রবিবার, ৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

মাওলানা মাহমুদুল হক জালীস

প্রত্যেক মুসলমানের প্রতি ইমান আনার পরই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের। আর জামাতে নামাজ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আবার কেউ কেউ একে ওয়াজিবও বলেছেন।

হাদিসে জামাতে নামাজের প্রতি বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘জামাতের নামাজ একাকী নামাজের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি মর্যাদা রাখে।’ বুখারি, মুসলিম।

একদা কোনো এক নামাজে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু লোককে পেলেন না। তখন তিনি বললেন, ‘আমার ইচ্ছা হয়, কাউকে কাঠখড়ি আনতে বলি। তারপর আজান দিতে বলি। এরপর কাউকে নামাজ পড়াতে বলি। অতঃপর যারা জামাতে আসে না, আমি তাদের কাছে যাই ও কাঠখড়ি জ্বালিয়ে তাদেরসহ বাড়িঘর পুড়িয়ে দিই।’ বুখারি, মুসলিম।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশা ও ফজরের জামাতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এ দুই সময়ে মানুষ সাধারণত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায় ও বিশ্রাম করে। ফলে এ জামাত দুটিতে যথেষ্ট অবহেলা ও গাফিলতি হয়ে থাকে। এজন্য হাদিসে এর প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা হয়েছে।

হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ফজরের নামাজ পড়িয়েছেন। সালাম ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তারপর আরেকজনের নাম নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তখন তিনি বললেন, এ দুই নামাজ (অর্থাৎ এশা ও ফজর) মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন। তোমরা যদি জানতে যে এ দুই নামাজে কী পরিমাণ সওয়াব নিহিত রয়েছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও জামাতে আসতে।’ আবু দাউদ।

সুন্নত নামাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত। হাদিসে এর প্রভূত ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, যা অন্য সুন্নতের ক্ষেত্রে হয়নি।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’ মুসলিম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করলেও তোমরা এ দুই রাকাত কখনো ত্যাগ করো না।’ আবু দাউদ।

কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, বহু মুসলমান নামাজই পড়ে না। আর যারা নামাজি তাদের মধ্যে অনেকে ফরজ নামাজ নিয়মিত পড়তে পারে না। যারা নিয়মিত পড়ে তার মধ্যেও অনেকে জামাতে শরিক হতে পারে না। আবার দেখা যায় অনেক মুসলিম ভাই ও বোন আছে, যারা সুন্নত নামাজের প্রতি তেমন গুরুত্ব দেয় না। শুধু ফরজ পড়ে ক্ষান্ত  থাকে। কিন্তু অনেকেরই অজানা ফরজ নামাজের পাশাপাশি সুন্নত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে তার আমলগুলোর মধ্যে যে আমলের হিসাব সবার আগে নেওয়া হবে, তা হলো নামাজ। নামাজ ঠিক হলে সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে। নচেৎ (নামাজ ঠিক না হলে) ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং হিসাবের সময় ফরজ নামাজে কোনো কমতি দেখা গেলে আল্লাহ ফেরেশতাদের উদ্দেশে বলবেন, দেখো, আমার বান্দার কোনো নফল (নামাজ) আছে কিনা। অতএব তার নফল নামাজ দ্বারা ফরজ নামাজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অতঃপর আরও সব আমলের হিসাব অনুরূপভাবে গ্রহণ করা হবে।’ আবু দাউদ।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সব নামাজ সময়মতো আদায় করার তাওফিক দান করুক।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর