শিরোনাম
শুক্রবার, ৩১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

লাইলাতুল কদরে করণীয়

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

লাইলাতুল কদরে করণীয়

‘নিশ্চয় আমি কদরের রাতে কোরআন নাজিল করেছি। কদরের রাত সম্পর্কে আপনি জানেন কি? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’ সূরা কদর, আয়াত ১-৩। এভাবেই মহান আল্লাহ আল কোরআনে এ রাতের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। দয়াময় প্রভুর অগণন নিয়ামতের মধ্যে অন্যতম একটি হলো সময়; যাকে তিনি (দিন-রাত) দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন এবং কিছু সময়কে কিছু সময়ের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন সপ্তাহের মধ্যে জুমার দিন, মাসের মধ্যে রমজান ইত্যাদি। তেমনিভাবে দয়াময় আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের হেদায়াতপ্রাপ্তি, গুনাহ মোচন ও দোয়া কবুলের জন্য রাতগুলোর মধ্যে লাইলাতুল কদরকে সর্বোচ্চ শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন এবং এ রাতের ব্যাপারে আল কোরআনে স্বতন্ত্র একটি সূরা নাজিল করে এ রাতকে করেছেন আরও মহিমান্বিত, মর্যাদাবান ও বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। লাইলাতুন শব্দের অর্থ রাত। আর কদর শব্দের অর্থ শ্রেষ্ঠত্ব, মর্যাদা, পরিমাণ ইত্যাদি। সুতরাং ‘লাইলাতুল কদর’-এর অর্থ শ্রেষ্ঠ বা মর্যাদাবান রাত। হজরত আবুবকর ওয়াররাক (রহ.) এ রাতের নামকরণ সম্পর্কে বলেন, ‘গুনাহের জালে জড়িয়ে পড়ার কারণে যে ব্যক্তি ছিল সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও মর্যাদাহীন; এমন অপরাধীও যদি এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-জিকিরে মশগুল হয়, খাস দিলে তওবা করে এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে মহান স্রষ্টার দরবারে গুনাহ মাফের ফরিয়াদ করে, তখন সেও হয়ে যায় মহান আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদাবান।’ প্রিয় পাঠক! রব্বুল আলামিন এ রাতের মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ সূরা কদর, আয়াত ৩। এখানে আল্লাহ লাইলাতুল কদর বা শবেকদরকে হাজার মাসের সমান বলেননি; বরং হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলেছেন। তাই আমরা যদি কদরের রাতকে এক হাজার মাসের সমানও ধরি, তাহলে এ রাতটি ৮৩ বছর চার মাসের সমপরিমাণ হয়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল এবং তাতে ইবাদত-বন্দেগি করল, সে যেন ৮৩ বছর চার মাস ইবাদত করার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করল। তার পরও এ রাত হাজার মাস অপেক্ষা কত গুণ উত্তম (?) এক গুণ, দ্বিগুণ না বহুগুণ, তা প্রজ্ঞাময় প্রভুই ভালো জানেন। মহান আল্লাহ এ সূরার মাঝে লাইলাতুল কদর বা শবেকদরের চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন- ১. এ রাতে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে ২. এ রাতে জিবরাইল (আ.)-এর নেতৃত্বে ফেরেশতারা দুনিয়ায় আগমন করেন ৩. এ রাতটি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম ৪. এ রাতে সুবহে সাদিক পর্যন্ত শান্তি ও নিরাপত্তার বারি বর্ষিত হতে থাকে। হজরত মুজাহিদ (রহ.) সূরা কদরের শানেনুজুল প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বনি ইসরাইলের এক ব্যক্তির আলোচনা প্রসঙ্গে বললেন, তিনি এক হাজার মাস পর্যন্ত আল্লাহর পথে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সাহাবিরা এ কথা শুনে যারপরনাই আশ্চর্যান্বিত হলেন। অতঃপর আল্লাহ সূরা কদরের প্রথম থেকে তৃতীয় আয়াত পর্যন্ত নাজিল করলেন এবং এই আয়াতে কদরের এক রাতের ইবাদতকে উল্লিখিত মুজাহিদের হাজার রাতের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম সাব্যস্ত করলেন।’ বায়হাকি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ইমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের নিয়তে ইবাদতের জন্য দন্ডায়মান হয়, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ বুখারি, মুসলিম।

হজরত আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) তার এক আলোচনায় বলেন, ‘পারস্যবাসীদের নেতা হলেন হজরত সালমান ফারসি (রা.), রোমীয়দের নেতা হলেন হজরত সুহাইব রুমি (রা.), আবিসিনিয়াবাসীর সরদার হলেন হজরত বিলাল (রা.)। সব জনপদের সেরা হলো মক্কা মুকাররমা। সব উপত্যকার সেরা হলো বায়তুল মুকাদ্দাস উপত্যকা। সব রাতের শ্রেষ্ঠ হলো লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত। সব গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল কোরআন। সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন জুমার দিন। সব পাথরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ পাথর হাজরে আসওয়াদ।’

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন ও ইসলামবিষয়ক গবেষক।

Email : [email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর