বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

মানবজাতির ওপর আল্লাহতায়ালার নেয়ামত

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

মানবজাতির ওপর আল্লাহতায়ালার নেয়ামত

আল কোরআনে আল্লাহ্তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) আসমান-জমিনকে সঠিকভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের (মানুষের) আকৃতিকে সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে উত্তম করে গড়েছেন এবং তাঁর কাছেই শেষকালে ফিরে যেতে হবে।’ সূরা তাগাবুন, আয়াত ৩। উপরোক্ত আয়াতের বক্তব্যের সঙ্গে মানুষের অবয়বের কত নিখুঁত মিল। মানুষের মতো এত সুন্দর গঠনে আল্লাহ তাঁর একটি মাখলুককেও সৃষ্টি করেননি। মানুষ ছাড়া সব মাখলুককেই আল্লাহ ‘কুন’ শব্দ দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। শুধু মানুষকেই তিনি নিজ কুদরতি হাতে মাটিকে খামির করে তাতে নিজের কুদরতের প্রতিফলন ঘটিয়ে সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন এককভাবে। এর জন্য উচিত ও কর্তব্য যে, বান্দা সর্বক্ষণ আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে। রসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের জন্য সর্বক্ষণ শুকরিয়া আদায় করার আদর্শই রেখে গেছেন। দেখুন! মানবজাতি কত অকৃতজ্ঞ। তারা সর্বক্ষণ আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত ভোগ করে তাঁর শুকরিয়া আদায় না করে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে ব্যস্ত। অথচ তারা চিন্তা করে না যে এক গ্লাস পানি পান করার ক্ষমতাও শয়তান রাখে না। বরং সে আল্লাহর দেওয়া শক্তিতে সামর্থ্যবান হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে মানবজাতির গাফিলতি ও উদাসীনতার একমাত্র কারণ হলো উপলব্ধির অভাব ও চিন্তার দৈন্য। সৃষ্টি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তাই মানুষকে মুক্তি দিতে পারে। মানুষের বাইরের চোখ দুটি খোলা থাকলেও তাদের অন্তর চোখ অন্ধ। তাই তারা প্রকাশ্য বস্তুই শুধু দেখতে পায়, কিন্তু তার রহস্য অনুধাবন করতে পারো না। মানবজাতি যদি নিজের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করে তাহলে তার সামনে জ্ঞানের বিশাল দ্বার খুলে যাবে। দেখুন! মানুষ একই মুখে পানি পান করে আবার খাদ্যও গ্রহণ করে, হলকুমের নিচে নামার পর সেগুলো পৃথক করে কে? তারা প্রস্রাব করে পানি, পায়খানা করে মল, পানি-মল একসঙ্গে কেন নির্গত হয় না? কে এই পৃথক্করণের প্রক্রিয়া তাদের মাঝে সৃষ্টি করে দিলেন? এক সেকেন্ড সেই শ্বাস-প্রশ্বাস না চললে মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অনন্তকাল ধরে সেই শ্বাস-প্রশ্বাস আসা-যাওয়া করছে অথচ কখনই তা বন্ধ হলো না আল্লাহর হুকুম ছাড়া, মানুষের ভিতর এই মেশিন কে স্থাপন করল?

আরও দেখুন! মানুষের ভিতর পঞ্চেন্দ্রিয় কে সংযোজন করল? যার সাহায্যে তারা ভালোমন্দ স্বাদ গ্রহণ করে, সুঘ্রাণ বা সুগন্ধ অনুভব করে, বিভিন্ন প্রকার বাক্য ও শব্দ শ্রবণ করে, আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি দর্শন করে, শব্দমালা গঠন করে মনের ভাব প্রকাশ করে, বায়ু গ্রহণ করে এবং ত্যাগ করে। সব প্রশ্নের উত্তর একটাই- তা হলো সবকিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ রব্বুল আলামিন।

মানুষের চোখ দুটি যদি না থাকত তাহলে সে বঞ্চিত হতো দর্শন থেকে। কান যদি বধির হতো সে বঞ্চিত হতো শ্রবণ থেকে। জিব যদি না থাকত সে বাক্য উচ্চারণের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারত না। নাক না থাকলে সে শ্বাস-প্রশ্বাস কীভাবে নিত? এমনিভাবে প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মানবজাতিকে সাহায্য করছে সুন্দরভাবে জীবনযাপনের কাজে। আর এ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যিনি দান করলেন সেই মহাপ্রভু আল্লাহকে মানবজাতি ভুলে বসে আছে। তারা দাবি করে, আমি মুসলমান, ইসলাম আমার ধর্ম, নামাজ-রোজা না করলেও ইমান আমার ঠিক আছে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আমার অগাধ। এ ধরনের লোকদের পরিচয় কী হতে পারে পাঠক তা আপনিই বলুন? অথচ জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামত প্রকৃত ইমানদারদের জন্য প্রস্তুত আছে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং যে কেউ তোমাদের মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ মেনে চলবে এবং নেক কাজ করবে, তাকে আমি দেব এবং তার জন্য আমি বেহেশতে উত্তম আহার প্রস্তুত করে রেখেছি।’ সূরা আহজাব, আয়াত ৩১।

আল্লাহর যেসব বান্দাবান্দি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে বিপথে পদচারণ করে আখেরাত হারাতে বসেছে তাদের প্রতি দয়াময় আল্লাহ রব্বুল আলামিনের অভয়বাণী-

‘তোমরা যারা নিজেদের জীবনের প্রতি অত্যাচার করেছ, তারা আল্লাহর দয়া থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমুদয় পাপ মাফ করবেন, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ সূরা জুমার, আয়াত ৫৩। অর্থাৎ বান্দা যত পাপই করুক, একবার যদি খাস নিয়তে আল্লাহর দরবারে ক্ষমাভিক্ষা করে, আর তিনি তা কবুল করেন তাহলে তার আর কোনো ভয় নেই। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তার প্রতি অনুগ্রহ করে তার সব পাপকে পুণ্যে পরিণত করে দিতে পারেন।

প্রিয় পাঠক! মানবজাতি এমন দয়ালু মেহেরবান আল্লাহকে ছেড়ে কীসের মোহে শয়তানের তাঁবেদারি করে পরকালের অফুরন্ত নেয়ামত  থেকে বঞ্চিত হতে চলছে? তা কি তারা বোঝে না? নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করছে? তা একমাত্র আল্লাহই জানেন।

হে মানবজাতি! দুনিয়ার অস্থায়ী ভোগ-বিলাস, আমোদ-প্রমোদ পরিত্যাগ করে চিন্তা কর তুমি কে? কোথায় ছিলে, কোথায় এলে, কে তোমাকে পাঠাল এবং কেন পাঠাল? আর বিশাল এ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী? সৃষ্টি সম্পর্কে তুমি যত চিন্তা করবে আল্লাহর পরিচয় ততই তোমার কাছে উন্মুক্ত হতে থাকবে। তখন তুমি মারেফাতের দরজায় পৌঁছে যাবে, দুনিয়া তোমার কাছে তুচ্ছ মনে হবে, আখেরাতের সঞ্চয় সংগ্রহে তুমি ব্যস্ত হয়ে উঠবে, আর এতেই তুমি মুক্তিপ্রাপ্ত হবে ইনশা আল্লাহ।

তাই তো আমাদের উচিত আল্লাহর দানকৃত বিবেক-বুদ্ধি সৎপথে পরিচালিত করা। তখন আমরা হতে পারব আল্লাহর একজন মকবুল বান্দা।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুুফাসসির খতিব ও টিভি উপস্থাপক।

সর্বশেষ খবর