শনিবার, ৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

চাঁদ দেখা নিয়ে বিতর্কের অবসান হোক

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

চাঁদ দেখা নিয়ে বিতর্কের অবসান হোক

বাংলাদেশে নতুন চাঁদ দেখার বিষয়ে বিতর্ক বহুদিনের। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে রোজা ও হজ অন্যতম। এগুলো হিজরি সনের নির্ধারিত মাস ও তারিখে পালন করা হয়। আর হিজরি মাস গণনা করা হয় চাঁদ দেখে। মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুই ঈদ, লাইলাতুল কদর, শবেবরাত ও আশুরার তারিখ নির্ধারিত হয় চাঁদ দেখার মাধ্যমে। ইসলামের বিধান মোতাবেক এসব গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হয় হিজরি সনের মাসের হিসাবে। হিজরি সন চান্দ্র বর্ষপঞ্জিনির্ভর। নতুন চাঁদ দেখা চান্দ্র বর্ষপঞ্জির মাস ও তারিখ নির্ধারিত হয়। তাই নতুন চাঁদ দেখা মুসলমানদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে নতুন চাঁদ দেখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার দায়িত্ব জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের চাঁদ দেখা নিয়ে প্রতি বছরই বিতর্কের সৃষ্টি হয়। আরববিশ্ব ও বাংলাদেশের পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ যেদিন রমজানের নতুন চাঁদ দেখে রোজা শুরু করে, বাংলাদেশ প্রতি বছর তার এক দিন পর রমজানের চাঁদ দেখে রোজা রাখে। সে মোতাবেক প্রায় সব মুসলিম দেশের এক দিন পর বাংলাদেশে ঈদ উদ্যাপন করা হয় (যদিও বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে মিলিয়ে এক দিন আগে ঈদ উদ্্যাপন করা হয়)। ঈদ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব। ইসলামী বিধিবিধান অনুযায়ী ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা এ দুই দিনে রোজা রাখা হারাম। এ বিষয়ে বিভিন্ন হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এ ব্যাপারে ধর্মীয় নেতা বা ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই। তাহলে জনমনে প্রশ্ন জাগে- আরববিশ্বসহ অন্য প্রায় সব দেশের মুসলমানরা যেদিন ঈদ উদ্‌যাপন করে, বাংলাদেশের মুসলমানরা সেদিন রোজা রেখে পাপ করছে কিনা?

রমজানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত ‘লাইলাতুল কদর’। এ রাতকে খোঁজ করতে রোজার তারিখ নির্ধারণে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। রমজানের শুরুটা এক দিন তফাত হওয়ায় বাংলাদেশে যেদিন বেজোড় রাত হয়, আরববিশ্বসহ প্রায় সব মুসলিম দেশে ওইদিন জোড় রাত। বেশির ভাগ হাদিসে রমজানের শেষ ১০ দিনে বেজোড় রাতকে ‘লাইলাতুল কদর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে মোতাবেক ২৬ রমজানের দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ রমজান রাতকে সব দেশে গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। তারাবি নামাজে কোরআন খতমসহ সারা রাত ইমানদার মুসলমানরা ইবাদতে অতিবাহিত করে। কিন্তু রমজান একই দিনে শুরু না হওয়ায় মুসলিম বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ বাংলাদেশ থেকে এক দিন আগে (অর্থাৎ আগের রাতে) বরকতময় লাইলাতুল কদরকে খোঁজ করে। মুসলমানদের সবার ধর্মবিশ্বাস এই যে, আল কোরআন রমজানের শেষ সপ্তাহ বা শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে নাজিল হয়েছিল। সে কারণেই মুসলমানরা এ বরকতময় রাতে হাজার মাসের সমান সওয়াব হাসিলের জন্য ইবাদতে মশগুল থাকে। আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন এক রাতে মক্কায় অবস্থানকালে নবী করিম (সা.)-এর কাছে প্রথম নাজিল করা হয়েছিল। দুই রাতে যে কোরআন শরিফ প্রথম নাজিল হয়নি, তার জন্য কোনো তথ্য বা তত্ত্ব প্রয়োজন নেই। তাহলে এই পবিত্র বরকতময় রাত আমাদের ও অন্যদের মধ্যে কাদের সঠিকভাবে পালনের সৌভাগ্য হলো, সেই বিতর্কের সন্দেহাতীত কোনো ফয়সালা আজ পর্যন্ত হয়নি।

