বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

একটি প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত

বিদেশি টিভি সম্প্রচারে বিজ্ঞাপন আর নয়

জাতীয় ও জনস্বার্থে দেশে একের পর এক আইন প্রণয়ন করা হলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন ও অনুসরণের অভাবে আইন থাকা না থাকা সমান হয়ে দাঁড়ায়। আইন প্রয়োগের অবহেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাতীয় স্বার্থ। ১৩ বছর আগে পাস হয়েছিল ‘কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬’। এ আইনের উপধারা-১৯(১৩)-এর বিধানমতে বাংলাদেশে বিদেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যায় না। দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। তথ্যমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, এ ধরনের আইন ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অন্যান্য দেশেও বলবৎ রয়েছে। ভারত ও অন্যান্য দেশে বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেল যখন প্রদর্শিত হয় তখন তাতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয় না। অথচ এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে এ আইন মানা হচ্ছিল না। এত দিন আইনটি প্রয়োগ করার কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। এ অবহেলার পরিণতিতে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যে বিজ্ঞাপন পেত তাতে ভাগ বসানোর সুযোগ পায় ভারতীয় চ্যানেলগুলো। ফলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল। ভারতীয় টিভি চ্যানেলে সস্তা আবেগের চটকদার অনুষ্ঠানই প্রচার হয় বেশি। ফলে বাংলাদেশের একশ্রেণির টিভি দর্শকের কাছে ভারতীয় চ্যানেলগুলো ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা পায়। ভারতীয় টিভি চ্যানেলের প্রচারিত বিভিন্ন ধারাবাহিক নাটকের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। পারিবারিক সম্পর্কে চির ধরাতেও ইন্ধন জুগিয়েছে ভারতীয় চ্যানেলের কুরুচিসম্পন্ন টিভি সিরিজগুলো। দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল মালিকদের সংগঠন দীর্ঘদিন যাবৎ ভারতীয় টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন প্রচারে আপত্তি জানাচ্ছিল। তাদের অভিযোগ, বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো নিয়ে যাওয়ায় দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো রুগ্নদশার শিকার হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে তথ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে তথ্য মন্ত্রণালয় দেরিতে হলেও কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬-এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সম্প্রচারিত বিদেশি টিভি চ্যানেলে যাতে বিজ্ঞাপন প্রচার না হয় তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। যেসব বিদেশি টিভি চ্যানেল আইন ভেঙে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে সেগুলো বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেবল অপারেটরদের। আমরা তথ্যমন্ত্রীর এ-সংক্রান্ত উদ্যোগকে সঠিক ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করতে চাই। আমরা আশা করব, আইন প্রতিপালনের এ উদ্যোগ অন্যসব ক্ষেত্রেও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অনুকরণীয় হয়ে উঠবে।

সর্বশেষ খবর