শুক্রবার, ৩১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

আদালতে মামলার স্তূপ

নেতিবাচক মনোভাবের অবসান কাম্য

মামলাজট দেশের বিচারব্যবস্থার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জট থেকে বেরিয়ে আসার নানামুখী চেষ্টা চললেও দৃষ্টিগ্রাহ্য কোনো সুফল অর্জিত হয়নি। মামলা নিষ্পত্তির গতি বাড়লেও দায়েরকৃত মামলার বিপরীতে নিষ্পত্তির সংখ্যা কম হওয়ায় মামলার স্তূপ বেড়েছে অনিবার্যভাবে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাস প্রথমবারের মতো দায়েরকৃত মামলার বিপরীতে বেশিসংখ্যক মামলা নিষ্পত্তির কৃতিত্ব দেখিয়েছে হাই কোর্টের বিভিন্ন দ্বৈত বেঞ্চ। এর ফলে স্তূপীকৃত মামলার পরিমাণ প্রথমবারের মতো নিম্নমুখী হয়েছে। ২০১৮ সাল শেষে হাই কোর্টে বিচারাধীন মামলা ছিল ৫ লাখ ১৬ হাজার ৬৫২টি। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়েছে ২৯ হাজার ৭৭৭টি। এ তিন মাসে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৯ হাজার ৮১১টি মামলা। এর আগে গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে ২৫ হাজার ২৬৩টি। এই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৬ হাজার ৩০৬টি মামলা। মামলা দায়েরের বিপরীতে নিষ্পত্তির হার না বাড়ায় তা ভাবিয়ে তুলছিল বিচার প্রশাসনকে। এ নিয়ে বৈঠকও হয়। পরে প্রধান বিচারপতি মামলাজট কমাতে পুরনো মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় হাই কোর্টের ১৬টি দ্বৈত বেঞ্চকে ১ লাখ ১ হাজার ১৯৬টি মামলা নিষ্পত্তির জন্য পাঠানো হয়। পরে এসব বেঞ্চের বিচারপতিরা ৫৭ হাজার ৬০৯টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। বর্তমানে হাই কোর্টে বিচারাধীন মামলা ৫ লাখ ৬ হাজার ৬৬৪টি। এর আগে ২০১৫ সালে ৩৭ হাজার ৭৫৩টি, ২০১৬ সালে ৩৯ হাজার ৮৭৮টি, ২০১৭ সালে ৩৫ হাজার ৪৯৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয় হাই কোর্টে। বাংলাদেশের আদালতগুলোয় মামলার যে স্তূপ গড়ে উঠেছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। উচ্চ আদালতে যদি ৫ লাখের বেশি মামলাজট সৃষ্টি হয় তবে নিম্ন আদালতে কী পরিমাণ জট গড়ে উঠতে পারে তা সহজে অনুমেয়। এ জটের পেছনে দুটি কারণ প্রধানত দায়ী। প্রথমত, দেশে অপরাধ করে কেউ দোষ স্বীকার করতে চায় না, সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে। ফলে ৯০ ভাগ মামলার তৎক্ষণাৎ নিষ্পত্তির পথ রুদ্ধ হয় ও বিচারে যায়। দ্বিতীয়ত, মামলা নিষ্পত্তিতে আইনজীবীদের একাংশের অনীহা। তারা মামলা ঝুলিয়ে রাখাকে নিজেদের উপার্জনের জন্য সহায়ক মনে করেন। মামলাজট কমাতে এ মনোভাবেও বাদ সাধতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর