শনিবার, ২৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

নামাজ-রোজার তাগিদ দিন সোনামণিদের

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

নামাজ-রোজার তাগিদ দিন সোনামণিদের

শিশুরা বড় হয় বাবা-মাকে দেখে। বাবা-মার আদর্শ-চরিত্র শিশুমনে গভীর দাগ কাটে। বাবা-মা ভালো হলে, নেক্কার হলে, সন্তানও ভালো হয়। নেক সন্তান হয়। বাবা-মা খারাপ হলে সন্তান হয় বখাটে। দেশ ও দশের শত্রু হয়ে মানুষের অভিশাপ কামাই করে। মানুষ বলে, কেমন পরিবার থেকে উঠে এসেছে এই বখাটে ছেলেটি? কি নোংরা ঘরে জš§ নিয়েছিল এই মেয়েটি! আরও কত কটুকথা যে বাবা-মাকে তুলে মানুষ বলে! কোনো বাবা-মাই চান না তার সন্তান বিগড়ে যাক, ভুল পথে এগিয়ে যাক। তার পরও সন্তান বিগড়ে যায়। বাবা-মার অবাধ্য হয়ে বাবা-মাকেই আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয় সন্তান। মানুষও সন্তানের ভুলে বাবা-মাকেই দোষে। বাবা-মার জন্য এর চেয়ে কষ্টের, এর চেয়ে যন্ত্রণার আর কী হতে পারে? সন্তান বখে যাওয়ার পুরো দায় হয়তো বাবা-মার নয়। তবে কিছু দায়িত্ব তো বাবা-মার কাঁধে পড়েই যায়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ঠিক এমনটিই বলেছেন। হাদিসের সারমর্ম হলো, প্রতিটি মানবশিশুই একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিয়ে পৃথিবীর বুকে পা রাখে। কিন্তু চারপাশের পরিবেশ ও বাবা-মার দায়িত্বহীন আচরণ তার সুন্দর ভবিষ্যৎকে অসুন্দর করে দেয়। তাই প্রত্যেক বাবা-মারই উচিত খুব সচেতনভাবে সন্তান পালন করা। চেষ্টা করার পরও যদি সন্তান বখে যায় তার দায়িত্ব বাবা-মার নয়। দূর থেকে মানুষ বাবা-মাকে দোষ দিলেও কিয়ামতের দিন অন্তর্যামী আল্লাহ অবশ্যই বাবা-মাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন না।

সন্তান যেন বখে না যায় আর বাবা-মাকেও যেন আল্লাহর আদালতে আসামি হতে না হয় এজন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ছোট্ট বয়স থেকেই সন্তানকে ধর্মীয় অভ্যাসে গড়ে তোলো। তাহলে বড় হলে সে ধার্মিক এবং বাবা-মার বাধ্য সন্তান হবে।’ আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘সাত বছর হলে সন্তানকে নামাজের উপদেশ দেবে। ১০ বছর হলে নামাজের জন্য শাসন করবে। মনে রাখবে, ছোট বয়সে যে অভ্যাসের ওপর সে গড়ে উঠবে, বড় হলেও সে অভ্যাস রয়ে যাবে।’ মিশকাত। সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য কত কিছুই না আমরা করি। কিন্তু তার সুন্দর আখেরাতের জন্য কোনো প্রচেষ্টা কি আমরা করেছি? ছোট বয়স থেকে ধর্মীয় অভ্যাসে তাকে বড় করার কথা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন। আফসোস! ছোট বয়সে তাকে সবকিছু শেখানো হয় শুধু ধর্মটুকু ছাড়া। তার দেহের চেয়ে বেশি ওজনের ব্যাগ তার কাঁধে উঠিয়ে দিই আমরা। তার চোখ-কান-মস্তিষ্ক নষ্ট করে দেওয়ার যন্ত্র মোবাইল তাদের হাতে তুলে দিই। কিন্তু নামাজ-রোজা এবং ধর্মশিক্ষা তাদের দিতে চাই না। যখনই নামাজ-রোজার প্রশ্ন ওঠে, তখনই বাবা-মারা বলেন, ও তো এখন অনেক ছোট। আরেকটু বড় হলে রোজা-নামাজ শুরু করবে। হায়! সন্তান বড় হয় ঠিকই। কিন্তু নামাজ-রোজা আর শুরু করা হয় না। পরীক্ষায় পাস করার জন্য কত পরিশ্রম করতে বাধ্য করি সন্তানকে। হায়! তার সিকিভাগও যদি আখেরাতের পরীক্ষার জন্য বাধ্য করতাম, তাহলে তার দুনিয়ার জীবন যেমন সুন্দর হতো, আখেরাতের জীবনও আরও বেশি উজ্জ্বল হতো। এই যে রমজান চলছে, ছোট ছোট সন্তানরা বায়না ধরে রোজা রাখার জন্য। আফসোস! বাবা-মা তাদের শখের রোজায় বাদ সাধেন। এভাবে পরিবার থেকেই সে ধর্ম না করার অভ্যাস রপ্ত করে। এ সন্তানই যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠে চাঁদাবাজি করে, টেন্ডারবাজি করে, ধর্মের পথ ভুলে যায়, তখন বাবা-মাই বলে, কী এমন পাপ করলাম, আল্লাহ আমার সন্তানকে নষ্ট করলেন। কোনো পাপ নয়, ছোট বয়সে তাকে ধর্মবিমুখ করার ফল বড় হয়ে সে বাবা-মাকে দেখাচ্ছে। এসব সন্তানই বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। হায়! বাবা-মারা যদি বুঝতেন কত ভালো হতো সমাজ! সন্তান আপনার। তাকে আল্লাহমুখী করে গড়ে তোলার দায়িত্ব আপনারই। রোজার মাসে শিশুদের মনে রোজার জন্য এক ধরনের প্রেম জাগে। অবশ্যই এ প্রেমকে পুঁজি করে সন্তানকে ধর্মকর্মে অভ্যস্ত করানো প্রত্যেক বুদ্ধিমান বাবা-মার কর্তব্য। যারা এ সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে সন্তানের ধর্মকর্মে বাদ সাধেন, তাদের চেয়ে পোড়া কপাল বাবা-মা আর কে আছে? আল্লাহ আমাদের সন্তানদের ধর্মকর্মে, জ্ঞানেগুণে সফল হওয়ার তাওফিক দিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর