সোমবার, ২০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোজা খোদাভীতি ও মানবতাবোধের শ্রেষ্ঠ দর্শন

মাওলানা মনিরুজ্জামান রাহমানী

রোজা খোদাভীতি ও মানবতাবোধের শ্রেষ্ঠ দর্শন

বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালা মাহে রমজানে রোজা রাখা ফরজ (অপরিহার্য) করে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের বাণী- ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের ওপর রোজা অপরিহার্য করে দেওয়া হয়েছে। যেভাবে অপরিহার্য করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। সম্ভবত তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।’ (সূরা আল বাকারা-১৮৩)।

আল কোরআনে ‘তাকওয়া’ শব্দটি তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

১. ভীতি, ২. আনুগত্য, ৩. পাপ মোচন। এ তিনটি অর্থের সম্মিলিত রূপই তাকওয়া। অর্থাৎ জগৎ স্রষ্টা আল্লাহতায়ালার প্রতি ভয় রেখে তার বিধানের ওপর পূর্ণ আনুগত্যশীল হওয়া এবং যাবতীয় পাপ বর্জন করাই হলো তাকওয়া। আর রোজা ফরজ হওয়ার প্রধান কারণ হলো এ তাকওয়া অর্জন। কেননা, কারও ভিতর আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হলে তার পক্ষে গুনাহের কাজ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার এ কারণটির সঙ্গে যদি অন্য কারণগুলো পর্যালোচনা করি তাহলে সহজেই অনুমেয় হবে, রোজা খোদাভীতি ও মানবতাবোধের শ্রেষ্ঠ দর্শন।

রোজা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্যকে নিয়ন্ত্রণ করে আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনে সহায়তা করে। এ জন্যই আমরা দেখতে পাই, পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মে রোজা বা রোজা জাতীয় উপাসনার নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা রিপুগুলোকে দমন করে খাঁটি পথে অবিচল থাকবে তাদের অগণিত সওয়াব প্রদান করা হবে।’ ( সূরা আল জুমার-১০)। রোজার মাধ্যমে ধৈর্য-সহিষ্ণুতা ও বিনম্র স্বভাবের সৃষ্টি হয়। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার বন্ধ রেখে ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধির মাধ্যমে রোজাদার অনাহারী ব্যক্তির কষ্ট অনুধাবন করতে পারে। যা তাকে গরিবের প্রতি দয়া প্রদর্শনে উৎসাহিত করে। মুমিনদের বৈশিষ্ট্যের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা পবিত্র  কোরআনে বলেন, ‘যারা না দেখে বিশ্বাস করে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং তাদের যে রিজিক দেওয়া হয়েছে তা থেকে ব্যয় করে।’ (সূরা আল বাকারা-০৩)।

রমজান মাসে একই সঙ্গে ধনী-গরিব রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলিম সমাজে সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার জন্ম হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই। অতএব, তোমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক যথাযথভাবে পুনর্গঠিত করে নাও।’ (সূরা আল হুজরত-১০)।

রোজা মানুষের চিরশত্রু শয়তানের হামলা প্রতিহত করতে ঢালের ভূমিকা পালন করে। রসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার সুরক্ষিত দুর্গ বিশেষ।’ (মুসনাদে আহমদ)।

লেখক : ধর্মীয় গবেষক, সম্পাদক, মাসিক বাইতুল্লাহ-ঢাকা।

সর্বশেষ খবর