বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

১০ এপ্রিলের ঘোষণাপত্রই রাষ্ট্র নির্মাণের নির্দেশনা

শহীদুল্লাহ ফরায়জী

১০ এপ্রিলের ঘোষণাপত্রই রাষ্ট্র নির্মাণের নির্দেশনা

৩০ লাখ শহীদের রক্তের আস্তরণের ওপর যে বাংলাদেশ নির্মিত হয়েছে তার আইনগত ও রাজনৈতিক বৈধতার ভিত্তি হচ্ছে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের বৈধ কর্তৃপক্ষ হচ্ছে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ’৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। সেই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী জনগণ কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গণপরিষদ গঠন করে এ ঘোষণাপত্র জারি করেন। উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার পরিবর্তে কীভাবে একটি বর্বর, অন্যায়, নৃশংস ও বিশ্বাসঘাতকতামূলক যুদ্ধে দখলমূলক ও গণহত্যা সংঘটিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা অসম্ভব করার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী উদ্দীপনায় বাংলাদেশর ভূখণ্ডের ওপর কার্যকর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এ ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে। এ ঘোষণাপত্রেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র হবে প্রজাতান্ত্রিক তা নিশ্চিত করে এবং বঙ্গবন্ধুকে অবিসংবাদিত নেতা ও ২৬ মার্চ ঘোষিত স্বাধীনতা সমর্থন ও অনুমোদন দেয়। এসবের বাইরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি কোন দর্শনের ভিত্তিতে নির্মাণ হবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কোন দর্শনে পরিচালিত হবে, তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা ঘোষণাপত্রে রয়েছে; যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করিলাম’ ইংরেজিতেProclamation of Independence -এ বলা হয়েছে In order to ensure for the people of Bangladesh equality, human dignity and social justice  অর্থাৎ এই তিন আদর্শ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতেই রাষ্ট্রকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঘোষিত আদর্শ ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক সুবিচার’-এর ব্যাপকতা-গভীরতা-তাৎপর্য উপলব্ধি না করে এবং এই তিন আদর্শের দর্শনের ভিতর সমগ্র জাতির নিগূঢ় ঐক্য অনুধাবন না করে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। ফলে শুরুতেই আদর্শিক, নৈতিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুযোগ বিনষ্ট হয়।

মুক্তিসংগ্রামের দর্শন হচ্ছে এ ত্রয়ী আদর্শ। ৪৮ বছর ধরে এ ত্রয়ী আদর্শ রাষ্ট্রে প্রয়োগ করা তো দূরের কথা, এ ত্রয়ী আদর্শ জনগণকে জানানোই হয়নি। এ ত্রয়ী দর্শনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের মানসজগৎ নির্মাণ হবে আর সে ভিত্তিতে নির্ধারণ হবে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি।

১০ বা ১৭ এপ্রিলকে আজ পর্যন্ত প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণা করা হয়নি। বিশ্বের বহু মুক্তিকামী দেশে Declaration of Independence  ঘোষণার দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস বা জাতীয় দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। মুক্তিসংগ্রামের দেশগুলোর মধ্যে দুর্ভাগ্যজনক দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। আজ পর্যন্ত ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের দিনটিকে বা ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি- এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হয় না।

বাংলাদেশে ত্রয়ী আদর্শ নিয়ে টুঁশব্দটি ’৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে নেই। রাষ্ট্রীয় সংবিধানে রাষ্ট্রের তিন আদর্শ সুরক্ষিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার। এ ঘোষণা- প্রতিশ্রুতি-অঙ্গীকার-দৃঢ় সংকল্প-একে পরিবর্তন করার এখতিয়ার রাষ্ট্রের নেই-সংসদের নেই। কারণ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র হচ্ছে শহীদের আত্মার সঙ্গে জনগণের চুক্তি-এ চুক্তি অলঙ্ঘনীয়। রাষ্ট্রের এ তিন আদর্শকে সমাজ দেহে গ্রথিত করে দার্শনিক ভিত্তির ওপর রাষ্ট্র নির্মাণের কোনো উদ্যোগ আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। ফলে রাষ্ট্র এখন আদর্শহীন রাষ্ট্র। বর্তমানে রাষ্ট্রের কোনো আদর্শ নেই আর ’৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে উল্লিখিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহের কোনো কার্যকারিতা নেই। এ আদর্শবিহীন রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে এখন অনেক দূরবর্তী। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি রাষ্ট্রকে এখন প্রজাতন্ত্র থেকেও বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার ন্যায়সংগত উৎস হচ্ছে জনগণ। অথচ জনগণকে এখন রাষ্ট্রক্ষমতা প্রয়োগ থেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা বহাল রেখে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল অতীতের দিকে তাকিয়ে, ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে নয়। ফলে কয়েক বছর যেতে না যেতেই সংবিধান বিদ্যমান থাকা অবস্থায় একদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং সংবিধান বহাল রেখেই সামরিক শাসন জারি করা হয়। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংবিধান বহাল রেখেই সামরিক আইন বলবৎ করে ফরমান জারি করেন। এ ফরমানে বলা হয়- ১. রাষ্ট্রপতি সময়ে সময়ে সামরিক আইন প্রবিধান ও আদেশ জারি করতে পারবেন ২. অত্র ফরমান কর্তৃক প্রণীত সামরিক আইন, প্রবিধান ও আদেশ (Martial law order) সাপেক্ষে বাংলাদেশের সংবিধান বলবৎ থাকবে ৩. বাংলাদেশের সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে যাহাই থাকুক না কেন সামরিক আইন, প্রবিধান ও আদেশ ইত্যাদি বলবৎ ও কার্যকর থাকবে। সুতরাং দেখা যায় সংবিধানকে সামরিক ফরমানের অধীন করা হয়েছে। পরে এইচ এম এরশাদ সংবিধান স্থগিত করেন। ব্যক্তি ও দলের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন হয়েছে কয়েকবার। এ সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক কোনো নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ।

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে তিন আদর্শ ছিল আমাদের রাষ্ট্রের দার্শনিক ভিত্তি। দার্শনিক ভিত্তি ছাড়া একটি রাষ্ট্রকে সংজ্ঞায়িত করা যায় না, দিকনির্দেশনা দেওয়া যায় না। দার্শনিক ভিত্তির অভাবে আমাদের মনন অবক্ষয়প্রাপ্ত, মূল্যবোধ ভেঙে পড়ছে এবং আইনের শাসন লণ্ডভণ্ড। মানুষ বিভক্ত ও নৈতিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত, বাঙালি সংস্কৃতি বিপন্ন। সুতরাং দার্শনিক ভিত্তিকে উপেক্ষা করে প্রণীত সংবিধান একটি আইনি কাঠামোর জোগান দিতে পারে কিন্তু রাষ্ট্র বা সমাজ রূপান্তরের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারে না।

তিন আদর্শকে নিরাপদ করতে হবে, সংরক্ষিত করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে জনগণের জন্য অর্থনৈতিক-সামাজিক ও রাজনৈতিক সাম্যের নিশ্চয়তা দেওয়া না যাবে, যতক্ষণ সবাইকে বাধ্যতামূলক করা না হবে, ততক্ষণ মুক্তিযুদ্ধের সব অঙ্গীকার ব্যর্থ হয়ে যাবে।

 

আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। প্রতিটি সংবিধানের প্রস্তাবনায় দুটো বিষয়ের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়- ১. সাংবিধানিক ক্ষমতার উৎস কী? ২. সংবিধানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী?

সংবিধানের প্রস্তাবনায় সংবিধানের অন্তর্নিহিত দর্শন ও আদর্শের সন্ধান দেওয়া হয়। সংবিধানের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রীয় দর্শনের প্রতিফলনই হবে শ্রেষ্ঠ সংবিধানের ভিত্তি। সংবিধানের প্রস্তাবনা হচ্ছে রাষ্ট্রের সংক্ষিপ্ত প্রতিচ্ছবি। আদর্শ, দর্শন ও উদ্দেশ্য রাষ্ট্র গঠনের রূপরেখা, জাতির মূল্যবোধ, জাতির তাৎপর্যপূর্ণ অবদান প্রস্তাবনায় উল্লেখ থাকে। প্রস্তাবনার নৈতিক তাৎপর্য অপরিসীম, যা জাতীয় মূল্যবোধের সঞ্চালক। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের প্রস্তাবনাকে Soul of the Constitution হিসেবে উল্লেখ করেছে।

’৭২ সালের সংবিধানের উৎসমূল হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, যা অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান হিসেবে স্বীকৃত। সংবিধানের উৎসসূত্র যদি ঘোষণাপত্র হয় তাহলে ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত রাষ্ট্রীয় দর্শন কী করে সংবিধান বা সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে বাদ পড়তে পারে, ভয়াবহ গণহত্যা শব্দটি ছাড়া রক্তে প্লাবিত রাষ্ট্রের সংবিধান কীভাবে প্রণীত হয়, কীভাবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের আদর্শ নির্মিত হয়। আর কী করেই ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতি ছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলিল লেখা হয়। আর কীভাবেই বা বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম অবদানের ন্যূনতম স্বীকৃতির উল্লেখ ছাড়া প্রস্তাবনার সমাপ্তি হয়। গভীর সত্যকে ধারণ করতে না পারলে আমাদের রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় ভয়াবহ রূপ নেবে।

