শিরোনাম
শনিবার, ১১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান

মুফতি মুহাম্মদ মুহিবুল্লাহিল বাকী, পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব

রমজান একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় মাস। আমাদের প্রতি আল্লাহতায়ালার অসীম অনুগ্রহ যে, তিনি আমাদের রমজানের মতো বরকতময় মাস দান করেছেন। রমজানের এই প্রথম জুমায় আমি রমজান সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান শুরু হওয়ার আগে ২৯ শাবান যে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেছিলেন সে বক্তব্যটি আমি হুবহ উপস্থাপন করে বরকত হাসিল করতে চাই। হজরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন, ‘একবার রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শাবান মাসের শেষ তারিখে ভাষণ দান করলেন এবং বললেন, হে মানবম-লী তোমাদের রহমতের ছায়া দিয়ে আবৃত্ত করেছে একটি মহান পবিত্র মাস, এমন মাস যাতে একটি রাত রয়েছে হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তার রোজাগুলোকে করেছেন তোমাদের ওপর ফরজ এবং তার রাত জাগরণকে করেছেন তোমাদের জন্য নফল। যে ব্যক্তি সে মাসে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করল সে ওই ব্যক্তির সমান হলো যে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি সে মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে ওই ব্যক্তির সমান হলো যে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল, আর এ মাসটি হলো ধৈর্যের মাস আর ধৈর্যের পুরস্কার হলো জান্নাত। এটা সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস এটা সেই মাস যাতে মুমিনের রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়, যে এ মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তা তার জন্য তার পাপমোচনকারী হবে এবং দোজখের আগুন থেকে মুক্তির মাধ্যম হবে। এ ছাড়া তার সওয়াব হবে রোজাদার ব্যক্তির সমান তবে রোজাদারের সওয়াব কম হবে না। আমরা (সাহাবিরা) বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তো এমন সামর্থ্য রাখে না, যার দ্বারা রোজাদারকে ইফতার করাতে পারি। তিনি বললেন, যে রোজাদারকে ইফতার করায় এক চুমুক দুধ দ্বারা অথবা একটি খেজুর দ্বারা অথবা এক চুমুক পানি দ্বারা, আল্লাহতায়ালা তাকেও ওই সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়ায় আল্লাহ তাকে আমার হাউস থেকে পানীয় পান করাবেন যারপর সে তৃষ্ণার্ত হবে না জান্নাতে প্রবেশের আগমুহূর্ত পর্যন্ত। এটা এমন মাস, যার প্রথম দিক রহমত, মাঝের দিক মাগফিরাত আর শেষ দিক হচ্ছে দোজখ থেকে মুক্তি বা নাজাত। আর যে এ মাসে আপন দাস-দাসীর প্রতি কর্মভার লাঘব করে দেবে আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন এবং তাকে দোজখ থেকে মুক্তিদান করবেন।’ বায়হাকি। রমজানের মর্যাদা বর্ণনায় এটি একটি বড় হাদিস। এ হাদিসে রমজানের প্রথম দশককে রহমত, দ্বিতীয় দশককে মাগফিরাত এবং তৃতীয় দশককে নাজাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ সব সময়ের জন্য রহমান, রহমতকারী, আল্লাহর রহমত তো সব সময়ের জন্য বান্দার জন্য উন্মুক্ত। রমজানের প্রথম ১০ দিনকে রহমত বলার অর্থ হলো যতটুকু রহমত অর্জন করতে অন্য মাসে যত কষ্ট করতে হবে এই দিনগুলোয় এর চাইতে কম কষ্টে কম ইবাদতে ততটুকু রহমত অর্জন করা যাবে। কেননা এ মাসে একটি নফল ইবাদত করলে একটি ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায় আর একটি ফরজ ইবাদত করলে ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব পাওয়া যায়, বিভিন্ন উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা অফার দেন একটি কিনলে একটি ফ্রি, অন্যদিকে আল্লাহতায়ালা এ মাসে অফার দিচ্ছেন একটি ফরজ ইবাদত আদায় করলে ৭০টি ফরজ ইবাদতের সওয়াব দান করবেন। তথা একটি কিনলে কমপক্ষে ৬৯টি ফ্রি। আল্লাহর অফার কত মহান তিনি অধিক রহমতকরী হওয়ার কারণে বান্দাদের এই মাসে বেশি রহমতের মাধ্যমে মাফ করে দিয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিয়ে জান্নাতি করার অজুহাত চাচ্ছেন।

একটি হাদিসে আছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা প্রদানের উদ্দেশ্যে মসজিদে তাশরিফ আনলেন। সেদিন সাহাবায়ে কিরাম বিস্ময়কর এক পরিস্থিতি অবলোকন করল। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাদানের উদ্দেশ্যে প্রতি সিঁড়িতে পা রাখার সময় আমিন আমিন বললেন, সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দিলেন, আমি সিঁড়িতে আরোহণ করার সময় পর্যায়ক্রমে হজরত জিবরাইল (আ.) তিন ধরনের ব্যক্তিদের জন্য বদদোয়া করলেন, আমি তার দোয়ার ওপর আমিন বললাম। প্রথম সিঁড়িতে পা রাখার সময় জিবরাইল (আ.) বললেন, ওইসব ব্যক্তি যারা বৃদ্ধ মা-বাবাকে পাওয়ার পর তাদের খেদমত করে পাপ মোচন করতে পারেনি, তারা ধ্বংস হোক। আমি বললাম আমিন। দ্বিতীয় সিঁড়িতে আরোহণ করার সময় বললেন যাদের কাছে আমি নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহর নাম উচ্চারিত হওয়ার পরও দুই ঠোঁট নেড়ে আমার ওপর সালাম পেশ করতে পারল না সে ধ্বংস হোক। আমি বললাম আমিন। তৃতীয় সিঁড়িতে আরোহণের সময় জিবরাইল (আ.) বললেন যারা রমজান পাওয়ার পরও পাপ মোচন করে নিতে পারেনি, তারা ধ্বংস হোক। আমি বললাম আমিন।

সর্বশেষ খবর