মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাদের জাকাত দেওয়া উত্তম

হাফেজ মাও. মেরাজুল ইসলাম চাঁদপুরী

ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ হলো জাকাত। জাকাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা। যা মানুষের মাল ও জানকে পবিত্র করে। যা সম্পদকে হালাল করে এবং ব্যক্তিকে সুরক্ষা দেয়। কোরআনে যতবার নামাজের তাগিদ দেওয়া হয়েছে, ততবার জাকাতের কথা বলা হয়েছে। বারবার বলার কারণ হলো, বান্দাকে এর গুরুত্ব বোঝানো। নামাজ যেমন মানুষকে যাবতীয় অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা থেকে বিরত রাখে, ঠিক তেমনি জাকাত ধনী-গরিবের মাঝে বৈষম্য দূর করে। সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে। যদি এই জাকাত সুষ্ঠুভাবে ও নিয়ম-নীতি অনুসারে বণ্টন করা হয়। এখন কাদের ওপর বণ্টন করা হলে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে তাও কোরআন বলে দিয়েছে, জাকাত হলো কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য, এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। সূরা তাওবাহ। আয়াত ৬০। এ আয়াতে প্রথম শব্দ ফকির (যার কিছুই নেই) দ্বিতীয় শব্দ মিসকিন (যার কিছু আছে কিন্তু নেসাব পরিমাণ মালের মালিক নয়) এবং তারপর ধারাবাহিকভাবে যাদের নাম বর্ণিত হয়েছে; তারাই জাকাতের সবচেয়ে বেশি হকদার এবং এদের জাকাত দেওয়া উত্তম। এটা এই আয়াতের সর্বশেষ শব্দ ‘আলিম ও হাকিম’ দ্বারা বোঝা যায়। কারণ, এ ব্যাপারে বান্দার চেয়ে আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন এবং এদের দান করলেই সমাজে ধনী-গরিবের মাঝে বৈষম্য দূর হবে। তাই তিনি আয়াতের শেষে বলেছেন, তিনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। বোঝা গেল বর্ণিত ব্যক্তিদেরই জাকাত দেওয়া সবচেয়ে উত্তম। এখন এই ফকির, মিসকিনদের মাঝে কারা আবার বেশি হকদার তাও পরিষ্কারভাবে বান্দাকে জানান দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর মহব্বতে সম্পদ ব্যয় করবে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী  ক্রীতদাসদের জন্য। সূরা বাকারা। আয়াত ১৭৭। এ আয়াতে প্রথমে আত্মীয়স্বজনের কথা বলা হয়েছে, তাই বোঝা যায়, সবার আগে আত্মীয়স্বজন সবচেয়ে বেশি হকদার। যা নবীজীর হাদিস প্রমাণ করে। নবীজী ইরশাদ করেন, গরিবদের দান শুধুই দান, আর আত্মীয়দের দান এবং আত্মীয়তা রক্ষা উভয়টাই। নাসাঈ, তিরমিজি, ইবনে মাজা।  

বর্তমান সমাজে ধনী ব্যক্তিরা সম্পদকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। এর একটা কারণ হলো, তারা তাদের সব সম্পদকে নিজেদের বলে মনে করেন। ফলে গরিবের সংখ্যা একদিকে যেমন বেড়ে চলছে, অন্যদিকে ধনী-গরিবের মাঝে বৈষম্য তত বাড়ছে। এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে সমাজে কখনো শান্তি ফিরে আসবে না। আর এর অবসান ঘটাতে চাইলে রাষ্ট্রের কোনো মন্ত্রণালয় কোনো উদ্যোগের মাধ্যমে কিংবা মসজিদের সম্মানিত ইমাম সাহেবরা মসজিদের বয়ানে জাকাত দেওয়ার সুফল ও না দেওয়ার ক্ষতির দিকগুলো বর্ণনা করে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেন এবং ধনীদের এ কথা জানান দেওয়া যে, ধনীদের সম্পদে গরিবের হক রয়েছে, এই সম্পদ তোমাদের একার নয় এবং এ দান তোমাদের ইহ্সানও নয়, এটা গরিবের অধিকার।

লেখক : পরিচালক, মাদ্রাসাতু ইকরা ও হাফসা (রা.) মহিলা মাদ্রাসা- কালিয়াকৈর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর