বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডাকসু নির্বাচন ২০১৯ : নৈতিকতার নির্বাসন

তুষার কণা খোন্দকার

ডাকসু নির্বাচন ২০১৯ : নৈতিকতার নির্বাসন

১৯৭৪ সাল। ইডেন কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে ভর্তি হয়ে সবে নিজেকে বড়দের দলের একজন বলে ভাবতে শুরু করেছি। ভাবনার সঙ্গে মিল রেখে স্কুলজীবনের বৃত্ত ভাঙার জন্য প্রাণপণে কলেজের কেতা-কানুন রপ্ত করার চেষ্টা করছি। কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য আমি বড় বোনের লক্ষ্মীবাজারের বাসায় সাময়িক ঠাঁই নিয়েছিলাম। লক্ষ্মীবাজার থেকে আজিমপুরে ইডেন কলেজে ক্লাস করতে আসা বেশ কঠিন বলে খুব শিগগির কলেজের হোস্টেলে সিট পাওয়ার তাগিদ ছিল। কলেজের হোস্টেলে সিট পাওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে দরখাস্ত দিয়ে সেটির অগ্রগতির খোঁজখবর করতে ক্লাস শেষে প্রতিদিন একবার হোস্টেল সুপারের অফিসে হানা দেই। হোস্টেলে সিট পাওয়ার জন্য এখন যেমন কোনো ছাত্র সংগঠনের বড় আপার দুয়ারে ধরনা দেওয়ার নিয়ম তখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন চল শুরু হয়নি। কারও দরবারে কোনো বিশেষ তদবির না করে সিট চেয়ে দরখাস্ত দাখিলের কয়েকদিন পরে ইডেনের পুরান হোস্টেলে আমার নামে সিট বরাদ্দ হলো। সিট বরাদ্দ শব্দটি শুনতে যেমন গালভরা বাস্তবে ব্যাপারটি তেমন নয়। সিট বরাদ্দের চিঠি হাতে পাওয়ার বদৌলতে পুরান হোস্টেলের দোতলার কমনরুমে অনেক ছাত্রীর ঠাসাঠাসি ভিড়ের মধ্যে আমারও থাকার জায়গা হলো। দোতলার কমনরুম অনেক ছাত্রীর এজমালি সম্পত্তি। সেই রুমের মাঝামাঝি দুই হাত চওড়া সাড়ে পাঁচ হাত লম্বা একখানা খাটের দখল পাওয়াকে আমরা সিট পেয়েছি বলতাম। অনেক ছাত্রীর ভিড়ে ঠেলেঠুলে একটা খাট পাতা গেলেও ওখানে বাড়তি কিছু রাখার জায়গা ছিল না। তবুও খাটের সঙ্গে একটি ডেস্ক পাতার বন্দোবস্ত থাকায় ডেস্কের ওপর বই খাতা রেখে খাটের ওপর বসে লেখাপড়া করার সুযোগ ছিল। কমনরুমে ঠাঁই নেওয়ার কয়েকদিন পরে এক সন্ধ্যায় আমরা যে যার খাটে বসে টেবিলের ওপর বই খাতা বিছিয়ে পড়তে বসেছি। এমন সময় দেখি এক মাথা কোঁকড়া চুলওয়ালা অতি জীর্ণ স্বাস্থ্যের একটি মেয়ে লম্বা পা ফেলে কমনরুমে এসে ঢুকল। মেয়েটির পরনে লাল পাড় সাদা শাড়ি। আমাদের এজমালি বসবাসের লম্বা রুমটার দরজা পেরিয়ে খানিক সামনে এসে বেশ আদুরে গলায় বলল, ‘কেমন আছ মেয়েরা?’ কোঁকড়া চুলের মেয়েটি কার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিল সেটি বুঝে উঠার আগেই সে একটা খালি খাটে পা ঝুলিয়ে বসে অনেক কথা বলতে শুরু করল। তার অনেক কথার সবই প্রায় ভুলে গেছি। শুধু মনে আছে সে আমাদের ছাত্রলীগ আয়োজিত নবীনবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিল। বলেছিল আগামী অত তারিখে কলেজের অডিটরিয়ামে ইডেন কলেজের ছাত্রলীগ নবীন ছাত্রীদের বরণ করে নেবে। নবীন ছাত্রীরা যে জাতির কত বড় সম্পদ সেটিও সে ব্যাখ্যা করে বলেছিল। ছাত্রলীগ ইডেনের নবাগত ছাত্রীদের ভবিষ্যতে জাতির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যতœ করে তৈরি করে দেবে তেমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে তার বক্তৃতার সমাপ্তি টানল। মাত্র দুই বছর সময়কালে আমাদের  ইন্টারমিডিয়েট পড়া শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ছাত্রলীগ মাত্র দুই বছরে কেমন করে এত বড় দায়িত্ব পালন করবে সেটি বুঝে ওঠার আগে মেয়েটি খাট ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে একগাল হেসে বলল, ‘আজ আসি কেমন? তোমরা আমার রুমে এসো কিন্তু’। আমার পাশের খাটে পাস কোর্সের এক সিনিয়র আপা সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে বিছানায় শুয়ে ক্রমাগত পা নাড়তেন। উনি হঠাৎ পা নাড়ানো বন্ধ করে বালিশ থেকে মাথা তুলে ছাত্রলীগের নেত্রীর চলে যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে বললেন, ‘ওকে চিনলি না তোরা? ও ছাত্রলীগের ফজিলা। সামনে কলেজের ইলেকশন। তাই তোদের পটাতে বের হয়েছে। বুঝিস না, ভোট চায়। ভোট শেষ হয়ে গেলে তোদের আর চিনবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।’ পাস কোর্সের আপার মুখের কথা শেষ না হতেই দরজায় আর এক মুখ। উনার পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে লাল টিপ। উনিও ছাত্রলীগের ফজিলা আপার মতো প্রায় এক কিসিমের বয়ান দিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার দাওয়াত দিল। ইডেন কলেজের ছাত্রীদের যাবতীয় সমস্যা সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী তার বক্তৃতা শেষ করে হাসি মেশানো মিহি গলায় বলল, ‘শোন মেয়েরা, তোমাদের কারও কোনো সমস্যা হলে আমার রুমে গিয়ে আমাকে বল। তোমাদের সুখ-দুঃখে আমাকে সব সময় পাশে পাবে।’ আমরা নবীনরা অবাক চোখে মেয়েটিকে দেখছিলাম। ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী তার বক্তৃতা শেষ করে একগাল বিগলিত হাসি হেসে রুম ছেড়ে চলে যেতে উনার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আশায় পাস কোর্সের আপার দিকে তাকালাম। উনি ধীরে সুস্থে বাম কাত থেকে ডান কাতে পাশ ফিরে আরাম করে বললেন, ‘এটি ছাত্র ইউনিয়নের নেতা। ওর নাম হাসিনা। সবাই ডাকে হাসনু আপা। এও ছাত্রলীগের ফজিলার মতো ভোট বাগাতে বের হয়েছে।’ এ পর্যন্ত বলে পাস কোর্সের আপা হাই তুলতে শুরু করায় আমরা আর বেশি কিছু জানতে পারলাম না।

নবীনবরণ অনুষ্ঠান পর্ব শেষ হওয়ার কয়েকদিন পরে ইডেন কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দামামা বেজে উঠল। কলেজের ক্লাসের ফাঁকে কিংবা হোস্টেলে ডাইনিং, রিডিং কিংবা খেলার রুম যেখানে যাই সেখানেই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুনি। আমি চুপচাপ কান ফেলে শুনি। কখনো কোনো মন্তব্য করি না কারণ কলেজের রাজনীতির সুলুক-সন্ধি তখনো আমার অজানা। কলেজের রাজনীতিতে সক্রিয় ছাত্র ইউনিয়নের হাসনু আপা আর ছাত্রলীগের ফজিলা আপাকে এক সন্ধ্যায় কমনরুমে এক ঝলক দেখার সুবাদে উনাদের সামনে পড়লে হেসে কথা বলার সাহস সঞ্চয় করেছিলাম। কলেজের রাজনীতিতে সক্রিয় বাকি সবাই তখনো আমার অচেনা। এমন সময় একদিন পুরান হোস্টেলের করিডোরে ছাত্র ইউনিয়নের হাসনু আপা আমাকে পেয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলল, ‘আরে মেয়ে, তুমি এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছ আর আমি তোমাকে সারা হোস্টেলে খুঁজে মরছি। এসো, এসো, আমার সঙ্গে এসো।’ এ পর্যন্ত বলেই উনি আমার গলায় বেড় দিয়ে ধরে রিডিং রুমের দিকে চলতে শুরু করলেন। আমার অসহায় চাউনি খেয়াল করে আদুরে গলায় বললেন, ‘এবার তুমি আমাদের সঙ্গে ইলেকশন করবে। রিডিং রুমে তোমাকে নিয়মিত পত্রিকা পড়তে দেখে বুঝেছি তুমি একটি সচেতন মেয়ে। ছাত্র ইউনিয়নের প্যানেলে সহকারী সাহিত্য সম্পাদিকা পদে তুমি নির্বাচন করবে।’ হাসনু আপা আমাকে খুব বেশি জবরদস্তি করছিলেন এমন বলব না। আমাদের পরিবারে আমার সেজো ভাই ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। সেই সুবাদে ছাত্র ইউনিয়ন আমার চেনা পার্টি। পারিবারিক ঐতিহ্যের দিক থেকে আমি ছাত্র ইউনিয়নের দিকে ঝুঁকেই ছিলাম। কাজেই হাসনু আপাকে খুব একটা চাপাচাপি করতে হলো না। আমি উৎসাহভরে আগ বাড়িয়ে নমিনেশন পেপারে সই সাবুদ করে নির্বাচনী মিছিল মিটিংয়ে শামিল হয়ে গেলাম।

নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বের অনেক কথা ভুলে গেছি তবে নির্বাচনের দিনটির কথা স্পষ্ট মনে আছে। ইডেন কলেজের দোতলার অডিটরিয়ামে নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র করা হয়েছিল। দিনভর ভোট দেওয়ার পর্ব শেষ হতে বিকাল থেকে ভোট গণনা শুরু হলো। আমরা অনেক ছাত্রী দল বেঁধে দোতলায় উঠার সিঁড়ির গোড়ায় ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে রাত ৮টার দিকে ছাত্রলীগ প্যানেলের ভিপি ক্যান্ডিডেট ফজিলা আপা অত্যন্ত দ্রুত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে মাথা নিচু করে হোস্টেলের দিকে চলে গেলেন। উনার মুখটা এক ঝলক চোখে পড়তে দেখলাম তাতে রাজ্যের বিষণœতা। ফজিলা আপার চলে যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে আমি যখন উনার বিষণœতার কারণ বুঝতে চাচ্ছি তখনই উপর থেকে বিজয় উল্লাস ভেসে এলো। জিতিলরে জিতিল- ছাত্র ইউনিয়ন জিতিল। মুহূর্তে কলেজের মাঠ ছাত্রীদের ভিড়ে ভরে গেল। যেসব ছাত্রী বাসা থেকে এসে কলেজে ভোট দিয়েছে তারা সূর্য পাটে বসার আগেই যে যার ঘরে ফিরে গেছে। কলেজের মাঠে সমবেত আমরা সবাই ইডেনের নতুন এবং পুরান হোস্টেলের বাসিন্দা। হোস্টেলে বাস করি বলে আমাদের কলেজ চত্বর ছেড়ে দূরে যাওয়ার তাড়া ছিল না। নির্বাচনে বিজয়ের ফলাফল পেয়ে আমরা হৈহুল্লোড় করে আনন্দে মেতে উঠলাম। আমরা সরাসরি বিজয়ীরা সমর্থক ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে স্লোগান ধরতেই কলেজের মেইন গেটের পাশ থেকে বোমা ফাটার বিকট শব্দ ভেসে এলো। সেই সঙ্গে চারদিকে ধোঁয়া আর বারুদের গন্ধে আমরা আতঙ্কিত হয়ে হোস্টেলের গেট দিয়ে দৌড়ে ভিতরে চলে গেলাম। সবাই বলল, ভোটে হেরে গিয়ে ছাত্রলীগের গুণ্ডারা কলেজের ভিতর বোমা মেরেছে। হোস্টেলের গেট দিয়ে ঢুকে আমরা ছাত্রলীগের গুণ্ডামির বিরুদ্ধে স্লোগান ধরলাম। সাধারণ ছাত্রীরা রুম ছেড়ে বেরিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। ছাত্রলীগের মেয়েরা নিশ্চুপ ছিল। সেদিন ভোটে হেরে যাওয়া হোস্টেলবাসী কিংবা বহিরাগত ছাত্রলীগের কেউ সেদিন আমাদের হোস্টেলে ঢুকে মিছিলে হামলে পড়ার সাহস দেখায়নি। কলেজজীবন শেষ করে এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব শুরু হলো। ১৯৭৮ সালে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে শুনলাম ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন হয়েছে বললে ভুল বলা হবে। আসলে ১৯৭৪ সালে ডাকসু নির্বাচনের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছিল। সে বছর ছাত্র ইউনিয়ন সম্ভবত ছাত্রলীগের সঙ্গে জোট বেঁধে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ছাত্র ইউনিয়ন তখন কমিউনিস্ট পার্টির অঙ্গ সংগঠন। কমিউনিস্ট পার্টি সে সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতার মধু খাওয়ার লোভে মাতোয়ারা। কাজেই ছাত্র ইউনিয়নও ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের বি টিম হিসেবে মাঠে খেলতে নেমেছিল। ১৯৭৮ সালে রোকেয়া হলের পুরনো ছাত্রীদের কাছে শুনেছি, ১৯৭৪ সালে ডাকসু নির্বাচনে বিকাল ৪টার মধ্যে ভোট দেওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। নির্বাচন শেষে যথারীতি ভোট গণনা শুরু হতে ছাত্রলীগ এবং ওদের অনুগত ছাত্র ইউনিয়নের লোকেরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে হলে ঢুকে ভোটের বাক্সগুলো তুলে নিয়ে গিয়েছিল। শুনেছি, সে বছর ডাকসু নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগ সব হলে এবং ডাকসুতে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল। সেই বিজয় ছাত্রলীগের মনোপূত হয়নি বলে তারা ভোটের বাক্স ছিনতাই করেছিল। অনেকদিন পরে ১৯৭৯ সালে আবার ডাকসু নির্বাচন শুরু হলো। পরের বছর নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ছাত্র ইউনিয়নের ক্যান্ডিডেট হিসেবে দুটি নির্বাচনে আমি সক্রিয় অংশীদার। সে সময় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেক বদলে গেছে। নির্বাচনে ছাত্রলীগ পরাজিত হলেও ভোটের বাক্স ছিনতাই করার শক্তি সাহস তাদের আর অবশিষ্ট ছিল না।

দীর্ঘ ২৮ বছর পরে ২০১৯ সালে আবার ডাকসু নির্বাচন হলো। ডাকসু নির্বাচনে নতুন কিছু ঘটেনি। যা ঘটেছে সেটাকে নতুন বোতলে পুরাতন মদ বললে অত্যুক্তি হবে কেন? ডাকসুর ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে গেছে বলে যারা অতি আবেগে চিৎকার করছেন তাদের আমি ১৯৭৪ সালের ডাকসু নির্বাচন স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। এ বছর ছাত্রলীগ যা আচরণ করেছে এটি তাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য। আমি এতে বিস্মিত হইনি। আমি বিস্মিত হয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সীমাহীন অনৈতিকতা দেখে। ১৯৭৪ সালে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ভোটের বাক্স ছিনতাই করেছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভোট জালিয়াতির ইতর চাতুরির পথ বেছে নেয়নি। ২০১৯ সালে যে চিত্র আমরা দেখলাম সেটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের নৈতিক পদস্খলন বললে অল্প বলা হয়। বুদ্ধিজীবী সমাজে ইন্টেলেকচুয়াল প্রস্টিটিউশন নতুন কিছু নয়। পৃথিবীর সব দেশে সব সময়ই তা আছে। ইতিহাসের পাতা খুলে দেখুন, ইউরোপের এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী হিটলারের নাজি শাসনের পক্ষে সাফাই গাওয়ার মতো কলঙ্কিত কাজ করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কেউ কেউ ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে যা আচরণ করলেন সেটি অধঃপতনের নগ্ন উদাহরণ। আসলে ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সিদ্ধান্ত দেওয়ার প্রতি অসম্মান দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের শিক্ষক পদমর্যাদার অযোগ্য ঘোষণা করে বসে আছেন। তাদের নৈতিক দেউলিয়াত্ব সংশ্লিষ্টদের জীবদ্দশায় ঘুচবে বলে মনে হয় না। তবে ইতিহাসের পথপরিক্রমায় নীতিবর্জিতরা কোন পরিণাম ভোগ করেন সেটি দেখার জন্য আমি অপেক্ষায় থাকব।

            লেখক : কথাসাহিত্যিক।

সর্বশেষ খবর