ঈদ সামনে রেখে প্রতি বছরই সেমাইয়ের চাহিদা আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। সারা বছর বাজারে যে সেমাই বিক্রি হয় তার প্রায় ৯০ শতাংশই হয় ঈদ মৌসুমে। চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে প্রতি বছরই ঈদ সামনে রেখে দেশজুড়ে সেমাই তৈরির মচ্ছব চলে। চলে নকল ভেজাল সেমাই তৈরির কসরত। কোনো কোনো সেমাই কারখানার পরিবেশ এতই জঘন্য যে তা গা ঘিন ঘিন করার মতো। নোংরা স্যাঁতসেঁতে মেঝের মধ্যে ফেলে রাখা হয় ময়দা। সে ময়দায় পানি দিয়ে পা মাড়িয়ে মন্ড তৈরি করে শ্রমিকরা। গরমে শ্রমিকদের ঘাম মিশছে সেমাইয়ের মন্ডের সঙ্গে। মেঝেতে রাখা মন্ডে পড়ে থাকে মাছি ও বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়। এভাবে মন্ড বা খামির মেশিনে দিয়ে বানানো হচ্ছে চিকন ও লাচ্ছা সেমাই। সেমাইতে মেশানো হচ্ছে কৃত্রিম রং। মেশিনে সেমাই কাটা শেষে খোলা উঠানের মধ্যে ফেলে রাখা হচ্ছে। এভাবে খোলা আকাশের নিচে রাস্তার ধারে রোদে শুকানো হচ্ছে সেমাই। সেমাই শুকালে নিয়ে আসা হচ্ছে ভাজার জন্য। বাইরের শহরগুলোয় শুধু নয়, রাজধানীর পুরান ঢাকা, সায়েদাবাদ এবং কেরানীগঞ্জকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একই ধরনের অসংখ্য সেমাই কারখানা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালিয়ে অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও এমন অভিযানের সংখ্যা খুবই নগণ্য। অসাধু ভেজাল ব্যবসায়ীর দল চকচকে মোড়কে মুড়িয়ে বিএসটিআইয়ের ভুয়া সিল লাগিয়ে নকল-ভেজাল সেমাই তুলে দেয় মানুষের হাতে। ভেজাল খাবার খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে লাখ লাখ মানুষ। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেজাল খাবার খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে গ্যাস্ট্রিক, ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিসসহ বিভিন্ন রোগে। এ ছাড়া এসব খাবারে বিভিন্ন রকমের জীবাণু থাকায় অনেক সময় টাইফয়েড ও প্যারা টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বৃদ্ধ ও শিশুদের নকল-ভেজাল মানহীন খাবারে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। ভেজাল খাবারে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়েন গর্ভবতী মহিলারা। ক্ষতিকর জীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে পৃথিবীতে আসে নবজাতক। নকল-ভেজাল বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি সেমাই জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বড় হুমকি। এ হুমকির মোকাবিলায় সরকারকে কঠোর হতে হবে। ভেঙে দিতে হবে নকল-ভেজালকারীদের বিষদাঁত।