রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

ইমান, আমল ও দোয়ার সংমিশ্রণই হচ্ছে সালাত

সৈয়দ নজরুল ইসলাম

ইমান, আমল ও দোয়ার সংমিশ্রণই হচ্ছে সালাত

সালাত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত পরিত্যাগকারীর ইমান থাকে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালার বাণী হচ্ছে, ‘তবে এখন যদি তারা (সালাত পরিত্যাগকারী) তওবা করে ও জাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দীনি ভাই।’ সূরা তওবা, আয়াত ১১। ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত পরিত্যাগ করে সে কুফরি করে।’ মুসলিম। কুফরি করার অর্থ কী দাঁড়ায় আমরা নিজেরাই তা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি। সালাত কেন সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত তার কারণ সালাতের মধ্যেই নিহিত রয়েছেÑ ইমানের দৃঢ়তা, স্বীকারোক্তি, আল্লাহকে সবকিছুর দাতা মেনে তাঁরই কাছে বান্দার চাওয়া-পাওয়ার সব ধরনের উপকরণ, যা আমলে রূপান্তরিত হয়ে যায়। এজন্যই আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা সালাতের মাধ্যমে প্রার্থনা কর।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৩।

এখন দেখা যাক সালাতের মধ্যে কীভাবে ইমান, আকিদা, দোয়া ও আমল রয়েছে। ইমানের রুকন (স্তম্ভ) ৭টি, যা সবারই জানা। ১. আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করা যাবে না। অন্তরে বিশ্বাস, মুখে উচ্চারণ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ২. ফেরেশতাদের ওপর বিশ্বাস। ৩. আসমানি কিতাব-সমূহের ওপর বিশ্বাস। ৪. রসুলগণের ওপর বিশ্বাস (এই জমানার উম্মত হিসেবে মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য ও অনুসরণ করা)। ৫. আখেরাত ও শেষ বিচার দিনের ওপর বিশ্বাস, ৬. তাকদিরের ভালোমন্দের ওপর বিশ্বাস এবং ৭. মৃত্যুপরবর্তী জীবনের ওপর বিশ্বাস।

সমগ্র সালাতের মধ্যে এসব উপকরণ বিদ্যমান রয়েছে এবং এর অতিরিক্ত আল্লাহর কাছে বান্দার চাওয়া-পাওয়া ও বান্দার জীবনে ঘটে যাওয়া গুনাহগুলো মার্জনার আরজি আছে।

আমরা যখন সালাতে দণ্ডায়মান হই তখন আল্লাহর উদ্দেশ্যেই দাঁড়াই এবং প্রতি ফরজ সালাতে ইকামত দিই। প্রথম বাক্যেই আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) বলি। এরপর ধারাবাহিকভাবে স্বীকার করি তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোনো সত্য মাবুদ নেই, মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর (তোমার) রসুল, সৎকর্ম করতে এবং অসৎকর্ম থেকে বেঁচে থাকার জন্য তোমারই সাহায্য চাই। পুনরায় আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ স্বীকারোক্তি দিয়ে সালাত শুরু করি। তাকবিরে তাহরিমায় দোয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রশংসামূলক বাক্যাদি বলে ইবাদতের জন্য একমাত্র তাঁকেই সাব্যস্ত করি। প্রথমেই ইমানের দুটি রুকন বলি। সূরা ফাতিহাসহ কোরআনের যে কয়েকটি বাক্য পাঠ করি এর দ্বারা আল্লাহর কিতাবকে মানা হলো। সূরা ফাতিহা পাঠের সময় মালিকিইয়াও মিদ্দিন বলে শেষ বিচার দিবসের ওপর এবং শেষের দুই বাক্য দ্বারা তাকদিরে যেন তাঁর নেককার বান্দাদের দলভুক্ত করা হয় এবং বিপথগামীদের থেকে দূরে রাখার আবেদন জানিয়ে তাকদিরের রুকন পূর্ণ করি। রুকুতে অবনত হয়ে এবং সিজদায় সম্পূর্ণ অঙ্গ তাঁকে সমর্পণ করে তাঁর প্রশংসা করি। সিজদায় সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা বলার অতিরিক্ত সুববুহুন কুদদুসুন রব্বানা রব্বিল মা’লয়ইকাতু ওয়াররুহু বলি তাহলে ইমানের আরেকটা রুকন ফেরেশতাদের ওপর ইমান আনা হলো। তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পাঠের সময় আবারও স্বীকারোক্তি দিচ্ছি, আমাদের দৈহিক, বাচনিক, আর্থিকসহ যাবতীয় ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষণের আবেদনসহ সব মুমিন মুসলমানের জন্যও অনুরূপ আরজি পেশ করা হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর দরুদ ও সালাম পেশের পর দোয়া মাসুরায় নিজের জীবনে সৃষ্ট পাপরাশির মার্জনা ভিক্ষা, কবরের আজাব ও দোজখের আগুন থেকে রেহাই, অধিকন্তু দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ চেয়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে সালাত শেষ করি। সালাতের বিষয়বস্তুগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, সালাত সম্পূর্ণ ইমান, আকিদা ও দোয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত। অন্তর দিয়ে বাচনিক শব্দচয়ন ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমর্পণ করে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ তাঁর কাছে চাওয়াই হচ্ছে সালাত। এভাবে সালাতের মাধ্যমে প্রার্থনা করতেই সূরা বাকারার ১৫৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন। এজন্যই কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে সালাত পরিত্যাগকারীর ইমান থাকে না। তাই সালাতই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। দীনের পথে থাকার জন্য আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিয়মিত সালাত আদায় করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : পরিচালক (অব.) রাজউক।

সর্বশেষ খবর