সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে সম্মান জানায় বিজিবি

মু. আবদুল আউয়াল মুছুল্লী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে একাত্তরে দেশের আপামর জনতা মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজিবি (তৎকালীন ইপিআর) সক্রিয় ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে। এ বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা অসীম মনোবল আর সামান্যসংখ্যক সাধারণ মানের অস্ত্র সম্বল করে যে অগাধ দেশপ্রেম, বীরত্ব ও আত্মত্যাগের ইতিহাস রচনা করেছে তা বাঙালি জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে ঢাকার পিলখানাস্থ ইপিআর সদর দফতর। ইপিআর বাহিনী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়ারলেসযোগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়। নিজস্ব ওয়ারলেসযোগে প্রচারের এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করেন শহীদ সুবেদার মেজর (সিগন্যাল) শওকত আলী।

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে ইপিআরের বাঙালি সদস্যরা রণকৌশলগত কারণে বুড়িগঙ্গা নদীর অন্য তীরে জিঞ্জিরায় প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তৎকালীন ইপিআরের বাঙালি সৈনিকরা ১১টি সেক্টরে নয় মাস যুদ্ধে নিয়োজিত থাকেন। ইপিআরের প্রায় আট হাজার বাঙালি সদস্য সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোর, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও সিলেটে ইপিআরের বাঙালি সদস্য ও পাক বাহিনীর মধ্যে প্রচ  যুদ্ধ হয়। ইপিআরের বাঙালি সৈনিকদের এ বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা বাংলাদেশের জনগণকে সংগঠিত হয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস জুগিয়েছে। দেশের প্রতিটি সেক্টর ও উইং হেডকোয়ার্টারের বাঙালি অফিসার, জেসিও এবং বিভিন্ন পদবির সৈনিকরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ, গেরিলা যুদ্ধ, আত্মঘাতী আক্রমণ ও শত্রুঘাঁটি নিশ্চিহ্ন করতে অসংখ্য দুর্ধর্ষ অপারেশন পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধে অপরিসীম বীরত্বের জন্য এ বাহিনীর দুজন সৈনিক সর্বোচ্চ বীরত্বসূচক ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত হন। তারা হলেন শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ও শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ। তাদের বীরত্বগাথা এ বাহিনী তথা বাঙালি জাতিকে করেছে গৌরবান্বিত।

এ বাহিনীর অহংকার বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের সম্মানে পিলখানার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ। এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের জন্ম ও শাহাদাতবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে স্বজনদের বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়া এ বাহিনীর আরও আটজন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম, ৭৭ জন বীরপ্রতীক খেতাব অর্জন করেন। মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর মোট ৮১৭ জন বীর সৈনিক শাহাদাতবরণ করেন। এ বাহিনীর অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকার এ বাহিনীকে ‘স্বাধীনতা পদক-২০০৮’ প্রদান করে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজিবি (তৎকালীন ইপিআর) সৈনিকদের হিমালয়সদৃশ মনোবল, অতুলনীয় দেশপ্রেম ও চরম আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত বিজিবির সৈনিকরা তাদের পূর্বসূরি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের মহিমায় গর্বিত ও অনুপ্রাণিত। তাই এ বাহিনী দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকে তার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সর্বদা আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানিয়ে থাকে।

প্রতি বছর বিশেষ করে বিজিবি দিবস উপলক্ষে এ বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। বাহিনীর সদর দফতরসহ রিজিয়ন, সেক্টর ও ব্যাটালিয়ন পর্যায়ের আওতাধীন অঞ্চলে বসবাসকারী এ বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিশেষ করে বিজিবি সদর দফতরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ বাহিনীর দুজন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ও শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফের পরিবারের সদস্যদের বিশেষভাবে সম্মান জানানো হয়। ঢাকা অঞ্চলে বসবাসকারী এ বাহিনীর অন্য খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরও একইভাবে সংবর্ধিত করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের এ উপলক্ষ এ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে একটি উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বাহিনীপ্রধান নিজে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যসহ অন্য জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সরাসরি শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তাদের কুশলাদি অবহিত হয়ে তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বিজিবি সদর দফতরের পাশাপাশি ঢাকার বাইরেও বিজিবির রিজিয়ন, সেক্টর ও ব্যাটালিয়ন পর্যায়েও অনুরূপ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে সংশ্লিষ্ট রিজিয়ন কমান্ডার, সেক্টর কমান্ডার ও ব্যাটালিয়ন কমান্ডাররা সরাসরি বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও কুশলাদি অবহিত হন।

প্রতি বছর বিজিবির বিভিন্ন ইউনিট

লেখক : সহকারী অধ্যাপক; বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ, পিলখানা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর