মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বাধীনতা মহান আল্লাহ-প্রদত্ত নেয়ামত

মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর তবে তা শেষ করতে পারবে না।’  সূরা নাহল, আয়াত ১৭। আল্লাহ মানুষকে যেসব নেয়ামত দান করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ হলো স্বাধীনতা। বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আল্লাহর এ নেয়ামত অর্জন করেছে।

আরবি ভাষার একটি প্রবচন- ‘দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ’। জš§ভূমি মক্কার প্রতি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপরিসীম ভালোবাসার কথা আমাদের জানা। প্রতিপক্ষ মুশরিকদের হিংস্রতায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যেতে বাধ্য হন। তিনি যখন মদিনার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন তখন পেছন ফিরে প্রিয় মাতৃভূমির দিকে তাকাচ্ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হে মক্কা প্রিয় জš§ভূমি আমার! যদি তোমার অধিবাসীরা আমাকে বাধ্য না করত আমি কোনো দিন তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।’

হাদিসের বর্ণনায় আছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাকেও খুব ভালোবাসতেন। কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মদিনার সীমান্তে উহুদ পাহাড় চোখে পড়লে নবীজির চেহারায় আনন্দের আভা ফুটে উঠত এবং তিনি বলতেন, ‘এই উহুদ পাহাড় আমাদের  ভালোবাসে, আমরাও উহুদকে ভালোবাসি।’ বুখারি, মুসলিম।

তাফসিরে কুরতুবিতে বর্ণনা করা হয়েছে, যখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জš§ভূমি মক্কা নগরী ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করছিলেন, তখন তাঁর চোখ সজল হয়ে উঠেছিল। দেশের জন্য, জš§ভূমির জন্য তাঁর মায়া ও ভালোবাসা ছিল অকৃত্রিম। পরে আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় হাবিবের মাধ্যমে মক্কাকে মুশরিকদের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে, স্বাধীনতা দিয়ে ধন্য করেছেন।

হিজরতের পর মদিনায় হজরত আবুবকর (রা.) ও বিলাল (রা.) জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় তাদের মনে প্রিয় স্বদেশ মক্কার স্মৃতিচিহ্ন জেগে উঠেছিল। তারা জš§ভূমি মক্কার কথা স্মরণ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের মনের এ দুরবস্থা দেখে প্রাণভরে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আমরা মক্কাকে যেমন ভালোবাসি, তেমনি তার চেয়েও বেশি মদিনার ভালোবাসা আমাদের অন্তরে দান করুন।’ বুখারি।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে স্বদেশকে ভালোবেসে আমাদের জন্য দেশপ্রেমের আদর্শ রেখে গেছেন। তিনি তাঁর স্বদেশ মক্কাকে ভালোবাসতেন, মক্কার জনগণকে ভালোবাসতেন। তাদের আল্লাহর পথে আনার জন্য তিনি অপরিসীম অত্যাচার সহ্য করেছেন। তার পরও কখনো স্বদেশবাসীর অকল্যাণ কামনা করেননি। তায়েফে নির্যাতিত হওয়ার পরও কোনো বদদোয়া করেননি।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কেউ তোমাদের কোনো উপকার করে তবে তাকে প্রতিদান দেবে। যদি প্রতিদান দিতে না পারো তবে তার জন্য এমনভাবে দোয়া করবে যেন তোমাদের মন সাক্ষ্য দেয়, হ্যাঁ তোমরা তার প্রতিদান দিয়ে দিয়েছ।’ আবু দাউদ।

আমাদের স্বাধীনতার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের অশেষ ঋণ। মহান আল্লাহর কাছে স্বাধীনতার এই দিনে আমরা তাদের জন্য দোয়া করব। আল্লাহ তাদের বেহেশতের সুশীতল স্থানে ঠাঁই দিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

 

 

সর্বশেষ খবর