সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

হাওরের ফসল রক্ষা

বাঁধ নির্মাণ ও সুরক্ষায় কৃষকদের সঙ্গে নিন

দেশের হাওর এলাকার উৎপাদিত ফসল শুধু সংশ্লিষ্ট জনপদের মানুষের পেটের ভাত জোগায় না দেশের প্রয়োজনীয় খাদ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের জোগান দেয়। হাওরে ফসল ভালো হলে এলাকার কৃষকের মুখে যেমন হাসি ফুটে ওঠে, তেমন দেশবাসীর পক্ষেও স্বস্তিদায়ক দামে খাদ্য কেনার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর কোনো কারণে হাওরের ফসল নষ্ট হলে তা সংশ্লিষ্ট এলাকার হাজার হাজার কৃষকের জীবনে যেমন দুঃসংবাদ হয়ে দেখা দেয় তেমন জাতীয় জীবনেও সৃষ্টি করে ভোগান্তি। ২০১৭ সালে অকাল বন্যায় হাওরের ফসলহানিতে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে যায়। দেশের চাহিদা মেটাতে সরকার কয়েক কোটি মণ চাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে বাধ্য হয়। বিশ্ব বাজারে বেড়ে যায় চালের দাম। হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে ২০১৭ সালে হাওরের ধানের সিংহভাগ নষ্ট হয়। অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. আবুল বারকাতের মতে ২০১৭ সালে ঠিকাদার ও পাউবো কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। তাদের অর্থ আত্মসাৎ ও অবহেলার কারণেই হাওর অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় কৃষক ও জনসাধারণের মারাত্মক আর্থিক ক্ষতি হয়। ২০০৯ সালের জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতির অপব্যবহার ও ইজারা ব্যবস্থায় সরাসরি প্রকৃত জেলেদের বঞ্চিত করা হয়। হাওরের দখল পাইয়ে দেওয়া হয় ইজারাদারদের, যাদের সঙ্গে যোগাসাজশ থাকে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের। এভাবেই দরিদ্র ও প্রান্তিক মৎস্যজীবীরা হাওরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। হাওরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ তুলে ধরে এক সেমিনারে তিনি বলেছেন, বছরের বিশেষ বিশেষ সময় যখন হাওরের দরিদ্র কৃষক ও জেলেরা বেকার থাকে তখন ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করতে হবে। তাদের সহজ শর্তে ঋণ এবং গরিব কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আমরা বারবার বলেছি হাওরের ফসল রক্ষার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের নামে প্রতি বছর যে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয় তার বড় অংশই চলে যায় লুটেরাদের পকেটে। তা বন্ধ করতে হলে হাওরের বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজে সরাসরি কৃষকের সম্পৃক্ততা গড়ে তুলতে হবে। তাতে অতি অল্প খরচেই হাওরের ফসল রক্ষা পাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর