মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

রহমতের বৃষ্টিতে ভেজার মাস

মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

রহমতের বৃষ্টিতে ভেজার মাস

মাহে রমজান হলো আমাদের জন্য রহমতে ভরপুর একটি পবিত্র মাস। এই রহমত, মাগফিরাত, নাজাত বরকতপূর্ণ মাসে মহান আল্লাহতায়ালা রহমতের দরজাগুলো তাঁর নেক বান্দাদের জন্য খুলে দেন। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলে পাক (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আদম সন্তানের প্রত্যেকটা কাজ তার নিজের জন্য। তবে রোজা ছাড়া। কেননা রোজা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব। আর রোজা হচ্ছে ঢাল  স্বরূপ। কাজেই কেউ যখন রোজা রাখে, তখন সে যেন কোনো অশ্লীল কথা না বলে এবং ঝগড়া-ফাসাদ না করে। কেউ যদি তাকে গাল-মন্দ করে অথবা লড়াই করতে আসে, তবে সে যেন বলে, আমি রোজাদার।’ (বুখারি ও মুসলিম।) মুসলিম শরিফের অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আদম সন্তানের সব কাজের সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়, কিন্তু রোজার কথা ভিন্ন। কেননা রোজা আমারই জন্যই এবং আমিই তার প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম)

রোজা এমন এক বরকতময় ইবাদত, যার সঙ্গে অন্য কোনো ইবাদতেরই তুলনা হয় না। রোজাদারের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে রয়েছে বিশেষ পুরস্কার এবং মর্যাদা। এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যায় হজরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস শরিফ। রসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেছন, ‘আল্লাহর কাছ থেকে মানুষের আমল বা কাজ সাত রকমের। দুই রকমের কাজ এমন, তার দুটো অনিবার্য ফল রয়েছে। আর দুই রকমের কাজ এমন, তার ফল কাজের সমান। আর এক রকমের কাজের দশগুণ সওয়াব রয়েছে। আর এক রকমের কাজের সওয়াব সাতশত গুণ। আর এক রকমের কাজের সওয়াবের পরিমাণ আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না। প্রথম দুটো হলো: যে ব্যক্তি একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদত করে, কাউকে তার সঙ্গে সমকক্ষ করে না এবং এ অবস্থায় আল্লাহর কাছে উপস্থিত হয়, তার জন্য জান্নাত অনিবার্য। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা অবস্থায় তাঁর কাছে উপস্থিত হয়েছে, তার জন্য জাহান্নাম অনিবার্য। আর যে ব্যক্তি কোনো খারাপ কাজ করে সে তার এক গুণ শাস্তি পায়। আর যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ করার ইচ্ছা করে, কিন্তু কাজটি করে না- সে ওই কাজ করার এক গুণ সাওয়াব পায়। আর যে ব্যক্তি ভালো কাজ সম্পাদন করে, সে তার কাজের সাতশত গুণ পর্যন্ত সাওয়াব পায়। আর রোজা আল্লাহর জন্য হয়ে থাকে। এর সওয়াবের পরিমাণ আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেন না। (তাবারানি ও বায়হাকি)

হজরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আর একটি হাদিস থেকে জানা যায়। রসুলে পাক (সা.) বলেছেন, রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আমার প্রতিপালক, একে আমি পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত রেখেছিলাম। কাজেই তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ কবুল কর। আর কোরআন বলবে, আমি একে রাতে আরামের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ কবুল কর। এরপর তাদের দুজনের সুপারিশ কবুল করা হবে। (মুসনাদের আহমাদ ও হাকেম আল মুসতাদরাক)। পবিত্র রমজানের রোজার রয়েছে একটি বিশেষ ফজিলত। রয়েছে এমন এক মর্যাদা যা অতুলনীয়। রমজান হলো সেই রহমত বরকতময় মাস যে মাসে মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের জন্য নাজিল করেছেন মহাগ্রন্থ আল কোরআন। এ মাসেই রয়েছে সেই পুণ্যবান রাত লাইলাতুল কদর। রসুলে পাক (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কদরের রাতে ইমানের সঙ্গে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় ইবাদত করে, নামাজ পড়ে; তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ইমানসহকারে ও আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনাসহকারে রমজানের রোজা রাখে, তারও অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি ও মুসলিম)। পবিত্র রমজান মাসে রোজাদারের জন্য মহান আল্লাহ তার রহমত এবং নিয়ামতের অফুরন্ত ভা-ারের দরজা খুলে দেন। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস থেকে জানা যায়, রসুলে পাক (সা.) বলেছেন, রমজান মাসে আমার উম্মাতকে পাঁচটি বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা আমার পূর্ববর্তী কোনো নবী কিংবা নবীর উম্মতকে দেওয়া হয়নি। প্রথমটি হলো, রমজানের প্রথম রাতে আল্লাহতায়ালা যার দিকে দৃষ্টি দেন, তাকে কখনো শাস্তি দেন না। দ্বিতীয়ত, সন্ধ্যার সময় তাদের মুখ থেকে যে দুর্গন্ধ বের হয়, তা আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। তৃতীয়ত, রমজানের প্রত্যেক দিনে ও রাতে ফেরেশতারা রোজাদারদের জন্য দোয়া করেন। চতুর্থত, আল্লাহতায়ালা তার বেহেশতকে বলেন, তুমি আমার বান্দার জন্য সুসজ্জিত ও প্রস্তুত হও। আমার বান্দারা অচিরেই দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে অব্যাহতি পেয়ে আমার বাড়িতে ও আমার সম্মানজনক আশ্রয়ে এসে বিশ্রাম নেবে। পঞ্চমত, রমজানের শেষ রাতে আল্লাহতায়ালা তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেন। এক ব্যক্তি বলল, এটা কি লাইলাতুল কদর? রসুলে পাক (সা.) বললেন, না, তুমি দেখনি, শ্রমিকরা যখন কাজ শেষ করে, তখনই পারিশ্রমিক পায়? (শুআবুল ইমান)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস শরিফের উল্লেখ করা এখানে আবশ্যক। তিনি বর্ণনা করেন, রসুলে পাক (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান মাস এসেছে। এটা একটা কল্যাণময় মাস। আল্লাহতায়ালা তোমাদের ওপর এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাগুলো খোলা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়, খোদাদ্রোহী শয়তানগুলোকে শেকল পরানো হয়। এ মাসে এমন এক রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে এ মাসের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সে প্রকৃত অর্থে সবকিছু থেকেই বঞ্চিত হয়। (সুনানে নাসায়ি ও শুআবুল ইমান)।

লেখক : এম ফিল গবেষক, মুফাসসিরে কোরআন, বেতার ও টিভির ইসলামী উপস্থাপক; খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর