রবিবার, ২৬ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

কৃষির যান্ত্রিকীকরণ

উৎপাদন খরচ কমানোর প্রকৃষ্ট পথ

কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কয়েক বছর ধরে। অলাভজনক হওয়া সত্ত্বেও তারা ধান চাষ করছে আবেগের টানে। কিন্তু মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে ফসল তারা ফলাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে তাতে উৎপাদন খরচ উঠছে না। দেশবাসীর জন্য খাদ্যের জোগান দিলেও কৃষক নিজেরা থাকছে অনাহারে। ধান উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধি এ অভিশপ্ত অবস্থার জন্য দায়ী। চলতি বছর আমনের বাম্পার ফলনের পর বোরো ধানের উৎপাদনও অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। কিন্তু ন্যায্যমূল্য দূরের কথা, ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচও ওঠাতে পারছে না কৃষক। ধান কাটতে জনপ্রতি ২ মণ ধানের দাম দিতে গিয়ে চোখে তারা শর্ষে ফুল দেখছে। ধান চাষ লাভজনক করতে হলে ধান রোপণ ও কাটার ক্ষেত্রে দিনমজুর ব্যবহার না করে যন্ত্র ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। দেশে ধানের মৌসুমে দিনমজুরদের দৈনিক যে মজুরি দিতে হয় তা নবাগত উচ্চশিক্ষিত চাকুরেদের গড় বেতনের চেয়ে অনেক বেশি। যান্ত্রিকভাবে ধান রোপণ ও কাটা শুরু করা গেলে উৎপাদন খরচ অনেকখানিই কমে যাবে। বোরো চাষে মোট খরচের এক-তৃতীয়াংশই ব্যয় হয় পানির পেছনে। ১ কেজি বোরো চাষে ৩-৪ হাজার লিটার পানি লাগে, যা মূলত ভূগর্ভস্থ পানি। নদ-নদী, খাল-বিলের পানি ব্যবহার করে এ খরচ এক-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব। এ ছাড়া বোরোর চাষ কমিয়ে আউশ উৎসাহিত করা হলে গড় ধান উৎপাদন খরচ কমে আসবে। সরকার কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ধান-চাল সংগ্রহ করে। তবে এতে কৃষক কতটা লাভবান হয় তা প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে সরকারের ধরে দেওয়া দাম কৃষকের কাজে আসে না, এর সুফল পায় মিল মালিকরা। ইউনিয়ন পর্যায়ে গুদাম তৈরি করে কৃষকের ধান দু-তিন মাস রাখার ব্যবস্থা করা এবং সে ধানের বিপরীতে ঋণ দিলে কৃষককে আর অর্ধেক দামে ধান বিক্রি করতে হবে না। একসময় বলা হতো, যান্ত্রিকীকরণের ফলে কর্ম হারাবে শ্রমিকরা, এখন তো আর সে সমস্যা নেই। কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হলে যন্ত্রের মূল্য কৃষকের সাধ্যের মধ্যে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ঋণের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। ধানের বাজারব্যবস্থার উন্নয়নেও সরকারকে জুতসই কিছু করতে হবে। কৃষকের কারণেই শত শত বছরের খাদ্য ঘাটতির দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ সুদিন ধরে রাখতে হলে কৃষক যাতে

ধান উৎপাদনে ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর