সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাগজ শিল্পের দুরবস্থা

সব মহলের দায়িত্বশীল ভূমিকা কাম্য

স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশে কাগজ কলের সংখ্যা ছিল সর্বসাকুল্যে দুটি। এর একটি কর্ণফুলী কাগজ কল আরেকটি খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। দুটিই ছিল সরকার পরিচালিত। দুনিয়াজুড়ে সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে যেমনটি হয় তেমন এ দুটি প্রতিষ্ঠানেও ছিল ব্যবস্থাপনাগত অদক্ষতা এবং আমলাতান্ত্রিকতার অপছায়া। যার পরিণতিতে দুটি কাগজ কলের ভাগ্যে লোকসান নিয়তির লিখনে পরিণত হয়। কর্ণফুলী কাগজ কলের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঁশ। আর খুলনা নিউজপ্রিন্টের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো সুন্দরবনের কাঠ। কাগজ উৎপাদনের জন্য বন থেকে আহরিত বাঁশ ও কাঠের এক বড় অংশ বাইরে পাচার হয়ে যেত এটি একটি ওপেন সিক্রেট। বলা যায়, দেশের বনজ সম্পদ আর সরকারি কোষাগারের অর্থ অপচয় ছাড়া এ দুটি কাগজ কল জাতির কতটা কল্যাণে লেগেছে তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। স্বাধীনতার পর সরকারি আরও একটি কাগজ কল প্রতিষ্ঠিত হয় পাবনার পাকশীতে। পরবর্তীতে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত কাগজ কলই বন্ধ হয়ে যায় অব্যাহত লোকসানের পরিণতিতে। দেশে বেসরকারি খাতে কাগজ কল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে গত তিন যুগে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শতাধিক কাগজ কল। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণ কাগজ কল স্থাপিত হওয়ায় কাগজ কলগুলো তাদের উৎপাদন ক্ষমতার বড় অংশই ব্যবহার করতে পারছে না। দেশে মানসম্মত কাগজ উৎপাদন এমনকি বিশ্বের উন্নত বিভিন্ন দেশে তা রপ্তানি হলেও নানা অজুহাতে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি বন্ধ নেই। রপ্তানিমুখী শিল্পে ব্যবহারের নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাগজ কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়ে দেশীয় কাগজ কলগুলোকে অসম প্রতিযোগিতার মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেশের ১২৯টি কাগজ শিল্পে ৩১টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৬ হাজার ১১২ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে। চালু কাগজ কলগুলোর দেশের চাহিদার কয়েকগুণ কাগজ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নতুন নতুন কাগজ কল স্থাপন এ শিল্পের অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। ৯ মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কাগজ শিল্পকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় এ খাতে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আবেদন পাওয়ার পর ব্যাংকগুলো প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে অর্থায়ন করবে। পাশাপাশি কাগজ কল মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের প্রেরিত তথ্যাদি পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করবে। কিন্তু ব্যাংকগুলো এ ব্যাপরে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করায় ব্যাঙের ছাতার মতো কাগজ কল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কাগজ শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব মহল সুমতির পরিচয় দেবে এমনটিই প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর