বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ওরা শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার

পীর হাবিবুর রহমান

ওরা শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার

দেশে একটি একতরফা উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বনাম বিদ্রোহীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। প্রধান বিরোধী বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের ব্যাপারে নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করেছে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামুখর রাখতে সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য কোনো অনিয়মের পথ সরকার নেয়নি। এমনিতেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল দেশের রাজনীতিকেই নয়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাণহীন করে দিয়েছে। উপজেলা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে এসে দেখা গেছে ভোটার হারিয়েছে ভোটের আকর্ষণ। ভোট কেন্দ্রে ভোটার নেই অনেক জায়গায়। তবু হিসাবে ভোট দেখাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের আলোচনায় আস্থা নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয়। যা ছিল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিগত ১০-১২ বছরে নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিএনপি অনেক দুর্বল হয়েছে। নিজেদের হঠকারী আন্দোলন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও সরকারের দমনপীড়নে যখন শক্তিক্ষয় ঘটেছে, নেতা-কর্মীরা মামলার জালে আটকা, দলের চেয়ারপারসন ও ধানের শীষের জনপ্রিয়তার উৎস বেগম খালেদা জিয়া জেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যখন নির্বাসিত লন্ডন জীবনে একুশের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তখন বিএনপি অগোছালো ও নেতৃত্বহীন অবস্থায় বিভ্রান্তির মধ্যে ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সব দিক থেকে পরিকল্পিত, গোছানো ও শেখ হাসিনার উন্নয়নের জনপ্রিয়তার ইমেজে ভর করে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। নির্বাচনী লড়াইয়ে দেশের জনগণের মধ্যেই শেখ হাসিনার বিকল্প নেই, এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করে আবার ক্ষমতায় আসছে এমন ধারণার জন্ম দিতে পেরেছে। সেইসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত করেছে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে। একটা গণজাগরণের মধ্যে ভোটের হাওয়া তৈরি করেছে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন বড় বড় কথা বললেও সবার জন্য প্রচার-প্রচারণার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারেনি। একটা প্রতিকূল কঠিন পরিস্থিতির মুখে বিএনপি অপরিকল্পিতভাবে নেতৃত্বহীন অবস্থায় ভোটে গিয়ে জামায়াতকে সঙ্গে নেওয়ায় বিতর্কেও পতিত হয়েছে। যেখানে মানুষকে বা ভোটারকে এমনকি দলের কর্মী-সমর্থকদেরও জাগাতে পারেনি। মাঠের অনেক বিএনপি কর্মী নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। মানুষ বিশ্বাস করেছে, পর্যবেক্ষক মহল নিশ্চিত হয়েছে শেখ হাসিনার বিকল্প হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জনপ্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বী নেতৃত্ব না থাকায় আওয়ামী লীগ মহাজোটই ক্ষমতায় ফিরে আসবে। বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসবে এটাও সবাই বিশ্বাস করেছিলেন। কারণ দেশে প্রশাসনসহ সকল শ্রেণি-পেশার এবং সুবিধাভোগী অংশও আওয়ামী লীগমুখী হয়েছে ১০ বছরে। কিন্তু নির্বাচনে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তা সবাই বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে যে ফলাফল এসেছে তা ছিল বিএনপির জন্য শোকে মুহ্যমান হওয়ার মতো। গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্যও হতাশার। সংসদীয় গণতন্ত্রের দুই চাকা নির্ভর রাজনীতির সৌন্দর্যহানির জন্য এ ফলাফল ছিল বিষাদের। বগুড়া, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ রাজশাহী অঞ্চলের যেসব আসন বিএনপির জন্য দুর্গ বলে খ্যাত সেখানে ধানের শীষের বিশাল ভরাডুবি রাজনৈতিক মহলসহ সবাইকে বিস্মিত করেছে। এমনকি বিএনপির হেভিওয়েট অনেক প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের ফলাফল চমকেই দেয়নি, রীতিমতো এসব এলাকার নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে মানুষের বিবেকে বিলিয়ন ডলার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের পর বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনই চায়নি, সংসদে যোগদান না করার ঘোষণায় এখনো অবিচল। এমনকি নির্বাচন নিয়ে আগের রাতে ভোট সম্পন্ন করার যে অভিযোগ এনেছে তার সঙ্গে টিআইবিও একই সুরে বক্তব্য রেখেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা যখন বলেন আগের রাতে ভোট ঠেকাতেই ইভিএম পদ্ধতি দরকার তখন মনে হয়, বিএনপি ও টিআইবির অভিযোগ মেনে নিয়েছেন। এমন বক্তব্যের আগে তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল। এমনকি মহাজোটের শরিক জাসদের একাংশ যাদের প্রতিনিধি মঈন উদ্দিন খান বাদল এ নিয়ে জীবনে তিনবার নৌকায় চড়ে সংসদে এসেছেন সেই দলও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সেই নির্বাচনের যে বিষাদগ্রস্ত প্রভাব গোটা বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজে পড়েছে তার এখনো রেশ কাটিয়ে ওঠা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন চিত্রে বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন তখন এই রাজনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে তার মনোনয়নে, তার ইমেজে ও সমর্থনে বিজয়ী জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলের আসনে বসিয়েছেন। একই সঙ্গে নৌকায় চড়ে আসা শরিকদেরও ক্ষমতার বাইরে রেখেছেন। চাইছেন সংসদে তারা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করুন। ঐক্যফ্রন্টের হাতে গোনা বিজয়ীদের সংসদে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির কারাবন্দী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। বিনিময়ে ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ীদের সংসদে যোগদানের কথা বলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ী হয়ে আসা সাবেক ডাকসু ভিপি ও আজন্ম আওয়ামী লীগার সুলতান মনসুরকে সংসদে এনে চমক দেখিয়েছেন। উপজেলাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় অনেকে সমালোচনা করেন। কিন্তু ব্রিটেন ও ভারতের মতো সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো নির্বাচনী ব্যবস্থা দলীয় প্রতীকে শেখ হাসিনা শুরু করে কার্যত ইতিহাস গড়েছেন। সেসব দেশে সবার অংশগ্রহণে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হলে এখানে হতে অসুবিধা কোথায়- যদি নির্বাচন হয় নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য। সরকারি  দলের সঙ্গে বিজয়ী হয়ে বিরোধী দলের আসন গ্রহণ করা সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে কোনো দেশেই কখনো ঘটেনি। বিরল দৃষ্টান্ত এখানে ঘটেছে। তেমনি আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে ভোটদানের অভিযোগ এ দেশে কখনো ওঠেনি। গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতার জন্য এমন অভিযোগও বিরল ও ভয়ঙ্কর। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচন যেখানে সরকারি দলের নিজেদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেখানে তৃতীয় ধাপ পর্যন্ত অনেক জায়গায় বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট বর্জনের ঘটনা কেন ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। বিএনপির অনেকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ইতিমধ্যে ১৭৩ জন বহিষ্কার হয়েছেন। যদিও কয়েকজন বিজয়ী হয়েছেন। সেখানে বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাচনে দলের মন্ত্রী-এমপি এমনকি স্থানীয় নেতৃত্ব নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে বিভক্ত হয়ে কাজ করেছেন। নির্বাচনী আচরণবিধিও লঙ্ঘন করেছেন অনেকেই। নির্বাচন কমিশন অভিযোগ শুনেছে, কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ঠেকাতেও পারেনি। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় ৮৯ কেন্দ্রের সবকটিতেই ভোট স্থগিত করে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার বলেছেন, রাতেই ব্যালট বাক্স ভরার অভিযোগ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখায় ভোট স্থগিত করা হয়। আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার এই সংস্কৃতি গোটা ভোটব্যবস্থাকেই ধ্বংসের খাদে নিয়ে যায়নি, নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস শেষ করে দিচ্ছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় সামরিক শাসকরা ভোট ডাকাতি ও মিডিয়া ক্যুর মাধ্যমে নিজেদের গঠিত দলের পক্ষে গণরায় ছিনতাই করতেন। ক্ষমতার পরিবর্তনের পর সারা জীবন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা হয় কারাগার না হয় মামলা অথবা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আর শাসক দলের হয়ে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের মতো পাপাচারে লিপ্ত প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাগ্যে কখনো বিপর্যয় আসেনি। যখন যারা ক্ষমতায় তখন তারা তাদের আনুগত্য-বিশ্বাস অর্জন করেন। তাদের সুখের কপালে তরতর করে প্রমোশন মেলে, সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপদ জীবন মেলে। রাজনীতিবিদদের মতো জেলের ভাত খেতে হয় না। চাকরি শেষে অবসরে গিয়ে হয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ মেলে না হয় কোনো না কোনো দলের মনোনয়নও জুটে যায়। সারা জীবন খাওয়া-দাওয়ার যে পালা চলে ত কখনো শেষ হয় না। রাজনীতিবিদদের ভাগেরটাও কেড়ে নিয়ে এমপি-মন্ত্রী হয়ে জীবনের পড়ন্ত বেলায় ক্ষমতার ষোল আনা ভোগ করেন। এসব অতি উৎসাহী অতিভক্ত প্রশাসনের কর্মকর্তা সুযোগসন্ধানী উড়ে আসা হাইব্রিড ও দলের উন্নাসিক দাম্ভিক একটি অংশ প্রতিটি সরকারের সাফল্যগুলো ধুলোয় লুটিয়ে দেয়। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা জীবনের কঠিন দুুঃসময়ে বাবা-মা, পরিবার-পরিজনের  রক্তের স্রোত বয়ে যাওয়া সামরিক শাসনকবলিত চরম প্রতিকূল অন্ধকার সময়ে গণতন্ত্রের রাজনীতির বাতিঘর হয়ে এসে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে কর্মীবান্ধব জনপ্রিয় গণমুখী রাজনৈতিক দলে পরিণত করে ক্ষমতায় এনেছিলেন ২১ বছর পর। এই সংগ্রামের পথ তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে উজানে সাঁতার কেটে। তুমুল স্রোতের বিপরীতে। পায়ে পায়ে মৃত্যু হেঁটেছে তার সঙ্গে। আঘাত এসেছে যখন তখন। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের লড়াইয়ে গণতন্ত্রকে সামরিক শাসনের কবল থেকে মুক্ত করেছেন। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের যুদ্ধে জয়ী হয়ে মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে করেছেন যুদ্ধ ঘোষণা। এ লড়াই কঠিন লড়াই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত আধুনিক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আরবীয় কালো ঘোড়ার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। গোটা দেশে উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। কিন্তু এত সফল অর্জনের পরও মানুষের মাঝে প্রাণহীনতা। অসৎ রাজনৈতিক চক্রের সঙ্গে সীমাহীন ঔদ্ধত্য নিয়ে উঠে আসা দৈত্যের মতো প্রশাসন সিন্ডিকেট ও সুবিধাভোগী লুটেরা গোষ্ঠীর কারণে।

একদিকে সুবিধাবাদী সুযোগসন্ধানীরা স্রোতের মতো রাতারাতি নিজেদের ভাগ্য বদলে এতটাই আওয়ামী লীগ হয়েছে যে, নকলের ভিড়ে আজ আসল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তেমনি সমাজের সকল শ্রেণি-পেশায় চারদিকে আজ আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ। প্রশাসনে সবাই এখন পেশাদার সরকারি কর্মকর্তার চেয়ে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর চেয়ে বেশি গরু খাওয়া নওমুসলিমের মতো নব্য আওয়ামী লীগার হয়ে গেছে। যেন তারা শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার। ভাবখানা এমন, জনগণের নেত্রী শেখ হাসিনা লাখো কোটি নেতা-কর্মীর সংগঠিত দলের আস্থা-বিশ্বাস, ভালোবাসা ও ঐক্যের একক প্রতীক হয়ে উঠলেও প্রশাসনের অনেকে মনে করেন, তারাই তার ক্ষমতার উৎস। এই ঔদ্ধত্য এক দিনে হয়নি। টানা ১০ বছরে কালো পাহাড়ের মতো উঠে দাঁড়িয়েছে। এটা গণতন্ত্রই নয়, রাজনীতিই নয়, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক শক্তির জন্য বিপজ্জনক। কারণ ক্ষমতার পরিবর্তন এলে দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী আর জনগণই পাশে থাকে। বাকি সব তাসের ঘরের মতো ভেসে যায়। মুজিবকন্যা শেখ  হাসিনাকেই আজ নির্বাচনী ব্যবস্থা মেরামতের উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ মানুষের আস্থা-ভালবাসা ও বিশ্বাসের জায়গায় তিনিই শক্তি। উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত যেমন জরুরি তেমনি সব রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের দরজা-জানালা অবারিত করে দিয়ে জনজীবনে বুক ভরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত রাখতে হবে। এমনকি যে ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ছাত্রসমাজের গণতান্ত্রিক অধিকারের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে তাকে সব বিশ্ববিদ্যায় ও কলেজে ছড়িয়ে দিতে হবে। গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের মোহনায় দাঁড়ানো স্বাধীনতার অর্ধশত বছরের দোরগোড়ায় এসে জনগণ শেখ হাসিনাকেই শেখ হাসিনার বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে। জনগণের হৃদয় জয় করেই জনগণের নেত্রী মুজিবকন্যা শেখ হাসিনাকে তার লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়তার সঙ্গে পথ হাঁটতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ও সাহসী নেতৃত্বের ওপর ঢেলে সাজাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর বাকশাল ব্যবস্থা থাকলে নির্বাচন নিয়ে এত কথা উঠত না। এটা সত্য। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে মুক্তবাজার অর্থনীতির খোলা হওয়ায় সেই সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার জাতীয়করণের পথ নিতে পারবে না। এ দেশের মানুষ আমাদের মহত্তম নেতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গণতন্ত্রের সংগ্রামে সমাজকে বিকশিত করেছে। তিনি গণতন্ত্রের সফল শিক্ষক ও মহানায়ক। গণতন্ত্রের সংগ্রামেই আজকের পৃথিবীতে বিশ্ববরেণ্য নেতাদের পাশে ঠাঁই পাওয়া দেশের রেকর্ড গড়া চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব শোভা পাচ্ছে। এই নেতৃত্ব সমাজতন্ত্রের নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের। গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে সব বিতর্ক থেকে মুক্ত করে আনার চ্যালেঞ্জটিকেও তাকেই নিতে হবে। আর একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন ও চলমান উপজেলা নির্বাচনের পর সারা দেশের জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের রদবদল অনিবার্য হয়ে উঠেছে। সারা দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর সময় এখন দরজায় কড়া নাড়ছে।

 

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

 

সর্বশেষ খবর