শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

শবেমেরাজের শিক্ষা ও করণীয়

মুফতি মিজানুর রহমান, সিনিয়র পেশ ইমাম

সমস্ত প্রশংসা মহান রব্বুল আলামিনের জন্য যিনি জগৎসমূহের সৃষ্টিকর্তা, সালাত ও সালাম বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারি মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহর প্রতি, যিনি উম্মাহর প্রতি ছিলেন চিরদয়ার্দ্র, শান্তি বর্ষিত  হোক আসহাবে রসুলের প্রতি যাঁরা তাঁর প্রতিটি কথাকে বিশ্বাস করেছেন বিন্দুমাত্র সন্দেহ-সংশয় ছাড়া। মেরাজ আরবি উরুজ শব্দ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ ঊর্ধ্বারোহণের মাধ্যম বা সোপান বা সিঁড়ি। ইসলামী পরিভাষায় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কা শরিফের হাতিমে কাবা থেকে মাসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস উপস্থিতি এবং সেখান থেকে সপ্তাকাশে ভ্রমণ করে আল্লাহর সান্নিধ্যে হাজির হওয়ার ঘটনাকে মেরাজ বলে। ওই ঘটনাটি দুটি অংশে বিভক্ত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতিমে কাবা থেকে রাতে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত পৌঁছাকে ইসরা বলে। আর মাসজিদু আকসা থেকে সপ্তাকাশসহ সৃষ্টিজগতের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ভ্রমণকে মেরাজ বলে। তবে সাধারণত ইসরা ও মেরাজ উভয় ঘটনাকেই মেরাজ বলে উল্লেখ করা হয়। এ সম্পর্কে আল কোরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা ভ্রমণ করিয়েছিলেন; যার পরিবেশ আমি বরকতময় করেছিলাম তাঁকে আমার নিদর্শনগুলো দেখানোর জন্য। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-১। উল্লিখিত আয়াত দ্বারা ইসরা (রাত্রিভ্রমণ) প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণিত। আর মেরাজ আল কোরআনের সূরা আন-নাজমের ১৩-১৮ নম্বর আয়াত দ্বারা পরোক্ষভাবে প্রমাণিত। ‘তিনি (মুহাম্মদ) তাকে (জিবরাইলকে) আরেকবার (মেরাজে পূর্ণাবয়বে) সিদরাতুল মুনতাহার কাছে দেখেছিলেন; যার কাছে জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত। যখন বৃক্ষটি যদ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ার তদ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। তাঁর দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি এবং লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। তিনি তো তাঁর প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছিলেন।’ সূরা নাজম, আয়াত- ১৩-১৮। মেরাজের বিষয়ে এক দীর্ঘ হাদিস রয়েছে, যেখানে জিবরাইল (আ.) কর্তৃক রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জান্নাত ও জাহান্নামবাসীর কিছু অবস্থা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখানোর বিবরণ রয়েছে।

যেখানে গিবত করা, সুদ খাওয়া, ফরজ নামাজে গড়িমসি করা, জাকাত আদায় না করা, ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া, দস্যুবৃত্তি করা, আমানতের খেয়ানত করা, নিজে আমল না করে অন্যকে বড় বড় কথা বলা প্রভৃতি গুনাহর শাস্তির বর্ণনা রয়েছে। উল্লিখিত গুনাহগুলো থেকে বিরত থাকতে মেরাজ আমাদের শিক্ষা দেয়। আমাদের করণীয় হলো ‘ইমান বিল গায়িব’ তথা আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর মতো মেরাজের প্রতিটি বিষয়ের প্রতি ইমান আন। এ ছাড়া সালাত তথা নামাজের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করা। কেননা নামাজ আল্লাহতায়ালা কর্তৃক তাঁর রসুলকে নিজের কাছে ডেকে প্রদান করা হয়েছে, দুনিয়ার কোনো মাধ্যমে প্রদান করা হয়নি। এ ছাড়া সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত এ রাতে প্রদান করা হয়েছে এ দুটি আয়াতের তিলাওয়াত ও বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ করা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের আমলের তাওফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর