শনিবার, ৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

রমজানের আগমন ও আমাদের করণীয়

মুফতি মিজানুর রহমান সিনিয়র পেশ ইমাম

রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের পসরা নিয়ে মুমিনের দুয়ারে করাঘাত করছে বরকতময় রমজান। মানবিক সেতুবন্ধে নতুন সংযোগ কায়েম করতে মাহে রমজানের আগমন। শাশ্বত দীনের প্রেমময় ছোঁয়ায় ইমানের শামিয়ানা সাজাতে স্বাগত বার্তা নিয়ে আগমন ঘটে প্রতিটি রমজানের। বিশ্বাসের সৌধচূড়ায় হুকুমতে ইলাহির শিলালিপিতে ইমানের কালি দিয়ে জীবনসমৃদ্ধির স্রোতধারাকে গতিশীল ও চিরচলমান রাখার দাবিতে রমজানের অ্যালবাম হয়ে ওঠে চিরসুন্দর ও দৃষ্টিনন্দিত। এতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে বিশ্বপাড়া। কারণ প্রতি বছরের ৩৩০ দিনের শূন্যতা কাটিয়ে রমজানের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ। এ যেন প্রেয়সীর একটু পাগল করা স্পর্শে কাতর হওয়া মাহিনা। রমজান আসে মানুষের বিভেদ ভেঙে দিতে। রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের সৌরভ বিলিয়ে গোটা বিশ্বকে নতুনের ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত করতেই রমজান। মাহে রমজানের সোনালি পরশে আল্লাহ-প্রদত্ত বরকতের প্রভাবে গজবে ইলাহির কোনো নিদর্শন পৃথিবীতে প্রভাব বিস্তার করে না। রমজানের ভূমিকায় ঘরে ঘরে পড়ে যায় ইবাদতের নির্মল আবহ। শহর-নগরের পুরো এলাকা আর গ্রামগঞ্জের পাড়ামহল্লাসহ সর্বত্রই বিস্তার করে ভিন্ন আমেজ। তিনি তো (আল্লাহতায়ালা) বলেছেন, ‘রমজানের রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজ হাতে এর প্রতিদান দেব।’ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের আগে সাহাবায়ে কিরামকে জড়ো করে একটি খুতবা প্রদান করেন, ‘হে মানবসকল! তোমাদের কাছে সমাগত এক মহান মাস, তাতে রয়েছে এমন এক রাত যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। রব্বুুল আলামিন এ মাসে রোজাকে করেছেন ফরজ আর তারাবিকে করেছেন নফল। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল আদায় করে সে যেন অন্য সময় একটি ফরজ আদায় করল, আর যে ব্যক্তি একটি ফরজ আদায় করল সেজন্য অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায় করল।’ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের আগমনের আগে সাহাবায়ে কিরামকে প্রস্তুত করে নিয়েছেন। রমজানের আগমনে আমাদের দেশসহ আরব দেশসমূহে নানা পদ্ধতিতে এ বরকতময় মাসকে স্বাগত জানানো হয়। তাদের এ স্বাগত জানানোটা তখনই সার্থক হবে যখন রমজান আগমনের আগে নিজেদের পূর্ণ সময়টাকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য ঢেলে সাজিয়ে নেবে। রমজানে অধিক হারে নফল ইবাদত করার চেয়েও নিজেকে সম্পূর্ণরূপে গুনাহ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা বেশি করতে হবে। গুনাহমুক্ত রমজান পালন করার মাঝেই এ মহিমাময় মাসের সার্থকতা নিহিত রযেছে।

এ ছাড়া তওবাকারীর জন্য এ রমজান মাসই গুনাহ মার্জনার মোক্ষম সময়। বিশেষ করে রমজানের শেষ রাতে যখন তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত হয় তখন আল্লাহর রহমতের দরিয়া উত্তাল থাকে। সহি ইবনে খুজাইমা গ্রন্থে একটি দীর্ঘ হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘রমজান মাসে তোমরা চারটি আমল বেশি বেশি করবে। তার মধ্যে দুটি আমল এমন যা করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। সে দুটি হলো- বেশি বেশি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়া এবং আল্লাহর কাছে ইসতিগফার করা অর্থাৎ ক্ষমা চাওয়া। আর দুটি আমল এমন যা আমাদের না করে কোনো উপায় নেই। সে দুটি আমল হলো- আল্লাহর কাছে জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া।’ এ চারটি আমল তো সারা বছরই করা আবশ্যক তবে রমজান মাসে আরও অধিক পরিমাণ করা। এ মাসে আমাদের অধীন যেসব কাজের মানুষ রয়েছে তাদের কাজ হালকা করে দেওয়া; যাতে তারাও পূর্ণতার সঙ্গে এ মাসে ইবাদত করতে পারে। এ প্রসঙ্গে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে তার চাকর-বাকরদের কাজের বোঝা হালকা করে দেবে, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন।’ আমাদের কর্তব্য আল্লাহর এ অনুগ্রহের মূল্যায়নের চেষ্টা করা, এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া ও ইবাদত-বন্দেগিসহ সব কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকা। সহি নিয়তে রোজা পালনের সঙ্গে সবসময় দোয়া, তাসবি, কোরআন তিলাওয়াত থাকতে হবে। আল্লাহ এ পবিত্র মাসের সব কল্যাণ আমাদের দান করুন।

 

সর্বশেষ খবর