সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

গণহত্যা দিবস

পাকিস্তানি হানাদারদের প্রতি ঘৃণার দিন

গণহত্যা দিবস আজ। ১৯৭১ সালে মানবসভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরতম গণহত্যার সূচনা হয়েছিল ২৫ মার্চের এ দিনে। হালাকু খান, চেঙ্গিস খান ও হিটলারের বশংবদ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ১৯৭১ সালের এমন রাতে কাপুরুষোচিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালিদের ওপর। শুরু করে অপারেশন সার্চলাইট নামের হত্যাযজ্ঞ। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তানের দুই যুগের ইতিহাসে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী বাঙালিদের প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। সেই সম্ভাবনা নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে সামরিক জান্তা। একাত্তরের মার্চের শুরুতেই পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের আহূত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের দমনে কৌশলী ভূমিকা নেয়। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার আড়ালে সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠকে অপারেশন সার্চলাইট শুরুর নির্দেশ দেন। সেদিন মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজধানী ঢাকায় মেশিনগান, কামান বিক্যুয়লস রাইফেল, মর্টার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসসহ রাজধানীর প্রায় সর্বত্র তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সারা দেশে যে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় তা অব্যাহত থাকে ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল তা সুস্পষ্টভাবে যুদ্ধাপরাধ। পাকিস্তান সরকার যুদ্ধাপরাধে জড়িত সৈন্যদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিলেও গত ৪৫ বছরেও তা পালন করেনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বর্বর জাতি হিসেবে পাকিস্তানিরা যে পরিচিতি গড়ে তুলেছিল তা তারা এখনো ধারণ করে চলেছে। নিজেদের অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়ার মানবিক আচরণও তারা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানের এই ব্যর্থতা তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাভাবিক সম্পর্কে অন্তরায় সৃষ্টি করছে। আমরা আশা করব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে জাতিসংঘ এই দিনটিকে স্বীকৃতিদানে এগিয়ে আসবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর