রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

উমর (রা.) যেভাবে মুসলমান হলেন

মুহম্মাদ সাহেব আলী

হজরত উমর (রা.) একবার উন্মুক্ত তরবারি হাতে ছুটলেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার উদ্দেশ্যে। পথে এক সাহাবির সঙ্গে দেখা। তিনি জিাজ্ঞাস করেন কোথায় যাচ্ছো উমর? তিনি জবাব দেন, আমি মুহাম্মদকে খতম করতে চাই। সাহাবি বললেন, আরে উমর! আগে তোমার নিজের বোন-ভগ্নিপতির খবর নাও তারা তো কলমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেছেন। উমর বিক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, আমার পরিবারের লোক আমার অনুমতি ছাড়া ইসলাম গ্রহণ করেছে! তা কী করে সম্ভব? উমর সোজা বোনের বাড়ি চলে গেলেন এবং দরজায় কড়া নাড়লেন।  তিনি দেখলেন তারা বসে কী যেন পড়ছেন। উমরের বোন হজরত ফাতিমা (রা.) বুঝে ফেললেন দরজায় উমর দাঁড়িয়ে আছেন। অতএব, যে সাহাবি পড়াচ্ছিলেন দ্রুত আত্মগোপন করলেন এবং কোরআনের আয়াত লুকিয়ে ফেললেন। দরজা খোলা হলে উমর ভিতরে এলেন। ভগ্নিপতিকে জিজ্ঞাসা করলেন শুনলাম তোমরা মুসলমান হয়ে গেছো? ভগ্নিপতি বললেন, ইসলাম সত্য তাই সত্য গ্রহণে বাধা কোথায়? এ কথা শোনা মাত্র উমর তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। শুরু হলো বেদম প্রহার। বোন ফাতিমা (রা.) স্বামীকে রক্ষার জন্য এগিয়ে এলেন। ক্রোধে উমর বোনের চেহারায়ও হাত চালালেন, বোনও মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। কিন্তু তৎক্ষণাৎ উঠে সজল চোখে উমরের মুখোমুখি হয়ে বললেন, যে মায়ের দুধ তুমি পান করেছো আমিও সেই মায়ের দুধ পান করেছি। তাই বলছি তুমি আমার দেহ থেকে আত্মাকে বের করতে পারো কিন্তু আমার দিল থেকে ইমান বের করতে পারবে না। এ শব্দগুলো উমরের অন্তরে বিদ্যুতের মতো আছড়ে পড়ল, অন্তরকে মোমের মতো গলিয়ে দিল। উমর বললেন, ফাতিমা বল তোমরা কী পড়ছিলে? হজরত ফাতিমা (রা.) বললেন, ভাইজান! আপনি অপবিত্র, শিরকের নাপাক আপনাকে অপবিত্র করে দিয়েছে প্রথমে গোসল করুন তাহলে আপনি এই কালাম শ্রবণ করতে পারবেন। উমর গোসল করে আল্লাহর কালাম শুনলেন এবং বললেন, আচ্ছা তোমরা আমাকে মুসলমান বানিয়ে দাও। এ কথা শুনে লুকিয়ে থাকা সাহাবি আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন। বললেন, হে উমর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েক দিন ধরেই দোয়া করছিলেন হে আল্লাহ! উমর ইবনে খাত্তাব বা উমর ইবনে হিশাম দ্বারা তুমি দীনকে শক্তিশালী কর। আল্লাহর হাবিবের দোয়া আপনার জন্য কবুল হয়ে গেছে। চলুন আমি আপনাকে তাঁর দরবারে নিয়ে যাই। উভয়ে চললেন দারুল আরকামের দিকে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দরজা লাগিয়ে বসে ছিলেন। মুসলমানদের তালিম দিচ্ছিলেন। উমর দরজায় কড়া নাড়লে একজন সাহাবি দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে বললেন, আল্লাহর হাবিব! দরজায় উমর দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে রয়েছে উন্মুক্ত তরবারি। আমরা জানি না কোন উদ্দেশ্যে সে এসেছে। হজরত হামজা (রা.) এগিয়ে এলেন। বললেন, দরজা খুলে দাও। যদি ভালো উদ্দেশ্যে এসে থাকে তবে তাকে স্বাগত। আর যদি অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকে তবে আমার তরবারি দেখাবে আমি তার সঙ্গে কী আচরণ করি। দরজা খুলে দেওয়া হলো। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খতম করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে হজরত উমর (রা.) নিজেই খতম হয়ে গেলেন! তার অন্তর তখন আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাসত্বের জন্য উদ্গ্রীব ও উন্মুখ হয়ে আছে। আদবের সঙ্গে এসে তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বসলেন এবং বললেন, আমি আপনার খাদিম হওয়ার জন্য হাজির হয়েছি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানরা আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে দিল। এটাই ছিল মুসলমানদের সর্বপ্রথম সম্মিলিত তাকবির ধ্বনি। এর আগে হজরত হামজা (রা.) মুসলমান হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ৩৯তম মুসলমান আর হজরত উমর (রা.) হলেন ৪০তম মুসলমান।

            লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর