শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

শবেবরাতের ফজিলত

শাহ মাহমুদ হাসান

শবেবরাতের ফজিলত

শাবান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ একটি মাস। আর শবেবরাত তথা ১৪ শাবান দিবাগত রাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি রাত। কারণ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাতটিকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ অর্থাৎ শাবানের মধ্যবর্তী রাত বলে আখ্যায়িত করে উম্মতকে আমলের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরাতের রাত জেগে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এত দীর্ঘ সময় ধরে সিজদা করলেন যে আমার ভয় হলো তিনি হয়তো মারাই গেছেন। এ চিন্তা করে আমি বিছানা ছেড়ে উঠে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিই, তার নড়াচড়ার কারণে আমার বিশ্বাস হলো তিনি জীবিত আছেন। তারপর নিজ বিছানায় ফিরে এলাম। এরপর তিনি সিজদা থেকে মাথা উঠালেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কী ধারণা হয়েছে যে নবী তোমার সঙ্গে সীমা লঙ্ঘন করেছে? আমি বলি, জি না, হে রসুল! তবে আপনার দীর্ঘ সময় ধরে সিজদার কারণে আমার মনে হয়েছে আপনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। এরপর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি জানো, আজকের এ রাতটি কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসুল এ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘এ রাতটি শাবানের মধ্যবর্তী রাত। এ রাতে আল্লাহতায়ালা নিজ বান্দাদের প্রতি বিশেষ করুণা বর্ষণ করেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের দয়া করেন। তবে হিংসুকরা তার দয়া ও অনুগ্রহপ্রাপ্ত হয় না। বায়হাকি, হা/৩৮৩৫। এ রাতে আল্লাহতায়ালার রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে অবারিত করা হলেও মুশরিক এবং হিংসুক এই ব্যাপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকে। এ ব্যাপারে রসুলুল্লাহ আরও ইরশাদ করেন, শাবানের মধ্যবর্তী রাতে অর্থাৎ ১৪ শাবান দিবাগত রাতে আল্লাহতায়ালা সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করেন। ইবনে মাজাহ, হা/১৩৯০। যারা শবেবরাতের ফজিলতকে একেবারেই অগ্রাহ্য করে তাদের পরম শ্রদ্ধেয় ও গ্রহণযোগ্য নাসীর উদ্দীন আলবানী (রহ.) ও এই হাদিসটিকে সহিহ বা বিশুদ্ধ বলেছেন। আস-সিলসিলাহ আস-সাহীহাহ, ৩/১৩৫। ইবনে মাজার বর্ণনায় এসছে, ‘১৫ শাবানের রাত যখন হয়, তোমরা রাতটি ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহতায়ালা প্রথম আসমানে এসে বলেন, আছে কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। আছে কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী? আমি তাকে রিজিক প্রদান করব। কে আছে রোগাক্রান্ত? আমি তাকে আরোগ্য দান করব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহতায়ালা মানুষের বিভিন্ন অসুবিধা ও প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তাদের ডাকতে থাকেন।’ ইবনে মাজাহ, হা/১৩৮৮। তাই এ রাতে অতি আবেগ তাড়িত হয়ে অতিরঞ্জিত করার যেমনি কোনো সুযোগ নেই তেমনি কোনো অজুহাতেই এই রাতে গাফেল থাকা বিবেকবান ইমানদারের কাজ নয়। বরং শবেবরাত ও শবেকদরের মতো নেকির মৌসুমগুলোকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর রেজামন্দি হাসিল করাই মোমিনের একান্ত কর্তব্য।

            লেখক :  ইসলামী গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর