শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

রমজানে যা যা করণীয়

ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ

রমজান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। আল কোরআন নাজিল হওয়ায় এ মাসের মর্যাদা আরও বেড়ে গেছে। সূরা আল বাকারাহ, আয়াত ১৮৫। এ মাস যে পাবে তার ওপর রোজা পালন করা ফরজ। আর প্রত্যেক রোজাদারের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার। বুখারি। তা ছাড়া রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল কিন্তু তার গুনাহগুলো মাফ করিয়ে নিতে পারল না, তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।’ ইবনে হিব্বান। সুতরাং এ মাসে সতর্কতার সঙ্গে সব বিধান পালনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সফলতার চেষ্টা করা প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমের জন্য জরুরি। এ নিবন্ধে কিছু পন্থা উল্লেখ করা হলো।

নিয়ত শুদ্ধ করুন : ইসলামে প্রত্যেক ভালো কাজের গ্রহণযোগ্যতা এবং তার ওপর ভিত্তি করে পুরস্কার পাওয়া নির্ভর করে নিয়তের ওপর। বুখারি। সুতরাং কেউ যদি রমজান থেকে সত্যিকারের সফলতা লাভ করতে চায় তার প্রাথমিক কাজ হবে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা। প্রত্যেক ইবাদত হবে শুধু আল্লাহর ক্ষমা, করুণা ও খুশি প্রত্যাশা করা।

যত বেশি সম্ভব নিজেকে ইবাদতে সম্পৃক্ত রাখা : ইবাদতের ব্যাপারে আমাদের একটা ভুল ধারণা হলো, শুধু সালাত, সাওম, জাকাত কিংবা মসজিদের ভিতরে কৃত কাজকে ইবাদত মনে করি। এটা ঠিক নয়। বরং একজন মুসলিমের প্রতিটি কাজ যদি তা আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুযায়ী হয় তাহলে তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ আমরা আমাদের চাকরি কিংবা ব্যবসাকে তুলে ধরতে পারি। যদি শরিয়তের বিধান অনুযায়ী হয় তাহলে তাও ইবাদত। অর্থাৎ প্রতিটি কাজ হালাল ও হারাম হিসাব করে সম্পাদন করা। কোরআন তিলাওয়াত এবং এর অর্থ ও ব্যাখ্যা বোঝার চেষ্টা করা : কোরআন সমগ্র জাতির হেদায়েত তথা সঠিক পথ দেখানোর জন্য নাজিল হয়েছে। সূরা আল বাকারাহ, আয়াত ১৮৫। সুতরাং তা শুধু তিলাওয়াত নয় বরং বোঝার চেষ্টা করা আমাদের প্রত্যেকের জন্য জরুরি। আমাদের সমাজে রমজান মাসে অনেকেই কোরআন খতম অর্থাৎ সম্পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত করেন। এটি ভালো কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে তার বাণী বোঝার চেষ্টা করতে হবে। রমজান কোরআন নাজিলের মাস হওয়ায় একে আমরা কাজে লাগাতে পারি। তা ছাড়া অলস সময়গুলোয় আমাদের মুখস্থ আয়তগুলো পাঠ করতে পারি বার বার।

বেশি বেশি জিকির বা আল্লাহকে স্মরণ করা : জিকির সম্পর্কে আমাদের একটা ভুল ধারণা হলো তসবিহ কিংবা হাতের আঙ্গুলের কর গুনে আল্লাহ ও তাঁর সুন্দর নামগুলো কিংবা কলমা পাঠ করাকে বুঝি। এটা ঠিক নয়। জিকিরের অনেক পন্থার মধ্যে এটি একটি। সবচেয়ে কার্যকর জিকির হলো প্রতিটি কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহকে এভাবে স্মরণ রাখা, যে এগুলো তাঁর দেওয়া বিধান অনুযায়ী হচ্ছে কিনা কিংবা এর কারণে আমাকে তাঁর সামনে লজ্জিত হতে হবে কিনা এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হবে কিনা। মসজিদে বেশি বেশি সময় ব্যয় করা : এ দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো মসজিদ। রমজানে আমাদের অফিসের সময় কম থাকে। সুতরাং বাকি সময়ের সর্বোচ্চটুকু মসজিদে থাকার চেষ্টা করা। কারণ এখানে অন্যায় কাজ করার সুযোগ যেমন কম থাকে তেমনি দুনিয়াবি অনেক বিষয় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হয়। তদুপরি রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফে থাকার যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত প্রত্যেক মুসলিমের। এ সময়ের যে কোনো এক বেজোড় রাতে আছে ‘লাইলাতুল কদর’ যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সূরা আল কদর, আয়াত ১। ইতিকাফের মাধ্যমে সে রাত পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

সাহুর ও ইফতারে অন্যদের সম্পৃক্ত করা : রমজানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সাহুর ও ইফতার। সমাজে ‘সেহরি’ হিসেবে যে শব্দ প্রচলন আছে তা ঠিক নয়। হাদিসে ‘সাহুর’ শব্দটি এসেছে যার অর্থ মধ্যরাতে গ্রহণকৃত খাবার। এটিকে ‘সাহরি’ বলা যেতে পারে কিন্তু হাদিসের পরিভাষা হিসেবে ‘সাহুর’ ব্যবহার করা উত্তম। ইফতার ও সাহুরে অন্যদের সম্পৃক্ত করে একসঙ্গে সম্পাদন করার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ রয়েছে। বিশেষ করে কোনো রোজাদারকে ইফতার করালে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায় যোগ হবে কিন্তু রোজাদারের কোনো কমতি হবে না। তিরমিজি। এভাবে আমরা আমাদের সওয়াবকে বহুগুণে বাড়িয়ে নিতে পারি এ মাসে।

রাগ নিয়ন্ত্রণ, ভালো আচরণ ও জবানকে নিয়ন্ত্রণ করা : মানবীয় খারাপ গুণাবলির মধ্যে অন্যতম হলো রাগ। রাগের সময় মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ফলে ওই ব্যক্তির পক্ষে যে কোনো কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে। তা ছাড়া অন্যদের সঙ্গে সদাচরণের পাশাপাশি আমাদের জিবকে এমনসব কথা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি যাতে অন্যরা কষ্ট না পায়। কারণ, এর মাধ্যমে ওই ব্যক্তির ভালো আমলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিম হলো ওই ব্যক্তি যার কথা ও কাজ থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।’ বুখারি। তদুপরি যদি কেউ রোজাদারের সঙ্গে ঝগড়া করতেও চায় তাহলে বলতে হবে, ‘আমি রোজাদার’। বুখারি। আল কোরআনেও আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, ‘পদচারণে মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নিচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’ সূরা লুকমান, আয়াত ১৯।

অন্যকে ক্ষমা করা : ক্ষমা করা মহৎ গুণ। আল্লাহ ও তাঁর রসুলেরও সুন্নত হলো এটি। ক্ষমার মাধ্যমে অন্যের কাছ থেকে দোয়া ও কল্যাণ পাওয়া সম্ভব হয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের কোনো কোনো স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি তোমাদের দুশমন।

অতএব তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকো। যদি মার্জনা কর, উপেক্ষা কর এবং ক্ষমা কর, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।’ সূরা আত তাগাবুন, আয়াত ১৪।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর