মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঋণের সুদহার

এক অঙ্কে আনার প্রতিশ্রুতি পূরণ হোক

দেশের ব্যাংকিং খাতে চলছে চরম নৈরাজ্য। সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা থাকলেও সে ক্ষেত্রেও ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে গোয়ালে নেই’ অবস্থা। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছিলেন। ব্যাংকগুলোর সুমতি ফেরাতে নানা দিক থেকে তাদের সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কথা দিয়েও কথা রাখেনি ব্যাংকারদের সমিতি। বলা হচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ঋণ খেলাপের জন্য দায়ী কারা? ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হয় উপযুক্ত জামানতের বিনিময়ে। সে ক্ষেত্রে ফাঁকফোকর থাকলে ঋণের অর্থ ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ঋণদানের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও ব্যাংক পরিচালকদের অসততার কারণেই ঋণখেলাপির সংখ্যা যে বাড়ছে, তা ওপেন সিক্রেট। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো নথির তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত একটি ব্যাংকও সিঙ্গেল ডিজিট সুদে শিল্পঋণ দেয়নি। যদিও দাবি করা হচ্ছে, নয়টি ব্যাংক সিঙ্গেল ডিজিটে শিল্পঋণ বিতরণ করছে। বাস্তবে এসব ব্যাংকও সুদ আদায় করছে ১১ থেকে ১২ শতাংশ। এ ছাড়া নিজেদের ডিপোজিট বাড়াতে ও রিপোর্ট ভালো দেখাতে আমানতের সুদহারের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া রেট ৬ শতাংশ মানছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৮ বা ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে কয়েকটি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতিবেদন পাঠানোর সময় প্রকৃত তথ্য গোপন করা হচ্ছে- এমন অভিযোগও করা হচ্ছে দায়িত্বশীল বিভিন্ন মহল থেকে। এ নিয়ে সংসদেও তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে মাত্র কদিন আগে। দেশের অর্থনীতির সুষ্ঠু বিকাশে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে উঠেছে। এ উদ্দেশ্যে খেলাপি ঋণের অপসংস্কৃতি রোধে সরকার তথা বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে যে কোনো মূল্যে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়ার বিষয়টিও জরুরি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর