মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণ

রাজনীতির নামে দস্যুতা ভালো কথা নয়

জলদস্যু বনদস্যুদের পর তথাকথিত চরমপন্থিরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। জলদস্যু বনদস্যুরা দস্যিবৃত্তির দ্বারা দেশের উপকূলীয় বনাঞ্চল এবং জলসীমায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। সাধারণ লোকজন এবং জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করত তারা। অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে অপহৃত ব্যক্তিকে হত্যা করা হতো। কখনো কখনো মুক্তিপণ নিয়েও প্রাণে মারা হতো অপহৃতদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে কোণঠাসা হয়ে জলদস্যু ও বনদস্যুদের এক বড় অংশ ইতিমধ্যে আত্মসমর্পণ করেছে। চরমপন্থি দলগুলো গড়ে উঠেছিল মার্কসবাদ, লেনিনবাদ, মাও সে তুংয়ের চিন্তাধারা অনুযায়ী তথাকথিত সাম্যবাদী সমাজ কায়েমের নামে। সর্বহারা পার্টি, কয়েক রকমের কমিউনিস্ট পার্টি এবং জাসদের গণবাহিনী নামের চরমপন্থিরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে রাতের বেলায় আধিপত্য বিস্তার করলেও তাদের সঙ্গে জলদস্যু ও বনদস্যুদের কর্মকাণ্ডের কোনো পার্থক্য ছিল না। জলদস্যু বনদস্যুরা তাদের দস্যুবৃত্তি চালাত অর্থের জন্য। তারা কোনো ভণ্ডামির আশ্রয় নিত না। আর তথাকথিত চরমপন্থিরা একই অপকর্ম চালাত বস্তাপচা রাজনৈতিক আদর্শের আবরণে। তাদের মধ্যে পাবনা অঞ্চলের ৬১৪ জন চরমপন্থি আজ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন বলে সরকারি সূত্রে আভাস দেওয়া হয়েছে। পাবনা শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। রবিবার রাজধানীর মিরপুরের পুলিশ স্টাফ কলেজে ‘ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম : সার্ক পারসপেকটিভ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কোর্সের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি স্বীকার করেছেন। স্মর্তব্য, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে কুষ্টিয়া অঞ্চলের চরমপন্থিদের একদল আত্মসমর্পণ করেছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে প্রায় ৩০-৪০ বছর আগে চরমপন্থিরা নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করত। তারা এক একটা বলয় সৃষ্টি করে অরাজকতা সৃষ্টি করত। এগুলো ক্রমশই ছোট হয়ে এসেছে এবং চরমপন্থিরা দুর্বল হয়ে পড়েছে। যে কয়জন অবশিষ্ট ছিলেন, তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জাবোধ করে সরে আসতে চাওয়ায় সরকার তাদের সুযোগ দিয়েছে। তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধে জড়িত হবেন না এ ওয়াদা পালন করলে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। তথাকথিত চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণ নিঃসন্দেহে একটি ভালো ঘটনা। এটি আত্মসমর্পণকারীদের জন্য শুধু নয়, মার্কসবাদ, লেনিনবাদ এবং মাও সেতুংয়ের চিন্তা-ধারার সত্যিকারের অনুসারীদের জন্যও স্বস্তিদায়ক। কারণ রাজনৈতিক আদর্শের নামে দস্যুতা ভালো নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর