বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

ট্রাম্পের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত

ইসরায়েল-প্রেমের খেসারত দিতে হবে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলা হয় সে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বিবেকহীন প্রেসিডেন্ট। দুনিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার ওপর বিশ্বশান্তি অনেকাংশে নির্ভরশীল। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক অসহিষ্ণু ও ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্বকে বিপদাপন্ন অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছেন। প্রতিবেশী মেক্সিকোর সীমান্তে দেয়াল গাঁথার অভিলাষ, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতিদান ইত্যাদি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি বিশ্ব পরিস্থিতিকে সংঘর্ষমুখী করে তুলেছেন। তার সর্বশেষ হঠকারী সিদ্ধান্ত হলো সিরিয়ার ইসরায়েল দখলকৃত গোলান মালভূমিতে দখলদারদের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতিদান। আরব অঞ্চলে প্রাকৃতিক পানির অন্যতম উৎস গোলান মালভূমি। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় সিরিয়ার এ মালভূমিটি দখল করে নেয় ইসরায়েল। ’৭১ সালে সিরিয়া সেটি পুনর্দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সেই গোলান মালভূমিটি গত সোমবার এক স্বাক্ষরেই ইসরায়েলের সার্বভৌম বলে সায় দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সামরিক কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ মালভূমিটিকে ইসরায়েল ’৮১ সালে নিজেদের ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেও বিশ্ব সম্প্রদায় তা মেনে নেয়নি। ট্রাম্পের এ স্বাক্ষরের সময় পাশে ছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের আসন্ন নির্বাচনে নেতানিয়াহুকে জয়ী হওয়ার মদদ জোগাতে তিনি এ স্বীকৃতি দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক এ স্বীকৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গোলান মালভূমির বিষয়ে তাদের কয়েক দশকের অনুসৃত নীতি থেকে যেভাবে সরে গেল তা দায়িত্বহীনতার নামান্তর। নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেছেন, তার চেয়ে ভালো বন্ধু ইসরায়েল আর পায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপে সিরিয়া দ্রুত তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপকে তাদের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডে ‘স্পষ্ট আক্রমণ’ বলে বর্ণনা করে সিরিয়া গোলান পুনরুদ্ধারের অধিকার তাদের আছে বলে ঘোষণা করেছে।  জাতিসংঘ মহাসচিব মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতিতে আপত্তি জানিয়েছেন। রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানিও মার্কিন স্বীকৃতির বিরোধিতা করেছে। নেতানিয়াহুর মতো একজন চরমপন্থি ইহুদিবাদী নেতাকে জেতাতে ট্রাম্প যেভাবে গোলানের ওপর ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছেন তা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তিকে অনিশ্চিত করে তুলবে। যুক্তরাষ্ট্রকেও এজন্য খেসারত দিতে হবে। বিশ্বশান্তির জন্যও তা বিসংবাদ হয়ে দেখা দিতে পারে, যা কাম্য হওয়া উচিত কিনা ট্রাম্প ও তার সহযোগীদের ভেবে দেখা উচিত।

সর্বশেষ খবর