বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলা

হামলাকারীরা মানুষবেশী দানব

শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলায় তিন শর বেশি মানুষের প্রাণহানি ও চার শর বেশি আহতের ঘটনা বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের পূজারিরা চেহারায় মানুষ হলেও মননে-মগজে তারা যে সাক্ষাৎ দানব, সে সত্য তুলে ধরেছে পৈশাচিক আত্মঘাতী হামলার ঘটনা। মনুষ্যবেশী এসব পিশাচের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ধর্মীয় উপাসনাগার। রক্ষা পায়নি পাঁচতারা হোটেল। রবিবার ছিল খ্রিস্টানদের ইস্টার সানডে। এ ধর্মের প্রবর্তক যীশুখ্রিস্টকে ইহুদিরা ক্রুশে বিদ্ধ করে; সে অবস্থায় মারা গেলে এই মহাপুরুষকে কবর দেওয়া হয়। খ্রিস্টীয় বিশ্বাস অনুযায়ী যীশুখ্রিস্ট এদিন কবর থেকে পুনরুত্থিত হন। সাক্ষাৎ দেন তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে। অহিংসা ও মানবপ্রেমের বাণী যিনি বিলিয়েছেন একাগ্রভাবে তাঁর স্মৃতিমন্ডিত এক পবিত্র দিনকে বিভেদকামী শক্তি নিজেদের হিংসা চরিতার্থ করার দিন হিসেবে বেছে নেয়। বর্বর, অসভ্য ঘৃণিত দানবরা আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে নিমেষে সাত শতাধিক মানুষকে হতাহত করে। তার মধ্যে একজন বাংলাদেশিসহ দুই ডজনের বেশি বিদেশি রয়েছেন। শান্তি ও সৌন্দর্যের দ্বীপ শ্রীলঙ্কাকে মানবসভ্যতার সূতিকাগার বলে ভাবা হয়। ইসলাম, খ্রিস্ট, ইহুদি- তিন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী দুনিয়ার প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.)। শয়তানের কুবুদ্ধিতে প্রলুব্ধ হয়ে তিনি নিষিদ্ধ ফল খেয়ে আল্লাহর বিরাগভাজন হন এবং তাঁকে বেহেশত থেকে পৃথিবীতে ফেলে দেওয়া হয় দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কার আদমশৃঙ্গ নামের পাহাড়চূড়ায়। বিশ্বাস করা হয়, সেখানে প্রথম মানব ও নবী আদম (আ.)-এর পায়ের দাগ রয়েছে। পৃথিবীর আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হিন্দু ও বৌদ্ধদের কাছেও পাহাড়টি পবিত্র। তাদের বিশ্বাস, ভগবান রামের পদচিহ্ন রয়েছে ওই পাহাড়ে। বৌদ্ধরা একই পাহাড়কে ভগবান বুদ্ধের স্মৃতিমন্ডিত বলে ভাবেন। সোজা কথায়, মানবসভ্যতা তথা পৃথিবীর প্রধান পাঁচটি ধর্মীয় সংস্কৃতি একসূত্রে মিলিত হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। মহামানবের স্মৃতিবিজড়িত দিনের মিলনমেলায় কাপুরুষোচিত আত্মঘাতী হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তারা নিজেদের পরিচয় তৎক্ষণাৎ জানাতে সাহস পায়নি। তবে শ্রীলঙ্কা সরকার বলেছে এ ঘটনার সঙ্গে ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত নামের উগ্রবাদের অনুসারী একটি দল জড়িত। তারা ভারতীয় হাইকমিশন ও গির্জায় হামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমন তথ্য পাওয়ার পরও মানবতার শত্রুদের ঠেকাতে ব্যর্থ হয় সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমরা মানবতার শত্রুদের এ কর্মকান্ডকে সর্বোচ্চ ভাষায় নিন্দা জানাই। বন্ধুদেশ শ্রীলঙ্কায় বিভেদ সৃষ্টির যে ষড়যন্ত্র চলছে, তা বানচাল করতে সে দেশের মানুষ সক্ষমতা দেখাবে- আমরা এমনটিই আশা করতে চাই।

সর্বশেষ খবর