রবিবার, ১২ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

মহানবী (সা.) যেভাবে রোজা রাখতেন

মুফতি মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

মহানবী (সা.) যেভাবে রোজা রাখতেন

সর্বকালের সেরা মহামানব মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ (সা.) যেভাবে রোজা পালন করেছেন তার উম্মতদেরও সেভাবেই রোজা পালন করতে হবে। তাই প্রতিটি মুসলমানকে জেনে রাখা দরকার কীভাবে হুজুর (সা.) রোজা পালন করেছেন। রসুল (সা.) রমজানের জন্য দুই মাস আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতেন। রজবের চাঁদ দেখে তিনি বারবার রমজান পর্যন্ত পৌঁছার দোয়া করতেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রজব মাস শুরু হলে রসুল (সা.) এ দোয়া পড়তেন- ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবিও ওয়া শাবান। ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থ- ‘হে আল্লাহ আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (নাসায়ি)। এভাবেই রজবের প্রতিটি দিন রমজানের প্রার্থনায় সিক্ত হতো রসুল ও সাহাবিদের নূরানি চোখগুলো। রমজানের প্রস্তুতির জন্য শাবান থেকেই নফল রোজা শুরু করতেন প্রিয়নবী (সা.)। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রসুল (সা.)-কে শাবান মাস ছাড়া আর কোনো মাসেই এত বেশি নফল রোজা রাখতে দেখিনি। (বুখারি)। তিনি (সা.) সাহাবিদেরও রোজার প্রস্তুতির জন্য উৎসাহ দিতেন। হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) কোনো একজনকে বলছিলেন, হে অমুকের পিতা! তুমি কি শাবান মাসের শেষ দিকে রোজা রাখনি? তিনি বললেন, না। রসুল (সা.) বললেন, তাহলে তুমি রমজানের পরে দুটি রোজা পূর্ণ কর। (বুখারি)। রমজানের ঠিক আগে আগেই রসুল (সা.) রমজানের ফজিলত এবং বরকত সম্পর্কে সাহাবিদের জানিয়ে দিতেন। এ সম্পর্কে অনেকগুলো হাদিসের মধ্যে একটি হাদিস উল্লেখ করছি। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান বরকতময় মাস। এ মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ মাসে এমন একটি মহিমান্বিত রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রষ্ঠ।’ (মুসলিম)। বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় রসুল (সা.) চাঁদ দেখে রোজা শুরু করতেন। হাদিসের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, কেউ এসে তাকে চাঁদের সংবাদ দিলে তিনি তা ঘোষণা করার অনুমতি দিতেন। তিনি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ এবং চাঁদ দেখেই রোজা ছাড়। (বুখারি)। জাঁকজমকহীন অনাড়ম্ব রোজা পালন করতেন রসুল (সা.)। নবীজী (সা.) এর সাহরি ও ইফতার ছিল সাধারণের চেয়েও সাধারণ। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রসুল (সা.) কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ভেজা খেজুর না থাকলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ভেজা কিংবা শুকনো খেজুর কোনোটাই না পেলে কয়েক ঢোক পানিই হতো তাঁর দিয়ে ইফতার।’ (তিরমিজি)। রসুল (সা.) সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করতে পছন্দ করতেন। ইফতারে দেরি করা তিনি পছন্দ করতেন না। তেমনিভাবে রসুল (সা.) এর  সাহরিও ছিল খুব সাধারণ। তিনি (সা.) দেরি করে একেবারে শেষ সময়ে সাহরি খেতেন। সাহরিতে তিনি দুধ ও খেজুর পছন্দ করতেন। সাহরিতে সময় নিয়ে কঠোরতা করা তিনি (সা.) পছন্দ করতেন না। অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজানে রসুল (সা.) এর ইবাদতের পরিমাণ বেড়ে যেত। বুখারির বর্ণনা অনুযায়ী তিনি (সা.) প্রবাহিত বাতাসের মতো দান করতেন। রমজানে রসুল (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে কোরআন শোনাতেন। আবার জিবরাইল (আ.) হজরত (সা.)-কে কোরআন শোনাতেন। রমজানের রাতে তিনি (সা.) খুব কম সময় বিশ্রাম নিয়ে বাকি সময় নফল নামাজে কাটিয়ে দিতেন। নির্ভরযোগ্য হাদিস থেকে জানা যায়, রসুল (সা.) তিন দিন সাহাবিদের নিয়ে ২০ রাকাত সালাতুত তারাবি পড়েছেন। চতুর্থ দিন থেকে তিনি ঘরে আর সাহাবিরা বাইরে নিজেদের মতো নামাজ পড়ত। খলিফা ওমর (রা.) এর সময় জামাতে তারাবি পড়ার প্রচলন হয়। আমাদের দেশে রমজান এলেই তারাবি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। যা মোটেই কাম্য নয়। তারাবি সুন্নত নামাজ। আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হারাম। সমাজে ফেতনা সৃষ্টি করার অধিকার আমাদের কারও নেই।

শেষ ১০ দিন  ইতিকাফ করা রসুল (সা.) এর নিয়মিত সুন্নত ছিল। ইতিকাফে কদরের রাত তালাশ করাই মূল উদ্দেশ্য। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য! শেষ দশকে আমাদের মসজিদগুলো মুসল্লিশূন্য থাকে। রসুল (সা.) শাওয়ালের চাঁদ দেখে রোজা ছাড়তেন। একাধিক হাদিস থেকে জানা যায়, শাওয়ালের পয়লা রাত খুবই  বরকতময়। এ রাতে রসুল এবং সাহাবিরা ইবাদত বন্দেগি করে কাটিয়ে দিতেন। আমাদেরও উচিত ইবাদতময় জীবন গড়ে তোলা।

লেখক : এম ফিল গবেষক, মুফাসসিরে কোরআন, বেতার ও টিভির ইসলামী উপস্থাপক; খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর