বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
বিচিত্রতা

পরিবেশ বিপর্যয়

আফতাব চৌধুরী

পরিবেশ বিপর্যয়

নদী-নালা, গাছ-পালা, বাড়ি-ঘর, বাজার-হাট, শহর-গ্রাম সবকিছুই পরিবেশের অঙ্গ। এর কোনো একটিকে অবহেলা করে অন্যটিকে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। পরিবেশের মূল্যবান উপাদান হচ্ছে গাছ। গাছপালা রক্ষা করা আমাদের একান্ত করণীয়। কিন্তু কোথায়? দিন দিন জঙ্গল ধ্বংসের লীলায় আমরা মত্ত। শহরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস কী? যে গাছ আমাদের শ্বাসকার্য চালাতে সাহায্য করে তা নিধন করে চলেছি আমরা প্রতিনিয়ত।

জঙ্গলের পরিস্থিতি দিন দিন ধ্বংসের দিকে। যাদের জঙ্গল রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারাই তাদের অবৈধ কার্যকলাপের জন্য জঙ্গল সাফ করে দিচ্ছেন দিনের পর দিন। একশ্রেণির গরিব মানুষ লাকড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতে গিয়ে গাছের ওপর তীব্র আক্রমণ হানছে। আমরা কোনো কিছুকেই  বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি না। পরিবেশর ভারসাম্য রক্ষায় গাছের ভূমিকা অপরিসীম, এটা আমরা ভুলতে বসেছি। বিজ্ঞানীদের মত, পৃথিবীর উষ্ণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বায়ুম-লে অবিরত মিশে চলেছে কার্বন-ডাইঅক্সাইড। গাড়ির কালো ধোঁয়া, বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থের জ্বলন প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে পৃথিবীতে। নাকে রুমাল গুঁজে চলার অভ্যাস আমাদের আছে, কিন্তু বলার অভ্যাস অনেকের নেই।

প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করার নির্দেশ সত্ত্বেও এতে কর্ণপাত করার কোনো প্রয়োজন আমরা আজকে মনে করছি না। প্লাস্টিক পরিবেশের ক্ষতি করছে তা এক কথায় বলা যাবে না। প্লাস্টিক এমন একটি পদার্থ প্রকৃতিতে মিশে যে একেবারে মাটিতে পরিণত হবে তারও কোনো উপায় নেই। একমাত্র আগুনে গলিয়ে তার রূপ পরিবর্তন করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। পলিব্যাগে বাজার ছেয়ে গেছে। ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। আমরা খালি হাতে বাজারে যাই। কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের কোনো উদ্যোগই আমাদের নেই। পলিব্যাগ ব্যবহারের পর তার অন্তিম পরিণতি হয় রাস্তার ড্রেনে। ড্রেনের পানি আটকে শহর জলমগ্নের ঘটনা হামেশা ঘটে। পলিব্যাগের কুন্ডফল প্রত্যক্ষভাবে আমাদের পরিবেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তার থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আমরা ভাবি না। একার প্রচেষ্টায় এগুলো বন্ধ হবে বলে আমাদের মনে হয় না। এর জন্য চাই ব্যক্তি সচেতনতা। পরিবেশকে ভালোবাসার তাগিদ আমাদের কাজ করে কোথায়?

প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সময় এসে যাবে একদিন। বিজ্ঞানীরা তা  নিয়ে চিন্তিত। আমরা চিন্তিত ক্ষুদ্র স্বার্থের কথা ভেবে। নদী-নালার অবস্থা একেবারে বেহাল হয়ে পড়েছে দিন দিন। শহরে এমনকি গ্রামেও কিছু কিছু অংশে মানুষকে সাপ্লাইয়ের পানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।  শহরের জলাশয় কোথায়? সবই তো বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে গোসল করার সেই আনন্দ আজ কোথায়? যে কোনো বর্জ্য পদার্থ সহজে এসে মিশছে নদীর পানিতে। পৃথিবীর পানির ভাগ বেশি। স্থলের ভাগ কম, এ কথাটা জানা সত্ত্বেও আমরা পানির জন্য হাহাকার করি। কারণ একটাই, পানি আছে কিন্তু বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব সর্বত্র। পানিকে শুদ্ধ রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমাদেরও ঠিকমতো জানা নেই।

পানির অপচয়, পানির অপব্যবহার সম্পর্কে আমরা সচেতন নই। যত্রতত্র জলাভূমি ভরাট করার চক্রান্তে সবাই আমরা লিপ্ত। প্রমোটাররা হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন জায়গার জন্য। বাড়ি বলতে সেই একান্নভুক্ত বাড়ি আজ হাতে গোনা পাওয়া যাবে। সুতরাং বড় বাড়ির বড় উঠানের স্বপ্ন যে আজকে কল্পনার অতীত তা বলা বাহুল্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর