শিরোনাম
শনিবার, ১১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

এ অবক্ষয়ের শেষ কোথায়?

নূরে আলম সিদ্দিকী

এ অবক্ষয়ের শেষ কোথায়?

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা অনেকটাই নীরব, নিথর, নিস্তব্ধ। ঝড় ওঠার পূর্বকালে থমথমে গুমোট পরিবেশ একে বলা যায় না। অলৌকিকভাবে কিছু না ঘটলে সামগ্রিক অব্যবস্থাপনা ও অধিকার হারানোর এ বঞ্চনার বিরুদ্ধে একটা রাজনৈতিক বিস্ফোরণ বা প্রতিবাদে দাবানলের মতো জ্বলে ওঠার কোনো সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আমি গাড়িতে করে গুলশান থেকে ওয়ালসো টাওয়ারে প্রায় প্রতিনিয়তই আসা-যাওয়া করি। গাড়িতে বসে সুশীলসমাজ বা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের মতো চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পরে সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন বা কোনো ধরনের বই-পুস্তক পাঠে নিবিষ্ট থাকি না। বরং অত্যন্ত কৌতূহলী মন নিয়ে একাগ্রচিত্তে রাস্তার পাশের ফুটপাথ দিয়ে অবিশ্রান্ত ধারায় হেঁটে যাওয়া মানুষগুলোর দিকে চেয়ে চেয়ে তাদের অবলোকন করি। বলার অপেক্ষা রাখে না, নানা ধরনের নানা বর্ণ ও গোত্রের বিচিত্র পোশাকে আবালবৃদ্ধবনিতা নিজ নিজ গন্তব্যে বিচিত্র ভঙ্গিমায় হেঁটে যেতে থাকেন। কারও গতি মন্থর, কারও গতি দ্রুত। তাদের কেউ হয়তো গৃহমুখী, আবার কেউ কেউ নানা কর্মের অভিযাত্রী। বিভিন্ন মাত্রার, বিভিন্ন যাত্রার এসব পদচারণের সংমিশ্রণেই ঢাকা মহানগরীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা। সবকিছু সাদামাটা, গতানুগতিক, গা-সওয়া। আজকে সমগ্র দেশটাই যে রাজনৈতিক অধিকার-বিবর্জিত মৌলিক অধিকারশূন্য। তার পরিপ্রেক্ষিতে কারও চোখে-মুখে কোনো উদ্বেগ, ক্লেশ, আশঙ্কা বা ক্ষোভের ছাপ পরিলক্ষিত হয় না। আমাদের যৌবনে আমরা প্রায়শই মিছিল দেখেছি, নিজেরাও মিছিলে দিগন্ত-বিস্তৃত পথ হেঁটেছি। মিছিল থেকে সমুদ্রের গর্জনের মতো স্লোগান শুনেছি, মানুষকে গণসমুদ্রের ফেনিল চূড়ায় ভিসুভিয়াসের মতো জ্বলে উঠতে দেখেছি। আমি নিজেও সে সময়ের অনেক মিছিলে যোগদান করে উদ্বেলিত চিত্তে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে অনেক অগ্নিঝরা স্লোগান তুলেছি। অনেক দাবি আদায়ের আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেওয়ার স্বস্তির স্মৃতিচারণা জীবনসায়াহ্নে এখনো আমার চিত্তকে উদ্বেলিত করে, আমার ভাবনাকে মোহিত করে, হৃদয়কে আপ্লুত করে। কিন্তু বর্তমানের যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, এই যে মৌলিক অধিকার-বিবর্জিত সামাজিক স্থবিরতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, অধিকার-বঞ্চিত মানুষের এ নিস্তব্ধতা কেন জানি না, আমার অনুভূতিটাকেই অনেকখানি দুমড়ে-মুচড়ে দেয়। আমার সমালোচকরা এ নিবন্ধ পাঠ করে হয়তো বলবেন, জীবনের পথযাত্রায় আমার প্রাপ্তির পাল্লাটা অনেকটাই ভারী। আমিও তা অস্বীকার করব না। অর্থ-বিত্ত, দৈনন্দিন জীবনের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া নিয়েই যদি জীবন হতো, তাহলে আমার কোনো ক্ষোভ-দুঃখ, আক্ষেপ থাকত না বা থাকা উচিত হতো না।

কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের চাওয়া-পাওয়া আর প্রাপ্তি-প্রত্যাশাই তো সব নয়। ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে জাতীয় জীবনের একটা আবহ, তার ধরন, বিবেকবান যে কোনো মানুষেরই চিত্তকে প্রভাবিত করে। অধিকার-বিবর্জিত সমাজ তার মনের গভীরে একটি অব্যক্ত বেদনার ব্যূহ রচনা করে। একটা দীপ্তিহীন আগুনের নির্দয় দহনে সব হৃদয়কে তিলে তিলে দগ্ধীভূত করে। আর তা অসহনীয় হয়ে ওঠে যখন এর থেকে বেরিয়ে আসার কোনো প্রতিবাদী কর্মসূচি চোখের সামনে ভেসে ওঠে না বা নিজেকে প্রতিবাদের জ্বলন্ত ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কোনো সুযোগের সন্ধান তারা খুঁজে পায় না।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক প্লেটো-অ্যারিস্টটল থেকে শুরু করে আধুনিক চিন্তার বার্ট্রান্ড রাসেল, হ্যারল্ড জি লাস্কি এমনকি এ উপমহাদেশের অনেক রাষ্ট্র-চিন্তাবিদ বার বার গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করে গেছেন- মানুষ একটি সমাজবদ্ধ জীব। সমাজের অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে তার জীবনের শান্তি-প্রশান্তি অনেকখানি নির্ভরশীল। অবশ্য সর্বকালে সর্বযুগে সমাজে আত্মকেন্দ্রিক অনেক ব্যক্তি থাকেন, যাদের চিন্তার পরিম-ল আত্মকেন্দ্রিকতার বাইরে যেতে পারে না। তারা ব্যক্তিগত প্রাপ্তি-প্রত্যাশার মধ্যেই নিমগ্ন থাকতে ভালোবাসেন। শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত কক্ষের মধ্যে আবর্তিত জীবনে বাইরের জগতের তাপদগ্ধ পরিবেশ তাদের স্পর্শ করে না। এসব ব্যক্তিবর্গ ইতিহাসের বিচারে নিন্দনীয় বিবেচিত হন কিন্তু প্রায়শই ব্যক্তিজীবনের ভোগবিলাস ও ঐশ্বর্য-প্রাচুর্য তাদের পরিতৃপ্ত রাখে।

ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে যেমন সমাজ হয় না, তেমনি রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক জীবনে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার ভাবনা প্রত্যাশিত নয়। সবাইকে নিয়েই সমাজ। সমাজকে নিয়ে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের চরিত্রই ইতিহাসের বিচারে সেই সময়ের অবস্থানের মান নির্দেশ করে। এই আমরাই আমাদের যৌবনে স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধিকার এবং স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে উত্তরণের কারিগর ছিলাম। নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রতিবন্ধকতার বাঁধ ভেঙে স্বাধীনতার লক্ষ্যে একান্ত ব্রতী হয়ে আমরা যেমন সম্মুখের দিকে এগিয়ে গেছি তেমনি গোটা জাতিকেও উদ্বেলিত করতে সক্ষম হয়েছি। সেই উদ্বেলতা শুধু আবেগাশ্রিত ছিল না, বরং আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মসূচিকেন্দ্রিক একটি জাতীয় জাগ্রত মানসিকতার সচল ও সক্রিয় এবং প্রবহমান আন্দোলনের ভিত্তিমূল ছিল। সেখানে মূল্যবোধের অবক্ষয় ছিল না, লক্ষ্য স্থির ছিল, পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় ছিল। ফলে দীর্ঘ পথপরিক্রমণের সব সক্রিয় অভিযাত্রায় সাফল্যের স্বর্ণসৈকতে আমাদের আন্দোলনের তরণিকে আমরা নোঙর করতে পেরেছিলাম।

এ জীবনসায়াহ্নে এসে আমার স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই, কিছু ব্যতিক্রম বাদে গোটা জাতিই যেন এ দীর্ঘ পথপরিক্রমণের পর একটা প্রদীপ্ত স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে এনেও নিতান্ত অনাকাক্সিক্ষতভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। প্রত্যয় ও প্রতীতির ঔজ্জ্বল্য ক্রমান্বয়ে হারাতে লাগল, ব্যক্তিজীবন দুর্নীতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ে নিপতিত হতে লাগল। হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, দুর্নীতি যেন আজ নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ব্যাপকতা এতই বিশাল যে, এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার বা পরিত্রাণের কোনো পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকার-বঞ্চিত মানুষের চারদিকটা যেন প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। কেবল কয়েকজন বন্দী নয়, সমগ্র জাতিটাই যেন আজ অধিকার-বিবর্জিত বাস্তিল দুর্গে বন্দী।

তবে কিছু ভাগ্যবান শুধু এর ব্যতিক্রমই নয়, তারা দেশের শতকরা ৮০ ভাগ সম্পদের মালিক। রাষ্ট্রীয় জীবনে এমন সামাজিক বৈষম্য পাকিস্তানি আমলেও পরিলক্ষিত হয়নি। এর মূল কারণই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদহীন নিস্তব্ধতা। কোনো কৃতিত্বের দাবিদার না হয়েও বলছি, কিছুদিন আগে একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রথম সারির একজন প্রতাপশালী নেতৃত্ব আমাকে জড়িয়ে ধরে তৃতীয় মাত্রায় আমার বক্তব্য এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ পত্রিকাগুলোয় আমার লেখনীর জন্য খুব সাধুবাদ জানালেন। আমি বিস্মিত নয়নে তার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে প্রশ্ন করলাম- আপনারা এত নীরব ও নিশ্চুপ কেন? সংসদে যে ছয়জন নির্বাচিত হয়েছেন তারা শপথ নিচ্ছেন না কেন (পরবর্তীতে তাদের পাঁচজন শপথ নিয়েছেন)? বিএনপি নেতা মলিন ম্লান মুখে আমাকে একটু জড়িয়ে ধরেই বললেন- অবস্থাটা বুঝছেন না, ভাই? প্রতিউত্তরে আমি খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বললাম- পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে গেলে তো আন্দোলন করতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। ষাটের দশকে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আমরা তো আন্দোলন করেছি, শামুকের মতো নিজেদের গুটিয়ে ঘরে বসে থাকিনি। তিনি নির্বিকার চিত্তে ম্লান হেসে বললেন- টুঁশব্দটি করলেই তো গ্রেফতার হতে হয়, রাতারাতি কয়েকটি দুর্নীতি ও নাশকতার মামলা রুজু হয়ে যায়। আপনারা যখন জেল খেটেছেন, আপনাদের রাজবন্দীর সম্মান দেওয়া হতো। যত দূর শুনেছি, তখনকার প্রশাসনের প্রতিটি স্তরের প্রতিটি কর্তাব্যক্তি আপনাদের ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতেন। আর এখন রাজনীতিকদের কোনো সম্মানই নেই। গ্রেফতারের পরপরই দারোগা সাহেবরা ‘শালা বাঞ্চোত’ বলে গালিগালাজ শুরু করেন। সেই গালিগালাজের আওতা থেকে বাপ-মাও ছাড় পান না। থানায় নিয়ে গিয়ে চেয়ার দেওয়া তো দূরে থাক, মাটিতে বসতে বাধ্য করা হয়। তিনি আমাকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন- বুকে হাত দিয়ে বলেন তো, আপনাদের আমলে রাজনীতি করে গ্রেফতার হয়েছেন, জেল খেটেছেন কিন্তু এমন কুৎসিত অসম্মানজনক ব্যবহারের মুখোমুখি কখনো হয়েছেন? সত্যি কথা বলতে কি, তার বক্তব্য শুনে এতটাই বিস্মিত হয়েছিলাম, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে রাজনীতি ও রাজনীতিকের মর্যাদা এ পর্যায়ে নেমে আসবে তা তো কল্পনাই করিনি।

ভাবতেও অবাক লাগে, অনুভূতিটা কুঁকড়ে কেঁদে ওঠে রাজনীতির নির্মলতা, আদর্শের স্বচ্ছতা যেন আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে লাগল। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে তরুণ-তাজা-তপ্ত প্রাণের মধ্যে আদর্শিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত হানাহানি একটা সামাজিক বিপর্যয়ের ঘনঘোর অমানিশার মধ্যে সমাজকে নিপতিত করে ফেলল অনায়াসে। পরাধীনতার অর্গল ভাঙার জন্য যারা বুকের পাঁজর কেটে শাবল বানাতে চেয়েছিল, তাদেরই একটি অংশ রাজনৈতিকভাবে পথভ্রষ্ট হলো, বিভ্রান্তির অন্ধকারে নিপতিত হয়ে ভুল পথে হাঁটা শুরু করল। অন্যদিকে তারুণ্যের একটি বিরাট অংশকে এমনভাবে দুর্নীতির আবর্তে নিক্ষেপ করা হলো যে, সমাজ থেকে মূল্যবোধ অনেকটাই বিলীন হয়ে গেল এবং মূল্যবোধের স্থলে অবক্ষয় সমগ্র সমাজব্যবস্থাকে রাহুর মতো গ্রাস করে ফেলল। মূল্যবোধের এ অবক্ষয়, চারিত্রিক অসততা, দুর্নীতি-দুর্বিচার থেকে আমরা আর বেরিয়ে আসতে পারছি না। এ দুর্নীতি, অবক্ষয়ের মাত্রা কখনো বাড়ল, কখনো কমল কিন্তু দুর্নীতিবিমুক্ত সূর্যস্নাত একটি বিশুদ্ধ রাষ্ট্র ও সমাজের স্বপ্ন অপূর্ণই রয়ে গেল। এ প্রশ্নে বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর একটি ব্যতিক্রমধর্মী দৃষ্টান্ত। দীর্ঘদিনের আন্দোলনের দীর্ঘ পথপরিক্রমণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটি দেশের জন্মের ঊষালগ্ন থেকে দুর্নীতি ও অবক্ষয় আমাদের এতখানি গ্রাস করল যে, আজ পর্যন্ত আমরা একটি রাজনৈতিক পদ্ধতিতে আসতে পারলাম না। মৌলিক অধিকার আমাদের কাছে অধরাই রয়ে গেল। অর্জিত স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ন্যূনতম আত্মত্যাগের কোনো পরিচয়ই আমরা দিতে পারলাম না। রাষ্ট্রটিকে একটি পদ্ধতির মধ্যে আনতে পারলাম না। এ ধরনের ব্যর্থতার দুর্বিষহ যন্ত্রণা বইতে হয়েছে এমন আর কোনো জাতির নাম আমার জানা নেই।

জীবনসায়াহ্নে এসে ক্ষোভ-দুঃখ ব্যথা-বেদনা বক্ষে নিয়ে ভাবী, আমাদের সময়ে তো সামরিক জান্তা দেশ শাসন করত। সাধারণ মানুষকে তো তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করত। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম লীগ নেতারা পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃত্বের বশ্যতা মেনে চলে আত্মতৃপ্তি বোধ করতেন। তার পরও মুজিব ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা যারা মাথা তুলে মেরুদ- খাড়া করে অকুতোভয়ে কথা কলতাম, আমাদের সম্মান ও অবস্থান ছিল ভিন্নমাত্রার। জনগণও আমাদের সমর্থন করত, প্রশাসনও আমাদের সমীহ করত। রাজনীতিবিদ এমনকি রাজবন্দী সবাই ছিল সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র। আর সেটি ছিল বলেই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে জেল-জুলুম আমাদের নিবৃত্ত করতে পারেনি, অবদমিত করতে পারেনি। তখনকার একজন রাজবন্দী জনগণ ও প্রশাসনের কাছে যে শ্রদ্ধা ও সম্মান পেতেন, এখনকার দুয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে কোনো মন্ত্রীও তা ভোগ করার সৌভাগ্য অর্জন করেননি। তাই অনেক সময় একান্ত মুহূর্তে মনে হয়, সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে এসে অনেক গ্লানিকর বেদনাদায়ক পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সযতেœ দূরে রাখতে পেরেছি, এ অপমানের দীপ্তিহীন আগুনের নির্দয় দহনে নিজেকে দগ্ধীভূত হতে হয়নি।

এ নিবন্ধটি লেখার প্রাক্কালে ঘূর্ণিঝড় ফণীর ছোবলে বাংলাদেশ ল-ভ- হওয়ার একটা আশঙ্কার পূর্বাভাস আমরা অবহিত হয়েছিলাম। আল্লাহ আমাদের তার অপরিসীম করুণায় সেই পরিস্থিতিতে পড়তে দেননি বিধায় তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহর এ মেহেরবানিটুকু না পেলে বাংলাদেশের ভাগ্যে কী বিপর্যয় যে জুটত তা একমাত্র তিনিই জানেন। বেদনাহত চিত্তে এ নিবন্ধে আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই- মার্চ এলে, ডিসেম্বর এলে আমরা সেই অগ্নিঝরা দিনগুলো বার বার উল্লেখ করে আত্মপরিতৃপ্তি লাভ করি। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক বেহাল অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় খোঁজার কোনো আগ্রহই প্রদর্শন করি না। রাস্তাঘাট স্থাপনার বিকাশ প্রবৃদ্ধি ও চাকচিক্যে আমরা বিমুগ্ধ ও বিমোহিত হয়ে পড়ি কিন্তু অধিকারবঞ্চিত সর্বহারা। এমনকি একটা গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদ্ধতির প্রচলন করতে পারলাম না। এটা যে আমাদের জন্য কতখানি গ্লানিকর- তাও অনুধাবনের শক্তি যেন হারিয়ে ফেললাম। সত্যিই আমরা দুর্ভাগা দেশের অভাগা নাগরিক। সেই ১৯৬০ সালে যে স্লোগান দিয়ে মিছিল করতাম, অনেক রাজনৈতিক অধিকার আমরা অর্জন করেছিলাম। ক্রমান্বয়ে সেগুলো সব মরীচিকার মতো উবে গেল।

আজকে প্রথমত আল্লাহতায়ালার কাছে ফরিয়াদ, দ্বিতীয়ত সমগ্র জাতির কাছে আমার বিনম্রচিত্তের আকুতি, আসুন দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির প্রবণতাকে ঝেড়ে ফেলে আমরা রাজনৈতিক অধিকার-বিবর্জিত এ দুঃসহ ও অসহনীয় অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সর্বসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ করি।

লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর