রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিশাপ

শিল্পোন্নত দেশগুলোকে দায় নিতে হবে

জলবায়ু পরিবর্তনে দুনিয়ার যেসব দেশ ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের নাম তার সামনের তালিকায়। জলবায়ু পরিবর্তনে দুনিয়াজুড়ে বাড়ছে উষ্ণতা। গলছে মেরুদেশের বরফের স্তর। ফলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এর ফলে বাংলাদেশের উপকূলভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ শিশু। সাইক্লোন, বন্যা ও পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রতি তিনজন শিশুর একজন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ১ কোটি ৯৪ লাখ শিশুর মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ শিশু নদীভাঙনের এলাকা কিংবা এর কাছাকাছি থাকে। ৪৫ লাখ শিশুর বসবাস উপকূলীয় এলাকায়। খরার ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৩০ লাখ শিশু। বাংলাদেশের শহরগুলোয় প্রায় ৬০ লাখ জলবায়ু-উদ্বাস্তু রয়েছে এবং এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বন্যাজনিত বিপর্যয় প্রায় প্রতি বছরই ঘটছে। ইউনিসেফ বলেছে, বাংলাদেশে অতীতের তুলনায় পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ঘটেছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। তার পরও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে মৃত্যুঝুঁকি কমেনি। ২০৫০ সাল নাগাদ পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে ভুক্তভোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলেও আশঙ্কা করেছে ইউনিসেফ। ইউনিসেফের প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনে দেশের প্রায় ২ কোটি শিশুর বিপদাপন্ন অবস্থার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা। ইউনিসেফ ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু শুকনা কথায় তো চিঁড়া ভেজে না। জলবায়ু সমস্যার যে বিপদ বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ওপর নেমে এসেছে, তার জন্য দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলোর বায়ুদূষণের কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর পাশে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে দাঁড়াতে হবে। দয়া নয়, ক্ষতিপূরণ দিয়ে নিজেদের অন্যায়ের প্রতিকার করতে হবে। এটি তাদের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর