শিরোনাম
বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

মানুষ মানুষের জন্য

ফায়ারম্যান রানা অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন

রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবনের আগুন নেভানো ও আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ফায়ারম্যান সোহেল রানা। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় অনেকের জীবন রক্ষা পেলেও উদ্ধারকাজের সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে নিজেই চলে গেলেন না-ফেরার দেশে। রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৭ মিনিটে তিনি আত্মসমর্পণ করেন মৃত্যুর কাছে। ২৮ মার্চ বনানীর বহুতল ভবনের অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসের উঁচু ল্যাডার বা মইয়ে আগুন নেভানো ও আটকে পড়াদের উদ্ধারকাজ চালাচ্ছিলেন সোহেল রানা। হঠাৎ তার শরীরে লাগানো নিরাপত্তা হুকটি মইয়ের সঙ্গে আটকে যায়। মই থেকে পিছলে পড়ে বিপজ্জনকভাবে ঝোলার সময় আঘাত লেগে তার একটি পা ভেঙে যায়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দেশে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে শুক্রবার সোহেলকে পাঠানো হয় সিঙ্গাপুর। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসকদের আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও বাঁচানো যায়নি সোহেল রানাকে। মানুষ মানুষের জন্যÑ এ অভিধার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন তিনি উদ্ধারকাজের সময়। মানবিকতা ও সহমর্মিতার উদাহরণ সৃষ্টি করে ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার করেন বেশ কজন আটকে পড়া মানুষকে। স্মর্তব্য, বনানীর অগ্নিকাণ্ডে সোহেল রানা ছাড়া আরও পাঁচজন উদ্ধারকর্মী আহত হন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন, নৌযানডুবিসহ বিভিন্ন বিপর্যয়কর ঘটনায় উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে ইতিপূর্বেও হতাহত হয়েছেন। মানুষ মানুষের জন্যÑ কথাটি বাস্তবে পরিণত করার যে নিদর্শন তারা রেখেছেন তা সবার জন্য অনুকরণীয়। দেশে সোহেল রানার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জের ইটনার কেরুয়ালা গ্রামের সোহেল রানা ছিলেন গরিব পরিবারের বড় ছেলে। মাত্র কদিন আগে মাকে দেখতে তিনি গিয়েছিলেন গ্রামে। বলেছিলেন, শিগগিরই ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে আসবেন গ্রামে। তিনি মাকে দেওয়া তার কথা রেখেছেন তবে এমন ফেরা কারোর কাছেই কাম্য ছিল না। সোহেল রানার আত্মত্যাগ প্রমাণ করেছে আমাদের দেশেও কর্তব্যপরায়ণ মানুষের সংখ্যা খুব একটা কম নয়। তাকে গার্ড অব অনার দিয়ে সম্মান জানিয়েছেন সহকর্মীরা। এ ত্যাগী কর্মীর প্রতি আমাদেরও শ্রদ্ধা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর