শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

সমন্বয়হীনতার শিকার ঢাকা

নগর সরকারের ধারণা এখনো প্রাসঙ্গিক

রাজধানীর নাগরিক ভোগান্তির জন্য দায়ী নগর ব্যবস্থাপনার যাচ্ছেতাই অবস্থা। নাগরিকদের সেবা দেওয়ার জন্য আছে নানা কর্তৃপক্ষ। সেবা খাতের ৫৭টি সংস্থার কাজের সমন্বয় না থাকায় বিড়ম্বনার শিকার হয় সাধারণ মানুষ। রাস্তা সংস্কারের দায়িত্ব যাদের তারা তাদের কাজ সম্পন্ন করার এক মাসের মধ্যে খোঁড়াখুঁড়ির দহরম-মহরম চালায় পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ কিংবা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ। ফলে জনভোগান্তির পাশাপাশি সরকারি অর্থেরও শ্রাদ্ধ হয়। ঢাকা দুনিয়ার অন্যতম বসবাস-অযোগ্য নগরীর অভিধা ধারণ করেছে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কাজের সমন্বয় না থাকার কারণে। নগরজীবনের সার্বিক প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে রাজধানীর রাস্তা, ড্রেন, খাল, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, গণপরিবহন, ট্রাফিকসহ প্রতিটি সেবায় দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে। খালগুলোর কিছু দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন আর বাকিগুলোর দায়িত্বে ওয়াসা। শুষ্ক মৌসুমে খাল খনন কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে আলোচনার তুঙ্গে থাকে খাল খনন। রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার কিছু অংশের দায়িত্বে সিটি করপোরেশন আর কিছু অংশ ওয়াসার। এই ড্রেন নির্মাণ ও সংস্কার নিয়েও চলে টানাপোড়েন। রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলো নির্মাণ করে বিভিন্ন সংস্থা। নির্মাণ শেষে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় না কেউ। সিটি করপোরেশন শহরের রাস্তা ঝাড়ু দেয়, কিন্তু ফ্লাইওভার তাদের তত্ত্বাবধানে না থাকায় সেগুলো পরিষ্কার করার কেউ-ই নেই। মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের অধিকাংশ সড়কবাতিই নষ্ট। রাতের বেলা অন্ধকারে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। দীর্ঘদিন ধরে এ অচলাবস্থা চললেও নজর নেই কারও। অব্যবস্থাপনার কারণেই রাজধানীর রাজপথ ও ফুটপাথের একাংশ হকারদের দখলে। যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তায় পানি ছিটিয়ে ধুলা নিবারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকলেও তা মানার যেন কেউ নেই। ঢাকার বায়ুদূষণে অবদান রাখছে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িগুলো। মশার উৎপাত থেকে পরিত্রাণ পেতে মশা নিধনে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ের বিকল্প নেই। সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের জন্য দুই যুগ আগে নগর সরকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিলেন ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। সমন্বয়হীনতার ইতি ঘটাতে হলে সে পথেই হাঁটতে হবে।

সর্বশেষ খবর