শিরোনাম
শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নয়

হাই কোর্টের নির্দেশ প্রশংসনীয়

চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এ-সংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে সরকারের ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালককে পরিপত্র জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চের এ নির্দেশ তাৎপর্যের দাবিদার। অনেকেরই জানা, অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে মানুষের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে পরিগণিত হয়। এ আবিষ্কারের পর রোগ চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার লাখ লাখ রোগীকে সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। কিন্তু এর অপব্যবহার দুনিয়াজুড়ে কালক্রমে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধ ব্যবহারের প্রবণতা প্রবল। ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ফার্মেসি থেকে প্রায় সব ধরনের ওষুধ কেনা যায় সহজে। ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্যও তা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকদের অনেকেই রোগ নিরাময়ে যথেচ্ছভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শপত্র দেন। রোগীদের অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খেয়ালখুশিমতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করেন বাজার থেকে কিনে। নির্দিষ্ট মাত্রায় নির্দিষ্ট সময়জুড়ে ওষুধ ব্যবহার না করায় তা অনেক সময় রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখতে পারে না। পরে অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রা বাড়িয়ে রোগ যেমন সারে না, তেমন নতুন রোগ এবং স্বাস্থ্যগত জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামের ডাক্তার ও ফার্মেসির বিক্রেতারা রোগীদের চাহিদামাফিক অবাধে অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছেন। এসব ওষুধের শতকরা ৭৫ ভাগই সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। সাধারণত সর্দি, জ্বর বা ছোটখাটো অসুস্থতায়ও রোগীদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়। নিজেদের পূর্বধারণা বা ফার্মেসি কর্মীদের পরামর্শেই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন অধিকাংশ রোগী। তারা ভাবেন, ডাক্তার দেখালে ৫০০-৬০০ টাকা ফি গুনতে হয়, পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন টেস্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে কয়েক হাজার টাকা ব্যয় হয়। ব্যয় বাঁচাতেই অধিকাংশ রোগী চিকিৎসকের বদলে নিজেরাই ওষুধ নির্ধারণ করেন এবং ফার্মেসি কর্মীদের সাহায্য নেন। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য যে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে তা উদ্বেগজনক। হাই কোর্টের নির্দেশ দেশবাসীকে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেবে বলে আশা করা যায়। এ ব্যাপারে ঔষধ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন- এমনটিই প্রত্যাশিত।

সর্বশেষ খবর