ঈদের দিনে (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) রোজা রাখা যে হারাম তা বহু হাদিসে উল্লেখ আছে। হজরত সাইদ আল খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল ফিতর এবং আল-নাহারের দিনে রোজা রাখা নিষেধ (হারাম)’ (বুখারি, মুসলিম)। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) দুই ঈদে রোজা রাখা নিষিদ্ধ করেছেন। (মালিক)। ঈদুল আজহা জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ আল তাশরিকের দিনগুলোয় রসুলুল্লাহ (সা.) রোজা রাখা হারাম করেছেন। (মুসলিম ও আবু দাউদ)। আরও অনেক হাদিসে দুই ঈদে রোজা রাখাকে নিষিদ্ধ করার অকাট্য দলিল রয়েছে। ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেমসামজের কেউ এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন না। সাম্প্রতিককালের ইসলামী চিন্তাবিদ (Scholar) ড. জাকির নায়েক যেসব দিনে রোজা রাখা হারাম বলে মতামত দিয়েছেন, তার মধ্যে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনকে প্রথমে উল্লেখ করেছেন। এ ক্ষেত্রে অনেকের মনে সন্দেহ- এ দুই ঈদের প্রকৃত তারিখ কোনটি। আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে, উভয় ঈদ আরববিশ্বসহ প্রায় সব মুসলিম দেশ যেদিন পালন করে, তার এক দিন পর আমরা পালন করি।

আরববিশ্বসহ অন্যান্য দেশে ঈদ উদ্‌যাপন যদি সঠিক তারিখে হয়, তাহলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিশেষ করে ঈদুল ফিতর উদ্যাপনকালে বাংলাদেশের মুসলমানরা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে থাকে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশে মুসলমানরা দেখতে পায়, যেদিন আরববিশ্বসহ প্রায় সব মুসলিম দেশ ঈদুল ফিতর উদ্্যাপন করছে, তখন বাংলাদেশের মুসলমানরা রোজা পালন করছে। এ ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তির যৌক্তিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণকে  সমন্বিত করে বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে বিদ্যমান এই বিভ্রান্তির অবসান হওয়া প্রয়োজন।

রোজার মাসে সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য ‘লাইলাতুল কদর’ একটি কল্যাণকর, বরকতময় ও মহিমান্বিত রাত হিসেবে বিবেচিত। এই রাত এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, আল্লাহতায়ালা আল কোরআনে দুটি আয়াতে এ রাত সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিবরণ দিয়েছেন। সূরা কদরের ১ থেকে ৫ আয়াত পর্যন্ত সম্পূর্ণ সূরায় লাইলাতুল কদরের বর্ণনা দিয়েছেন। এ সূরায় আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আমি এই কোরআন নাজিল করেছি মহিমান্বিত এক রাতে। মহিমান্বিত রাতটি হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ কোরআন এক রাতে প্রথম নাজিল করেছেন এবং সে রাত ফজরের উদয় পর্যন্ত (সে রাত শান্তিময় ও নিরাপদ) নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। সূরা দুখানের ৩ ও ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি এক কল্যাণময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি এক সতর্ককারী। এ রজনিতে প্রত্যেক হেকমতপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা হয়।’ কোরআনের বাণী ও হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে  কোরআন নাযিল হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতেকাফে বসতেন এবং বলতেন তোমরা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ ১০ দিনে খোঁজ কর। বুখারি। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তা (লাইলাতুল কদর) শেষ ১০ দিনে আছে।’ (বুখারি)। হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানাতে বেরিয়ে এলেন। এমন সময় দুজন মুসলমান কলহে লিপ্ত ছিল। তখন তিনি বললেন, আমি বের হয়েছিলাম তোমাদের লাইলাতুল কদরের সঠিক তারিখ সম্পর্কে খবর দেওয়ার জন্য; কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি ঝগড়ায় লিপ্ত হলো। সম্ভবত এর মধ্যে তোমাদের কল্যাণ নিহিত ছিল। অতএব তোমরা লাইলাতুল কদর (শেষ ১০ রাতের) নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তালাশ কর।’ অন্য একটি হাদিস হজরত আবু সালামাহ থেকে বর্ণিত, (তিনি তার বন্ধু হজরত আবু সাইদ (রা.) থেকে জানতে পেরেছেন) নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘অতএব তোমরা (রমজানের) শেষ ১০ দিনের বেজোড় তারিখে (অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯) লাইলাতুল কদর তালাশ কর।’ (বুখারি)। এ বিষয়ে বুখারি, মুসলিমসহ অনেক হাদিস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে বিশ্বের সব মুসলমান বরকতময় ও হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল কদর অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে। আর বাংলাদেশের মুসলমানরা অন্য দিনে বরকতময় রাতের খোঁজ করে! কোনটা সঠিক তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।

বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য চাঁদ দেখার বিষয়টি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন চাঁদ দেখা এবং সে মোতাবেক হিজরি মাস গণনা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ওপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। কমিটি প্রতি বছর রমজানের চাঁদ আরববিশ্বসহ প্রায় সব দেশের এক দিন পরে দেখতে পায়। এবারে চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক শাবানের চাঁদ দেখা গেছে দুই দিন পর। সে হিসেবে বাংলাদেশের মুসলমানরা আরববিশ্বসহ অন্যান্য দেশের মুসলমানদের দুই দিন পর শবেবরাত উদ্যাপন করেছে। রমজান কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হবে। শাবানের হিসাবে আরববিশ্বসহ অন্যান্য দেশের দুই দিন পর বাংলাদেশে রোজার মাস শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের এক দিন পর রমজানের চাঁদ দেখা যাবে বলে আমার বিশ্বাস। তার পরও প্রশ্ন থাকবে, আরববিশ্বসহ প্রায় সব মুসলিম রাষ্ট্রে এক দিনে চাঁদ দেখলে বাংলাদেশ কেন পরদিন দেখবে? পৃথিবী একটি, চাঁদও একটি। আমাদের জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির যুক্তি, রসুলুল্লাহ (সা.) চাঁদ দেখে রোজা রাখা এবং রোজা ভাঙার কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে যত হাদিস আছে, তাতে একই রকম মতামত পাওয়া যায়।

সব দিক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে আমরা অন্যান্য দেশের এক দিন পর নতুন চাঁদ দেখতে পাই। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আরববিশ্বে বাংলাদেশের ৩ ঘণ্টা পর সূর্যাস্ত হয়। সেজন্য ৩ ঘণ্টা পর আরববিশ্ব নতুন চাঁদ দেখতে পেলেও সময়ের ব্যবধানের কারণে বাংলাদেশে তা দেখতে পাওয়া যায় না। এ যুক্তি যদি ধরে নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের ১ ঘণ্টা আগে ইন্দোনেশিয়া ও ২ ঘণ্টা আগে মালয়েশিয়ায় সূর্যাস্ত হওয়ায় তারাও নতুন চাঁদ দেখার কথা নয়। বাংলাদেশে সময়ের ব্যবধানে নতুন চাঁদ দেখা না গেলে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কীভাবে দেখতে পারে? বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতি বছরই দেখা যায় আরববিশ্বে যেদিন নতুন হিজরি মাস শুরু করে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সেই পঞ্জিকা অনুসরণ করে। আরববিশ্বের সঙ্গে একাত্ম হয়ে রোজা রাখে ঈদ এবং লাইলাতুল কদরের রাত উদ্‌যাপন করে। এ দুটি মুসলিম দেশ আরববিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হিজরি মাস কেন শুরু ও শেষ করে, তার নিশ্চয়ই গ্রহণযোগ্য যুক্তি আছে। বাংলাদেশে এ দুই দেশের যুক্তিগুলো পরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে।

নতুন চাঁদ দেখা নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে ‘অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি)’-এর উদ্যোগে ধর্মীয় পন্ডিত ও নামকরা আলেমরা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, একটি মুসলিম দেশে চাঁদ দেখা গেলে অন্যান্য দেশেও তা মানা হবে।

২০১৬ সালের মে মাসে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল হিজরি ক্যালেন্ডার ইউনিয়ন কংগ্রেস’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের মধ্যে যে বিভক্তি রয়েছে তা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সম্মেলনে সবাই একমত না হলেও বেশির ভাগ প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞ একটি হিজরি বর্ষপঞ্জির পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। রসুলুল্লাহ (সা.) শুধু আরব দেশের জন্য প্রেরিত নবী নন। আল্লাহতায়ালা  তাকে সারা বিশ্বের জন্য নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। ১৪০০ আগে পুরো বিশ্ব আজকের মতো তৎক্ষণাৎ ও ব্যাপক যোগাযোগের আওতায় ছিল না। তাই বিশ্বের কোনো দেশে চাঁদ দেখা গেলে তা বিশ্বের অন্য স্থানের জনগণের জানার সুযোগ ছিল না। জ্যোতির্বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ বিজ্ঞান আজ অনেক উন্নত ও বিকশিত। চাঁদ দেখা নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিতর্কের অবসানকল্পে বিজ্ঞানের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আল কোরআনে ৭৫০টির অধিক আয়াতে বিজ্ঞান বিষয়ে দিকনির্দেশনা আছে। সূরা ইয়াসিনের দ্বিতীয় আয়াতের বাংলা তরজমায় কেউ লিখেছেন, ‘হেকমতপূর্ণ কোরআনের শপথ’, কেউ লিখেছেন, ‘শপথ এই বিজ্ঞানময় কোরআনের’। সূরা আলে ইমরানের ১৯০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্য নিদর্শন আছে।’ ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, কোরআনের আলোকে মুসলমানরা বৈজ্ঞানিক গবেষণা শুরু করেন। মুসলিম শাসক আল মামুনের রাজত্বকালে আকাশতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী আবুল হাসান নবম শতাব্দীতে দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পথ উন্মুক্ত করেন। দশম শতাব্দীতে বিজ্ঞানী আল বাত্তানি সৌরম-লের গতি চান্দ্রমাসের সঠিক গণনা, চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের তথ্যাদি নির্ণয় করে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন। বর্তমানে বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগে ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতির যুগে যখন মানুষ চাঁদে যাচ্ছে, মঙ্গলগ্রহে বসবাসের স্বপ্ন দেখছে, ব্ল্যাকহোলের ছবি মানুষের চোখের সামনে তুলে ধরছে এবং বাংলাদেশের স্যাটেলাইট মহাকাশে অবস্থান করছে, সেই সময়ে নতুন চাঁদ দেখা নিয়ে যে বিতর্ক বিদ্যমান, এর অবসান কি সত্যি অসম্ভব? সামনে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি রমজানের চাঁদ দেখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। ইসলামের সব দলিলের আলোকে ওআইসিসহ বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেমের মতামতকে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাহায্য গ্রহণের মাধ্যমে চাঁদ দেখা নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বে যে বিতর্ক রয়েছে তার অবসান হোক, এটাই সবার প্রত্যাশা।

লেখক : সদস্য, জাতীয় স্থায়ী কমিটি-বিএনপি এবং সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ভূতত্ত্ব বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

 

সর্বশেষ খবর