শনিবার, ১৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

আসুন রোজা ভঙ্গের কারণগুলো জেনে নিই

মুফতি মাও. মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

আসুন রোজা ভঙ্গের কারণগুলো জেনে নিই

সিয়াম তথা রোজা রাখা ফরজ। এমন কিছু কাজ আছে যা করলে রোজা ভেঙে যায়। প্রিয় পাঠক! আসুন জেনে নিই রোজা ভঙ্গের কারণগুলো। ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করা : কেউ যদি ইচ্ছা করে কিছু খায় বা পান করে তবে তার রোজা ভেঙে যাবে। ‘একজন সাহাবি রমজানে রোজা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কাফফারা দেওয়ার আদেশ করলেন।’ দারাকুতনি, মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক। ‘ভুলক্রমে খেলে স্মরণ হওয়ামাত্রই খাবার থেকে বিরত হলে রোজা ভাঙবে না।’ কুদুরি। বুখারি মুসলিমসহ সব সহি হাদিসগ্রন্থে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখেও ভুলে কিছু খেয়ে ফেলে বা পান করে ফেলে, তার পরও সে যেন রোজা পূর্ণ করে। কারণ আল্লাহই তাকে আহার করিয়েছেন।’ বুখারি, মুসলিম। ভুলে পানাহার করার পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে খেতে থাকলে কিংবা কেউ বল প্রয়োগ করে কিছু খাওয়ালে রোজা ভেঙে যাবে। সাহরির সময় আছে কিংবা ইফতারির সময় হয়ে গেছে মনে করে পানাহার করার পর যদি জানা যায় যে, প্রকৃতপক্ষে সাহরি কিংবা ইফতারির সময় হয়নি তবে রোজা ভেঙে যাবে। আলী ইবনে হানজালা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, ‘তিনি রোজার মাসে ওমর (রা.)-এর কাছে ছিলেন। তার কাছে পানীয় পেশ করা হলো। উপস্থিতদের কেউ কেউ সূর্য ডুবে গেছে ভেবে তা পান করে ফেললেন। এরপর মুয়াজ্জিন বললেন, হে আমিরুল মুমিনিন! সূর্য এখনো ডোবেনি। তখন ওমর (রা.) বললেন, ‘যারা ইফতারি করে ফেলেছে তারা একটি রোজা কাজা করবে। আর যারা ইফতারি করেনি তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’ মুসান্নিফ ইবনে আবি শাইবা। ‘রোজা রেখে অখাদ্য বস্তু যেমন লোহা, ইটের কণা খেয়ে ফেললেও রোজা ভেঙে যাবে। মিসওয়াক করার সময় দাঁত থেকে বের হওয়া রক্ত গিলে ফেললে, ঘাম কিংবা কুলি করার সময় অনিচ্ছায় পানি গিলে ফেললেও রোজা ভেঙে যাবে। এসব অবস্থায় রোজার কাজা আদায় করলেই চলবে। কাফফারা দিতে হবে না।’ আদদুররুল মুখতার, ইমদাদুল ফতোয়া। ইচ্ছাকৃতভাবে সহবাস করা : রোজা হলো পানাহার ও সহবাস থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিরত থাকা। ওই সময়ের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এ দুটির কোনো একটি করে ফেলে তবে তার রোজা ভেঙে যাবে। ইচ্ছাকৃতভাবে সহবাস কিংবা পানাহার করার কারণে ভেঙে যাওয়া রোজার কাজা ও কাফফারা দুটোই আদায় করতে হবে। কেউ যদি ভুলক্রমে সহবাস করে ফেলে আর স্মরণ হওয়ামাত্রই বিরত হয়ে যায় তবে রোজার কোনো অসুবিধা হবে না। একইভাবে ইচ্ছা করে বীর্যপাত ঘটালেও রোজা ভেঙে যাবে। তবে স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙবে না। কারণ এটি ইচ্ছাকৃত নয়। সহবাসের পর বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের রোজা ভেঙে যাবে। ‘এনাল সেক্স’ করলেও রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। যদিও এটি সর্বাবস্থায় হারাম। একটি দীর্ঘ হাদিসে আছে, ‘এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমি রোজা রেখে স্ত্রীসহবাস করেছি। রসুলুল্লাহ তার ওপর কাফফারা আবশ্যক করেছিলেন।’ বুখারি, তিরমিজি।

ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা : ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা রোজা ভঙ্গের অন্যতম কারণ। কোন কিছুর ঘ্রাণ নিয়ে কিংবা গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করলে রোজা ভেঙে যাবে। কিন্তু এমনিতেই বমি হলে আর রোজা ভাঙবে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘স্বাভাবিকভাবে কারও বমি হলে রোজা কাজা করতে হবে না। কিন্তু কেউ ইচ্ছে করে বমি করলে কাজা করতে হবে।’ (আল বাহরুর রায়েক, খন্ড. ২, পৃষ্ঠা. ২৪৭; আলমুহিতুল বুরহানী, খন্ড. ৩, পৃষ্ঠা. ৩৪৬)।

লেখক : এমফিল গবেষক, মুফাসসিরে কোরআন বেতার ও টিভির ইসলামবিষয়ক উপস্থাপক, খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর