দুর্নীতি আর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে, এ কথা আমরা বলে আসছি বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু এসব দেখার দায়িত্ব যাদের তারা ‘কানে দিয়েছি তুলো আর পিঠে বেঁধেছি কুলো’ প্রবচনকে অনুসরণীয় ভেবে সংবাদমাধ্যমের সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আশার কথা, শেষ পর্যন্ত কান থেকে তুলো সরানোর সামর্থ্যরে প্রকাশ ঘটিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আরব্য রজনির থিপ অব বাগদাদের সমগোত্রীয় যারা বিমানের আসর জমিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এম মোসাদ্দিক আহমেদকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বিমানের বোর্ডসভায় নেওয়া হয় এ সিদ্ধান্ত। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিমানের পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন্সকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ টানা তৃতীয় মেয়াদে তিন বছর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩০ মে। মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস আগে তাকে পদ থেকে সরে যেতে হলো। ১৯৮৩ সালে বিমানের সহকারী ম্যানেজার পদে কাজ শুরু করেন মোসাদ্দিক আহমেদ। ২০১৫ সালে বিমানের পরিচালক পদ থেকে অবসরে যান তিনি। অবসরে যাওয়ার পর ২০১৬ সালের ১ জুন বিমানের এমডি ও সিইও হিসেবে এক বছরের জন্য তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। বিমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে তাকে বার বার চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই। বিমান নামের জাতীয় প্রতিষ্ঠানে এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই সংস্কৃতি চালু ছিল এর জন্মলগ্ন থেকে। অব্যাহতিপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আমলে তা মহিরুহ আকার ধারণ করেছে। বিমানের টিকিট বিক্রি, কার্গোসহ নানা দুর্নীতির হোতাদের রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। ৪১২ কোটি টাকা লুটপাটের দায়ে দুই শীর্ষ কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে অ্যাডমিন শাখা থেকে ফাইল পাঠানো হলেও তিনি চার্জশিট দিতে গড়িমসি করেন। বিমানকে সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে শুধু ব্যবস্থাপনা পরিচালক নয়, দুর্নীতির সব হোতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে বিমানের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ সৎসাহসের পরিচয় দেবেন- এমনটিই প্রত্যাশিত।