রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

পয়লা বৈশাখ

মঙ্গলময় হোক বাংলা ১৪২৬ সন

নববর্ষ পালন মানবসভ্যতারই অনুষঙ্গ। মানবসমাজে বর্ষবরণ উৎসবের শুরু সম্ভবত চার হাজার বছর আগে। মনে করা হয়, ব্যাবিলনে বর্ষবরণ উৎসবের সূত্রপাত। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা পাড়ের মানুষও হাজার হাজার বছর ধরে বর্ষবরণ পালন করে আসছে। বাংলা সন তথা পয়লা বৈশাখকে নববর্ষ হিসেবে পালনের রেওয়াজ মোগল সম্রাট আকবরের সময় থেকে। হিজরি চান্দ্রবর্ষের সৌরবর্ষ সংস্করণ হিসেবে চালু হয় বাংলা সন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার দিনপঞ্জি হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু হলেও গ্রামীণ সমাজে বাংলা বর্ষপঞ্জির গুরুত্ব এতটুকু কমেনি। কালের বিবর্তনে গ্রামীণ সমাজেও গ্রেগরীয় দিনপঞ্জির ব্যবহার বেড়েছে। তার পরও কৃষকসমাজ আজও বাংলা সন সামনে রেখে তাদের ফসলি কার্যক্রম চালায়। দেশের সবচেয়ে বড় উৎপাদনব্যবস্থার সঙ্গে বিজড়িত বাংলা সনের সম্পর্ক। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও হালখাতার মাধ্যমে বাংলা নববর্ষকে জিইয়ে রেখেছে। বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ বৈশাখী মেলা। এ মেলা জাতিধর্ম-নির্বিশেষে সব মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বাঙালির নববর্ষ আসে কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ার মাতম তুলে। জরাজীর্ণ যা কিছু তা উড়িয়ে দিয়ে নববর্ষে নতুনের অভিষেক হয়। নববর্ষে বাঙালি অতীতের দুঃখ-বঞ্চনা-ব্যর্থতা ভুলে সামনে এগোনোর শপথ নেয়। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ- সবখানেই রয়েছে পয়লা বৈশাখের হার না মানা প্রত্যয়। নববর্ষ বাঙালির সর্বজনীন সংস্কৃতির বাহন বলে বিবেচিত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। হালখাতা, বৈশাখী মেলা এবং শহুরে পান্তা-ইলিশের রমরমা- আধুনিকতার এই যুগেও নিজেদের বাঙালি হিসেবে ভাবার সুযোগ করে দেয়। আরবি হিজরি সনের অনুকরণে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের দিনকে বাংলা সনের শুরু বলে ধরা হয়। কালের বিবর্তনে বাংলা সন সর্বজনীন রূপ নিয়েছে। বাঙালি হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পূজাপার্বণও অনুষ্ঠিত হয় বাংলা সনের দিন-তারিখ তিথি অনুসরণে। বাঙালিত্বের চেতনার সঙ্গে পয়লা বৈশাখের সম্পর্ক থাকায় ধর্মান্ধরা নববর্ষকে বরাবরই প্রতিপক্ষ ভেবেছে। হিংসাশ্রয়ী ওই অপশক্তি বোমা হামলা চালিয়ে রমনার অশ্বত্থমূলে ১৬ বছর আগে গণহত্যারও আশ্রয় নেয়। এবারের নববর্ষে আমাদের শপথ হোক- যে আত্মবিকৃত অপশক্তি বাঙালিত্বকে প্রতিপক্ষ ভেবে এ জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করার। একটি সুখী-সমৃদ্ধ জাতি গঠনে নববর্ষের স্বজাত্যবোধ অনুপ্রেরণা জোগাবে- এমনটিই প্রত্যাশিত। বাংলা নববর্ষ সবার জন্য মঙ্গলময় হোক।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর