মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

মহান সাধক হজরত গাউছুল আজম

মুহাম্মদ রাশেদ হায়দার মহিউদ্দিন

সৃষ্টির শুরু থেকে এ অবধি, ভবিষ্যতের পথে নিরবধি যে প্রেমের মূর্ছনায় স্রষ্টা-সৃষ্টি সবাই মুগ্ধ, যে প্রেমের ছোঁয়ায় সৃষ্টি হয় চির পরিশুদ্ধ, খোদাপ্রেমের মায়াজালে আবদ্ধ, নফসানিয়াতকে করে খুলুছিয়তের কারাগারে আবদ্ধ, যে প্রেম ছাড়া বিরহী হৃদয় সদা সংক্ষুব্ধ, সে প্রেম ‘হুব্বে মোস্তফা’ নামে স্বীকৃত। এ প্রেমের মায়ায় আঁধার হৃদয় হয় নূরে নূরান্বিত, এ প্রেম ধারণকারী ব্যক্তিত্ব সর্বাবস্থায় হয় মহিমান্বিত।

আল কোরআনের সূরা আহজাবের ৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নবী মুমিনদের নিকট নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর।’ কাগতিয়া আলিয়া গাউছুল আজম দরবারের প্রতিষ্ঠাতা হযরত গাউছুল আজম ছিলেন এমন একজন নবীপ্রেমিক, যাঁর চলায়-বলায় ও চিন্তাধারায় ফুটে উঠত নবীজির রুশনিভরা জলওয়া, প্রিয় নবীই ছিলেন যাঁর হৃদয়ের চাওয়া, নবীজির প্রেমে কোনো কিছুকেই করতেন না পরওয়া, হাজারও ঝড়-ঝাপটা ও প্রতিকূলতার মহাসমুদ্র ডিঙিয়েছেন নবীপ্রেমের সীমাহীন আবেগে-অনুরাগে, জায়গা করে নিয়েছেন নবীজির হৃদয়ে সোনালি সোহাগে। প্রিয় রসুলের প্রেমে পড়ে জীবনজুড়ে কেঁদেছেন সৃষ্টির কল্যাণে। তাঁর ক্রন্দনধ্বনির সুরেলা বীণায় পাথর কঠিন হৃদয় গলে যেত মোমের মতো, পাষাণের আত্মা কোমলতায় রাঙা হতো। লাখো যুবকের পাপের পাহাড় টেনেছেন বেদনাময় কষ্টের আলিঙ্গনে, শুধু আল্লাহ ও নবীজিকে খুশি করার মানসে। প্রিয় নবীর দীনের এশায়াতের জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে। দরুদের শিক্ষা দিয়েছেন খোদার পথ থেকে বিচ্যুত মানবজাতিকে। হেদায়েতের রুশনি ছড়াতে থেকেছেন অনাহারে-অর্ধাহারে। তবু এতটুকু নড়েননি নবীপ্রেমের পথ থেকে। তাঁর তরিকতের অনুসারীরা দৈনিক ১১১১ বার মহব্বতের নিয়তে দরুদ পাঠ করেন, কখনো কাজা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা আদায় করে দেন। নবীজির কত প্রিয় হলে তাঁর সান্নিধ্যে এসে এ রকম একটি মকবুল আমল আদায় করা সম্ভব! নবীজিকে কতই না ভালোবাসতেন তা আল্লাহ ও রসুল (সা.)-ই জানেন। যেদিন থেকে জেনেছেন নবীজি মাটির থালায় আহার করেছেন, সেদিন থেকে মাটির থালা ব্যতীত অন্য কিছুতে করে খাননি। হাদিসে রয়েছে, ‘কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রিয় রসুলকে নিজের স্ত্রী-পুত্র, ধন-সম্পদ এমনকি জানের চেয়ে বেশি ভালোবাসতে না পারবে।’ হজরত গাউছুল আজম যেন এ হাদিসেরই বাস্তব উদাহরণ। নবীজিকে এত বেশি ভালোবাসতেন যে, প্রিয় নবীর ঘর কাগতিয়া কামিল মাদ্রাসার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি কাগতিয়া কামিল মাদ্রাসাকে নিজের সন্তানের চেয়ে বেশি ভালোবাসি।’ প্রিয় নবীর ঘরের জন্য তিনি তাঁর একমাত্র খলিফা মোরশেদে আজমকে উৎসর্গ করেছেন। শুধু তাই নয়, নিজের সঞ্চিত সবকিছু তার বেছাল শরিফের পর কাগতিয়া মাদ্রাসায় দিয়ে দেওয়ার ঐতিহাসিক অসিয়ত করে গেছেন; যা এ মহামনীষীর বেছাল শরিফের পর অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়েছে। নবীগণ কোনো দিনার-দিরহাম রেখে যান না, রেখে যান ইলম। নবীজির এ মহান সুন্নত অনুসরণে হজরত গাউছুল আজম এ ইলম নিজে অর্জন করেছেন এবং পৃথিবীর বুকে সবাই যাতে অর্জন করতে পারে সে ব্যবস্থা করে যান। শরিয়ত-তরিকতের ইলমের পরিপূর্ণ সম্ভার হজরত গাউছুল আজম। তার স্পর্শে একজন তালেবে ইলম মুহাক্কিকে পরিণত হয়। এ মহামনীষীর যুুগান্তকারী একটি অসিয়ত হলো- ‘আমি আমার সমস্ত আহালকে এ নির্দেশ দিচ্ছি যে, তারা যেন আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টিজনক চরিত্র দ্বারা চরিত্রবান হয়। এতে তাদের উন্নতি হবে, অন্যথায় তাদের অবনতি হবে।’ ইনশা আল্লাহ, আগামীকাল ৩ এপ্রিল, বুধবার দিন-রাতব্যাপী এই মনীষীর তৃতীয় সালানা উরস চট্টগ্রাম রাউজানস্থ কাগতিয়া আলিয়া গাউছুল আজম দরবারে অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর