সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

রসুল (সা.)-এর মেরাজ হয়েছিল জাগ্রত অবস্থায়

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

রসুল (সা.)-এর মেরাজ হয়েছিল জাগ্রত অবস্থায়

মেরাজ শব্দের অর্থ ওপরে ওঠা। ঊর্ধ্বালোকে গমন করা। রসুল (সা.)-কে মহান আল্লাহ পৃথিবী থেকে ঊর্ধ্বালোকে নিয়ে যে সম্মান দিয়েছেন, বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন, ইসলামী ইতিহাসে তা মেরাজ বা ঊর্ধ্বালোকে ভ্রমণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মেরাজের ঘটনা কবে সংঘটিত হয়েছে এ সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা থাকলেও বেশির ভাগ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়, রসুল (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির পাঁচ বছর পর মেরাজ সংঘটিত হয়েছে। এই ঐতিহাসিক ঘটনা প্রসিদ্ধ মতামত অনুযায়ী রজব মাসের ২৭তম রাতে সংঘটিত হয়েছিল। মেরাজের সফরে দুটি পর্ব বয়েছে। একটি হলো, মক্কা মুকাররমা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত সফর। আর অপরটি হলো, বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে বিভিন্ন আসমানে আরোহণ ও ভ্রমণ। প্রথম পর্বকে ইসরা বলে। আর দ্বিতীয় পর্বকে মেরাজ বলে । অর্থাৎ মক্কা মুকাররমা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত সফর হলো ইসরা বা রাত্রিকালীন সফর। আর বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে সাত আসমানে ভ্রমণ করা হলো মেরাজ বা ঊর্ধŸালোকে ভ্রমণ। ইসরা বা রাত্রিকালীন সফর এবং মেরাজ বা ঊর্ধ্বালোকে ভ্রমণ উভয় সফর এক সঙ্গেই হয়েছিল। পবিত্র কোরআনে ইসরা বা রাত্রিকালীন সফর সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত- যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি। যাতে আমি তাঁকে কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয় তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।’ সূরা : বনী ইসরাইল, আয়াত ১। এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাকে সশরীরে এবং জাগ্রত অবস্থায় রাত্রিকালীন সফর করিয়েছেন। স্বপ্নে নয়। কারণ আল্লাহতায়ালা এই আয়াতের শুরুতে ‘সুবহান’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। ‘সুবহান’ শব্দটি আশ্চর্যজনক ঘটনায় ব্যবহৃত হয়। রাত্রিবেলায় সামান্য সময়ের মধ্যে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রসুলকে জাগ্রত অবস্থায় মক্কা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস (যা বর্তমানে ইসরাইলের দখলে) এবং সাত আসমান, জান্নাত, জাহান্নাম সবকিছু সফর করিয়েছেন। তাই এখানে আশ্চর্যজনক শব্দ ‘সুবহান’ ব্যবহার করেছেন। যদি স্বপ্নে হতো তাহলে ‘সুবহান’ শব্দের ব্যবহার এখানে যুক্তিযুক্ত হতো না। কারণ স্বপ্নে এসব দর্শন করা কোনো আশ্চর্যজনক বিষয় নয়। সাধারণ মানুষও বিভিন্ন সময়ে স্বপ্নে দেখে যে, সে আসমানে উড়ছে, এখানে সেখানে ভ্রমণ করছে। মোটকথা আমরা বুঝতে পারলাম, রসুল (সা.)-এর মেরাজ জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল। তিনি মক্কা মুকাররমা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস বোরাকযোগে সফর করেন। বোরাক হলো এক প্রকার জান্নাতি প্রাণী যা প্রিয় রসুল (সা.)-কে বহন করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। সেখান থেকে তিনি এক প্রকার স্বর্গীয় সিঁড়ির মাধ্যমে আসমানে গমন করেন। সিঁড়িটির মধ্যে ধাপ ধাপ করা ছিল। একের পর এক সব আসমানে তিনি গমন করেন। প্রত্যেক আকাশে ফেরেশতারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। প্রত্যেক আসমানে অবস্থানরত নবীদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। প্রত্যেক নবী বিশ্বনবীকে সাদর সম্ভাসন জানান। জিবরাইল প্রত্যেক নবীর সঙ্গে বিশ্বনবীকে পরিচয় করিয়ে দেন। অতঃপর রসুলে পাক (সা.) এমন এক ময়দানে পৌঁছেন যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। এরপর তিনি ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ দেখেন যেখানে আল্লাহর নির্দেশে স্বর্ণের প্রজাপতি এবং বিভিন্ন প্রকার প্রজাপতি ইতস্তত ছোটাছুটি করছিল। এরপর তিনি বায়তুল মামুরও দেখতে পান। বায়তুল মামুর হলো সপ্তম আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদ। যেখানে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা            আল্লাহকে সেজদা করেন। যারা একবার সেখানে প্রবেশ করে তারা কেয়ামত পর্যন্ত আর কখনো সেজদা করার সুযোগ পাবে না। এরপর রসুল (সা.) জান্নাত ও জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখেন। সেখানে মহান আল্লাহ প্রিয় রসুলকে নামাজ উপহার দেন ।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর