হরিণ স্তন্যপায়ী প্রাণী। হরিণ গোত্রের সব সদস্যই স্বভাব ও গড়নের দিক থেকে প্রায় অভিন্ন। পুরুষ হরিণের মাথায় থাকে এক জোড়া শিং। এগুলো প্রথমে কোমল ভেলভেটের মতো রোমশ চামড়া দিয়ে ঢাকা থাকে এবং পরে পরিণত বয়সে চামড়া শুকিয়ে যায় ও একসময় খসে পড়ে। বাংলাদেশের কয়েক প্রজাতির হরিণের মধ্যে সাম্বার বৃহত্তম এবং চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের বনে বাস করে। সবচেয়ে সুন্দর ও পরিচিত প্রজাতি হলো চিত্রা হরিণ। এর হলুদ, হালকা বা গাঢ় বাদামি পিঠজুড়ে থাকে সাদা রঙের গোল গোল ফোঁটা। এদের আবাস প্রধানত সুন্দরবন। একসময় সিলেটের বনাঞ্চলে নাত্রিনি হরিণ দেখা গেলেও বাংলাদেশে এটি এখন আর টিকে নেই। মায়া হরিণ আকারে সবচেয়ে ছোট। সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ ছাড়া বাংলাদেশের অন্যসব হরিণ মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। যথেচ্ছভাবে শিকার ও আবাসভূমি ধ্বংসের জন্য বনের এসব সুদর্শন প্রাণী আজ বিপন্ন। বারশিঙা জাতীয় হরিণ এ দেশে এখন আর নেই। হরিণেরা নিশাচর বা দিবাচর। ঘাস, লতাপাতা ও ফুলফল এদের প্রধান খাদ্য। এরা ছোট ছোট দলে বাস করে। এক-দুই বছরেই যৌনতাপ্রাপ্তি ঘটে। সাত-আট মাস গর্ভধারণের পর একটি, দৈবাৎ দুটি বাচ্চা প্রসব করে।
মায়া হরিণ : মায়া হরিণ ছোটখাটো আকারের হরিণ। কাঁধ পর্যন্ত উচ্চতা মাত্র ৪০-৬২ সেমি। পুরুষ হরিণের ওপরের পাটির কর্তন দাঁত লম্বা, পুরুষ হরিণের মাথার শিং খুব ছোট। হরিণীর শিং নেই, শুধুই লোমে-ঢাকা বৃন্তিকা। দেহের রং নানারকম, গাঢ়-বাদামি থেকে হলদেটে কিংবা ধূসর-বাদামি আর তাতে হালকা হলুদ বা সাদা দাগ, পেটের দিক প্রায় সাদা। শরীর ছোট নরম লোমে ঢাকা, কানে সামান্য ছড়ানো লোম আছে। ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, নেপাল থেকে দক্ষিণ চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার (সুমাত্রা, জাভা, বোর্নিও) বনেজঙ্গলে মায়া হরিণের বাস। বাংলাদেশে সুন্দরবন, সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখা যায়। বন ও গভীর জঙ্গলই এদের পছন্দ। ঘাস খাওয়ার জন্য বনের কিনারে বা খোলা জায়গায় আসে। নিশাচর ও নিঃসঙ্গ, কিন্তু প্রায়ই একসঙ্গে দু-তিনটি দেখা যায়। চলে ধীরে ও সতর্কভাবে। কখনো ঠায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে। খায় পাতা, কুঁড়ি, ঘাস ও বুনো ফল।