বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

নারী ও শিশুদের বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম

মুহম্মদ ওমর ফারুক

নারী ও শিশুদের বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম

ইসলাম নারীকে মানবসভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কল্পনা করে। যে কারণে নারীকে মানুষ হিসেবে সব অধিকার ও মর্যাদাপ্রাপ্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু অধিকার দিয়েছে। কারণ নারী দৈহিক গঠনের দিক থেকে পুরুষের চেয়ে কিছুটা নমনীয়। ইসলাম এ কারণে নারীদের ঝুঁকিপূর্ণ বা কঠোর পরিশ্রমের কাজ দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। কারণ এসব কাজ তাদের জীবনকে নিরাপত্তাহীন ও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। নারী মানব-সমাজের একটি অঙ্গ। মানুষের একটি অঙ্গ ঝুঁকির মধ্যে বা অসুস্থ হলে অন্য অঙ্গটি সুস্থ হলেও অসুস্থ অঙ্গের প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

তেমনিভাবে নারী মানবসমাজের একটি অঙ্গ হিসেবে সমাজে নারী নামের অঙ্গটি ঝুঁকির মধ্যে বা অবহেলিত হলে সমাজের পুরুষ নামের অঙ্গটিও এর প্রভাবে প্রভাবিত হতে বাধ্য। এ অনুভূতি গঠনের লক্ষ্যেই আল্লাহতায়ালা আদি মাতা হজরত হাওয়া (আ.)-কে আদি পিতা আদম (আ.)-এর মতো সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি না করে আদম (আ.)-এর বাঁ পাঁজর থেকে সৃষ্টি করেছেন। ডান হাত ডান পাশের চেয়ে বাঁ হাত বাঁ পাশ একটু দুর্বল হলেও দুটি মিলেই একটি মানুষ। তদ্রুপ হাওয়া (আ.) বাঁ পাশ থেকে সৃষ্টি হওয়ায় একটু দুর্বল হলেও এটি আদম (আ.) নামের পুরুষের অংশ; আদম (আ.)-এর পরিপূর্ণতা তাঁকে নিয়েই। কন্যাসন্তানের প্রতি অনীহার কারণে পুত্রসন্তান কামনার মানসিকতা বর্জনের লক্ষ্যে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুটি কন্যাসন্তান লালন-পালন করে আমি এবং সে এভাবে পাশাপাশি জান্নাতে প্রবেশ করব।’ আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি।’

কোনো মানুষের একটি অঙ্গ কম থাকলে তাকে যেমন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ বলে ধরে নেওয়া যায় না, তেমনি কোনো ব্যক্তি নারীর প্রতি বৈষম্যপূর্ণ আচরণ করে বা নির্যাতন করে নারীকে নিজের জীবন থেকে, মানবসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করলে সে ব্যক্তি বা সমাজকেও সুস্থ বা স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া যায় না।

মনে রাখতে হবে মানবসমাজের বর্তমান নিরাপত্তা নারীর নিরাপত্তা-বিধানের ওপর নির্ভরশীল। অনেক এলাকার মানুষ মনে করে, মেয়েরা যদি বাবার বাড়ির সম্পদ আনে তাহলে তাদের জীবনে অশান্তি নেমে আসবে। এসব ধারণা ভুল। ইসলাম নারীদের সবচেয়ে বেশি সম্মান দিয়েছে। ঘরে, সংসারে, সমাজে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করছে। বাবার সম্পত্তিতেও অধিকার দিয়েছে। আমরা যেন নারীদের সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সবাই চেষ্টা করি।  আর মানবসমাজের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নির্ভর করে শিশুর জীবনের নিরাপত্তাবিধানের ওপর। আমাদের শিশু যদি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, শিক্ষা-সভ্যতা থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে মনে রাখতে হবে আমাদের শিশুই শুধু নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে না বা শিক্ষা-সভ্যতা থেকে বঞ্চিত হলো না বরং ভবিষ্যৎ মানবসমাজ নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে এবং ভবিষ্যৎ মানবসমাজ শিক্ষা-সভ্যতা থেকে বঞ্চিত হয়। অতএব নারী ও শিশুর জীবনের নিরাপত্তা-বিধানে মাতা-পিতা ও সমাজকে পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর