শ করে। অগোছালো বিশালদেহী অর্থনীতিকে তিনি দ্রুতগতিতে সুবিন্যস্ত হওয়ার পথে নিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলা হয় ভারতের নতুন ‘শক্তিমান পুরুষ’। তিনি এখন দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আসন্ন নির্বাচনে তার জনপ্রিয়তার হার নিম্নগামী দেখা গিয়েছিল। মোদির চলতি মেয়াদে দাগ ফেলেছে দুটি বিষয় : (১) ভারতীয় মুদ্রার ৮৬ শতাংশ মূল্য হ্রাসের আকস্মিক সিদ্ধান্ত এবং (২) পণ্য ও সেবা করারোপের এলেমেলো পদক্ষেপ। দুটি ঘটনার পরিণতিতে বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়, বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চতায় পৌঁছে এবং পণ্যমূল্য স্থবির হয়ে পড়ায় কৃষকরা বিক্ষুব্ধ হন। তা সত্ত্বেও অস্বীকার করা যাবে না যে, মোদির শাসনকালে সাত শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধির হার বজায় থেকেছে, দুর্নীতি দমনে অভিযান চলেছে আর শাসন ব্যবস্থা ডিজিটালাইজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জনমেজাজ এখনো অস্পষ্ট। মোদির দল বিজেপি গেল ডিসেম্বরে হিন্দিভাষী গুরুত্বপূর্ণ তিনটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গেছে। তবে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পরবর্তী ঘটনাবলি অবস্থা বদলে দিতে থাকে। প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর বিমান হামলা ভোটারদের দৃষ্টি অর্থনীতির চেয়েও বেশি টেনে নেয় সীমান্তের দিকে। দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধারী এ দুটি দেশের বিমান বাহিনী ১৯৭১-এর পর এই প্রথম পরস্পরের ভূখণ্ডে ঢুকেছে। একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার জন্য পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে ভারত। এবারকার উত্তেজনার সূচনা হয় কাশ্মীরে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় পুলিশের ৪০ জওয়ানকে হত্যার পর। পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। জইশের সঙ্গে আফগান তালেবান ও আল-কায়েদার আছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। জইশের এ হামলা আন্তর্জাতিক বাদানুবাদ ঘটায় এবং জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ লাখ লাখ ভারতীয় মধ্যবিত্তের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক সঞ্চারিত করে। নির্বাচনে কে জিতবে এবং কত আসনে জিতবে তা এখনো জল্পনা-কল্পনার বিষয়। আগের নির্বাচনে বিজেপি ২৬৭ আসন জিতে ক্ষমতায় বসে। দলটি আশা করছে, ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ বিধানের ওয়াদা, শক্তিমান নেতার ভাবচ্ছবি সমৃদ্ধ মোদি এবং ‘বিকাশ’ (উন্নয়ন) বিবেচনা করে তাদেরই ভোট দিয়ে ফের ক্ষমতায় আনবে জনতা। বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস পার্টি। ১৩৪ বছরের প্রাচীন এ দলটি আগের নির্বাচনে মাত্র ৪৪টি আসনে জয়ী হয়। কংগ্রেসের বিশ্বাস, কর্মসংস্থানের সংকুচিত সুযোগ আর আয়-রোজগারের সঙ্গীনদশা জনমনে যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত করে রেখেছে, তাতে গরিষ্ঠ আসনে তারাই জিতবে। নির্বাচনী প্রচারণায় তরুণ রাহুলকে সহায়তা করছেন তার বোন প্রিয়াঙ্কা। অনেকেই তার মধ্যে তার দাদি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সৌন্দর্য ও ব্যক্তি-মাধুর্য দেখতে পাচ্ছেন।

মোদি লড়বেন পুরীতে?

সমুদ্র উপকূলঘেঁষা পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশা। এখানে বিজেপি কখনই ক্ষমতায় বসতে পারেনি। তাই, ওড়িশার বিজেপি সদস্যরা চান, শক্তির প্রতীক নরেন্দ্র মোদি এবার এখানকার তীর্থনগরী পুরীর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশা ও মনিপুরের হিন্দুদের ওপর পুরীর ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের যথেষ্ট প্রভাব। পশ্চিমবঙ্গকে বিশেষ টার্গেট করেছে বিজেপি। কারণ এই রাজ্যটির অনেকেই মনে করে বিজেপি হচ্ছে হিন্দিভাষী উত্তর ভারত ও পশ্চিম ভারতের একটি দল মাত্র। মোদির বাড়ি পশ্চিম ভারতে। পুরী থেকে প্রার্থী হবেন কিনা, মোদি এখনো তা খোলাসা করছেন না। ২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনে মোদি গুজরাটের ভাদোদরা আর উত্তর প্রদেশের বারানসি আসনে জয়ী হন। সংবিধানে আছে, একাধিক আসনে জিতলে একটি রেখে অন্য আসনগুলো ছেড়ে দিতে হবে। নিষ্ঠাবান হিন্দুদের কাছে বারানসি হচ্ছে হিন্দুত্ববাদের জেরুজালেম। লোকসভার সর্বাধিক আসন উত্তর প্রদেশে। সে জন্য বারানসির আসনটিই রাখলেন মোদি। ছেড়ে দিলেন ভাদোদরা। মোদি কি তার ম্যাজিক পরীক্ষা করতে এবার পুরীতে লড়বেন? সময়ই তা বলে দেবে।

ঢাকা ১৯৭১

ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক যখন অবনতির চরম পর্যায়ে তখন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের গড়ে ওঠা বিশেষ সম্পর্ক আরও গভীর হতে চলেছে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের অর্ধশতবার্ষিকী উদযাপনকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশের সহযোগিতায় ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বর্ণাঢ্য উদযাপনে ভারত নিয়েছে চমৎকার সব উদ্যোগ। শেখ মুজিবের ওপর যৌথ প্রযোজনায় ছায়াছবি তৈরি করা হবে। পরিচালনা করবেন বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার শ্যাম বেনেগাল। ১৯৭১-এর ঘটনাবলির প্রতিবেদনভিত্তিক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া আয়োজন করা হবে সাড়া জাগানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ভারতের সাবেক ‘কালচারাল ডিপ্লোম্যাটিক জার’ নামে অভিহিত রিভা গাঙ্গুলী দাসকে ঢাকায় হাইকমিশনার করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, তিনি দুই দেশের জোরদার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে উপযুক্ত ‘রাবীন্দ্রিক’ ছোঁয়া দেবেন। বাঙালি রিভা বড় হয়েছেন দিল্লিতে। তিনি মৃদুভাষী হলেও খুবই দৃঢ় সংকল্পচিত্ত পেশাদার কূটনীতিক। ফরেন সার্ভিসের খুব সিনিয়রদের মধ্যে তিনিই প্রথম বাংলাদেশে হাইকমিশনার নিযুক্ত হন। দিল্লির লেডি আরউইন স্কুল ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক ছাত্রীর শিগগিরই পররাষ্ট্র সচিব পদে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা।

বিগ বি’র পঞ্চাশ

ভারতের শীর্ষ স্তরের অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন তার অভিনয় জীবনের ৫০ বছর পুরো করলেন এ মাসে। তার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা প্রকাশার্থে বলিউডের ৩৫০ কোটি ডলারের সিনে শিল্পজগতে তাকে ‘বিগ বি’ বলে উল্লেখ করা হয়। ‘সাত হিন্দুস্তানি’ তার প্রথম ছবি। এতে তুলে ধরা হয়েছে, ঔপনিবেশিক পর্তুগিজ শাসন থেকে গোয়া রাজ্যকে মুক্ত করার জন্য সাত ভারতীয় যুবকের কাল্পনিক সংগ্রামের কাহিনি। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা অল ই্িন্ডয়া রেডিওতে সংবাদ পাঠক পদে চাকরি চেয়েছিলেন অমিতাভ। কিন্তু কণ্ঠস্বর ‘খুব বেশি গমগমে’ এই যুক্তিতে তাকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে ওই কণ্ঠস্বর আর চারুদর্শন চেহারা ও রাগী যুবকের ইমেজ ব্যবহার করে দর্শকদের প্রিয় শিল্পী হয়ে ওঠেন তিনি। সচ্ছল পরিবার থেকে আসা অমিতাভের পিতা হরিবংশরাও বচ্চন ছিলেন নাম-করা কবি। তিনি পড়ালেখা করেন অভিজাত পাবলিক স্কুল এবং বিখ্যাত শেরউড কলেজে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছেলেদের সঙ্গে তার সখ্য। তাতে অবশ্য তার চলার পথটি কুসুম-বিছানো হয়নি। বলিউডের নির্দয় মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য তাকে কঠোর সংগ্রাম করতে হয়েছে।

‘আনন্দ’ ছবিতে ভাগ্যক্রমে ডাক্তারের ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। এ ছবির নায়ক সে সময়কার সুপারস্টার রাজেশ খান্না। ‘আনন্দ’ই অমিতাভকে তারকা করে। শুরু হয় খ্যাতির পর খ্যাতি অর্জন। ১৯৮৪ সালের নির্বাচনে লোকসভার সদস্য হলেন অমিতাভ। এরপর প্রযোজনায় নামলেন এবং বিস্তর লোকসান দিতে থাকলেন। আর্থিক বিপর্যয় যেন শেষ হতে চাইছিল না। কিন্তু ২০০০ সালে টেলিভিশনে ‘কৌন বনে গা ক্রোড়পতি’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ালেন বিগ বি। ধূসর কেশ অমিতাভ এখনো হৃদয়স্পর্শী অভিনয় করে চলেছেন। বিবিসির ‘ইয়োর মিলিনিয়াম’ অনলাইন জরিপে ১৯৯৯ সালে অমিতাভ বচ্চন ‘গ্রেটেস্ট স্টার অন স্টেজ অর স্ক্রিন’ নির্বাচিত হয়েছেন। তখন বিবিসি বলেছিল : ‘পশ্চিমা দুনিয়ার অনেকে হয়তো তার নামও জানেন না। কিন্তু তিনি যেখানে উঠলেন তার অপরিমেয় জনপ্রিয়তার জোরেই উঠলেন।’

লেখক :  ভারতীয় প্রবীণ সাংবাদিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর