শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাঁচানো গেল না রাফিকে

হত্যাকারীরা কেউ যেন পার না পায়

অধ্যক্ষের লাম্পট্যের প্রতিবাদ করায় প্রাণ দিতে হলো মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে। যৌন হয়রানির ঘটনা নীরবে মেনে নেওয়ার বদলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল রাফির পরিবার। সে মামলায় তাকে গ্রেফতার করাও হয়। অধ্যক্ষের লেলিয়ে দেওয়া দুর্বৃত্তরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য রাফির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। রাফি তাতে অস্বীকৃতি জানালে গত শনিবার তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ৮০ ভাগ দগ্ধ রাফিকে ফেনীর সোনাগাজী থেকে ঢাকায় এনে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। লাইফ সাপোর্ট দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার নির্দেশ দিলেও শারীরিক অবস্থার কারণে সম্ভব হয়নি। তবে তার চিকিৎসা চলছিল সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায় বুধবার রাতে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাফিকে মৃত ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তের পর ফেনীতে নেওয়া হয়েছে তার লাশ। ফেনীর সোনাগাজীর মেয়ে রাফি এ বছর আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী ছিলেন তিনি। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ‘শ্লীলতাহানি’র অভিযোগ এনে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় একটি মামলা করে নুসরাতের পরিবার। সেই মামলা তুলে না নেওয়ায় অধ্যক্ষের অনুসারীরা গত শনিবার পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ফেনী সদর হাসপাতালে এবং পরে শনিবার রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাফি অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর তার ওপর যৌন হয়রানি এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের নাম বলে গিয়েছে। যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর আত্মহত্যার কথাও ভাবে সে। পরে সে তার দুই বান্ধবীর কাছে লেখা চিঠিতে বলেছে, আমি লড়ব শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। যে তাকে কষ্ট দিয়েছে তাকে শাস্তি দেওয়ার প্রত্যয়ও ঘোষণা করে চিঠিতে। রাফি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত বেঁচে থাকার জন্য যেমন লড়েছে, তেমন লম্পট অধ্যক্ষের শাস্তিদানের ব্যাপারেও ছিল অটল। রাফির ওপর যৌন হয়রানি ও হত্যার সঙ্গে জড়িত সবার বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করতে প্রশাসন সব কিছু করবে আমরা এমনটিই দেখতে চাই। পাশাপাশি মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাঙ্গন নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ করতে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাই বাড়তি নজর দেবেন এমনটিও প্রত্যাশিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর