মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

খাদ্য ভেজালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

আদালতের নির্দেশনা প্রশংসার দাবিদার

মুনাফার লকলকে জিহ্বা মানবিক মূল্যবোধকে জিম্মি করে ফেলছে। যেসব প্রতিষ্ঠান দেশ-বিদেশে এক নামে পরিচিত বিজ্ঞাপন মাহাত্ম্যের গুণে তাদের কাছেও পণ্যের মানের চেয়ে মুনাফা প্রাধান্য পাচ্ছে বেপরোয়াভাবে। বিএসটিআই’র মান উত্তীর্ণ পরীক্ষায় নামিদামি ৫২টি কোম্পানির পণ্যের অনুত্তীর্ণ হওয়া তারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ। হাই কোর্ট এসব খাদ্যপণ্য বাজার থেকে অপসারণ করে ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ওই সব পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদন প্রকাশের পর একটি রিট আবেদনে গত রবিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চের এ নির্দেশ আশা জাগানিয়া ঘটনা। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে হাই কোর্টের আদেশে। খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করতেও প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আদালত। এ জন্য প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, খাদ্য মানের পরীক্ষা শুধু রোজার মাসেই হওয়া উচিত নয়। সারা বছরই এ অভিযান থাকা উচিত। খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের হলেও জনস্বার্থ বিবেচনায় বিষয়টিতে হস্তক্ষেপের কথা তুলে ধরেছেন হাই কোর্ট। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, যদিও এ বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের আদালতের নয়। এরপরও জনস্বার্থ বিবেচনায় এ বিষয়গুলো আদালত এড়িয়ে যেতে পারে না। খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিটা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত অংশগ্রহণ দরকার। বিএসটিআইর পরীক্ষায় যে ৫২টি খাদ্যপণ্য মানহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে তার সবকটিই নামিদামি কোম্পানির। মানুষের আস্থার কেন্দ্রস্থলে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি মানহীন পণ্য তৈরি করে তবে অন্যদের অবস্থান কোথায় তা সহজেই অনুমেয়। আমরা আশা করব ভেজাল ও মানহীন খাদ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আদালতের নির্দেশনা মেনে চলাকে সরকার তথা প্রশাসন কর্তব্য হিসেবে বেছে নেবে।

সর্বশেষ খবর