’৭২-এর সংবিধানে বর্ণিত গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা গত ৪৮ বছরে শাসকদের নৈতিকতাহীন অতিলোভে রাষ্ট্র থেকে বিলীন হয়ে গেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কফিনে পর্যবসিত হয়েছে। বরং সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচারÑ এ ত্রয়ী আদর্শ প্রতিষ্ঠা হলেই গণতন্ত্রকে পূর্ণতা দেবে। বৈষম্যহীনতা-সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা হলেই গণতন্ত্রের অঙ্গীকার রক্ষিত হবে। সর্বক্ষেত্রে জনগণের চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা হবে প্রজাতন্ত্রের কাম্য। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র কেবল রাজনৈতিক দিক থেকেই প্রজাতান্ত্রিক হবে না, সামাজিকভাবেও হবে প্রজাতান্ত্রিক। সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক সুবিচারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে উত্তরাধিকারসূত্রে বা কূটকৌশলের আশ্রয়ে বা অন্যায়ভাবে অনির্বাচিত হয়ে কেউ শাসনব্যবস্থায় সম্পৃক্ত হতে পারবে না, প্রতিটি পদ হবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নির্বাচনভিত্তিক। এ ত্রয়ী আদর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সামাজিক বিন্যাস গঠন করতে হবে।

সাম্য হবে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সব নাগরিক যেন সমানভাবে স্বীকৃতি পায়, মানুষ সৃষ্টির বৈষম্য থেকে যেন সমাজকে মুক্ত করা যায়। বৈষম্য-অসাম্য যত বাড়বে ততই ঐক্যবিনাশী শক্তি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করবে রাষ্ট্রীয় সংহতি। বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে বৈষম্য তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে।

আদর্শবিহীন একটি রাষ্ট্র কী পরিমাণ বিধ্বস্ত হতে পারে তার উদাহরণ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র এখন সংবিধান বা মানবিক সমাজের পরিপূরক নয়, পরস্পরবিরোধী প্রতিষ্ঠান। সংবিধান-সাংবিধানিক চেতনা-রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সবকিছুকে কীভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে তা এখন আর বর্ণনার বিষয় নয়।

’৭২-এর সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের মালিকানা, সামাজিক নিরাপত্তা, সুযোগের সমতা, শোষণ থেকে মুক্তি, জীবনমানের বৈষম্য দূরীকরণ, মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা, জীবন ও ব্যক্তির স্বাধীনতা উল্লেখ আছে কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় তার প্রয়োগ কতটুকু তা বলার আর প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে ভারতের সংবিধানের নির্মাতা ও সাংবিধানিক বিন্যাসের স্থপতি ড. আম্বেদকর বলেছেন, সংবিধান খুব বেশি হলে একটি আইনি কাঠামো জোগান দিতে পারে, যা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত হতে পারে কিন্তু যথেষ্ট শর্ত নয়। যে মনোভাব অনুভূতি ছাড়া পরিবর্তন সফল হবে না সেগুলোর অস্তিত্ব সংবিধানের পক্ষে জাদু বলে ঘটানো সম্ভব নয়। সাংবিধানিক আইনকে সাংবিধানিক নৈতিকতার একটি বুনিয়াদের ওপর নির্ভর করতে হয়। যতই সতর্কভাবে সংবিধান রচিত হোক না কেন সাংবিধানিক নৈতিকতার অনুপস্থিতিতে সংবিধানের ক্রিয়া পদ্ধতির স্বেচ্ছাচারী, অযৌক্তিক ও খামখেয়ালি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গণতান্ত্রিক বিন্যাসে আইনের ক্ষেত্রকে রাজনৈতিক ক্ষেত্র থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা সম্ভব নয়। এখানেই সাংবিধানিক নৈতিকতার তাৎপর্য নিহিত। আইনপ্রণেতা, বিচারক, আইনজীবী, মন্ত্রী ও জনপরিসরের চিন্তাবিদদের মধ্যে সাংবিধানিক নৈতিকতার অনুপ্রবেশ না ঘটালে সংবিধানটি ক্ষমতার দালালদের হাতের খেলনা হয়ে দাঁড়ায়।

বিদ্যমান সংবিধান দিয়ে, সাংবিধানিক চেতনা দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ নির্মাণ করা আর সম্ভব হবে না। এটি এখন শাসকদের খেলনায় পরিণত হয়েছে। সুতরাং রাষ্ট্রকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আদর্শের ভিত্তিতে বিনির্মাণ করতে হবে। রাষ্ট্রকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আলোকে বিনির্মাণের প্রয়োজনে যা জরুরি কর্তব্য : ১. ঘোষণাপত্রের তিন আদর্শকে প্রজাতন্ত্রের আদর্শ হিসেবে ঘোষণা করা; ২. সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক পর্যালোচনা করে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি উদ্ভাবন করা এবং জনগণের অভিমত গ্রহণে ‘গণভোট’ অনুষ্ঠান করা ৩. ১০ এপ্রিল বা ১৭ এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করা।  ৩০ লাখ শহীদের রক্তের দায় বহন করতে হলে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তিন আদর্শের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।

            লেখক : গীতিকবি [email protected]

সর্বশেষ খবর