রবিবার, ২ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

দারিদ্র্যবিমোচনে জাকাতের ভূমিকা

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

দারিদ্র্যবিমোচনে জাকাতের ভূমিকা

জাকাত ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ইসলামী নৈতিকতা ও অর্থনৈতিক বিধান মেনে চললে সমাজে কখনো ধনী-দরিদ্রের আকাশচুম্বী পার্থক্য সৃষ্টি হতে পারে না। বর্তমানে শ্রেণিবিভক্ত, বৈষম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থার কারণে একশ্রেণির লোক সব সময় অবহেলিত। একমাত্র জাকাতব্যবস্থাই পারে ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। প্রকৃতপক্ষে জাকাত, সদকা, দান-উপঢৌকন, আপ্যায়ন, খাদ্য বিতরণ, সালাম বিনিময়ে সবার মাধ্যমে সম্প্রীতি, ঐক্যবোধ, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা এবং কল্যাণ কামনার বুনিয়াদে সব বৈষম্য দূর হয়ে সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বভিত্তিক কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই ইসলামে সামাজিক বৈষম্য দূর করে সাম্য, মৈত্রীর সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাকাত বিধান এক বিস্ময়কর ব্যবস্থার নাম। জাকাতের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার দারিদ্র্যবিমোচন, যা সামাজিক নিরাপত্তার মূল চালিকাশক্তি। জাকাত বণ্টনের আটটি খাতের মধ্যে চারটিই (ফকির, মিসকিন, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত) সর্বহারা, অসহায়, অভাবগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য নিবেদিত। এ ছাড়া নওমুসলিমের খাতটাও বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এর মধ্যে আসতে পারে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা দরিদ্র লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন কর। তাদের প্রতি সাধ্যমতো অনুগ্রহ ও উপকার কর। আখেরাতের পথে তারা তোমাদের জন্য সংগৃহীত ধন ও প্রধান সম্বল। কিয়ামতের দিন আল্লাহ রব্বুল আলামিন দরিদ্রের প্রতি আদেশ করবেন, পৃথিবীতে যারা তোমাদের এক লোকমা অন্ন এবং এক ঢোক পানি দান করেছে, এক প্রস্থ বস্ত্র দান করেছে আজ তোমরা তাদের হাত ধরে জান্নাতে চলে যাও।’ ওমর (রা.) বলেছেন, ‘আমার রাজ্যে ফোরাত নদের তীরে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায় তাহলে তার জন্য আমি ওমরকে আল্লাহর কাছে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জবাবদিহি করতে হবে।’ জাকাত ধনীর সম্পদকে পবিত্র করে। যে পরিমাণ অর্থসম্পদ জাকাত হিসেবে ধনীদের ওপর ফরজ হয় তাতে দাতার কোনো নৈতিক ও আইনগত অধিকার থাকে না। জাকাত কেবল দাতার সম্পদকে পবিত্র করে না বরং তার হৃদয়কে সুনির্মল ও প্রসারিত করে। তার মন-মানস আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা-চেতনা মূলক হয়ে সমাজকেন্দ্রিক সঞ্জীবিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে সম্পদলিপ্সা ও স্বার্থপরতা ইত্যাদি দূর হয়। জাকাতপ্রাপ্তির ফলে গ্রহীতার মন থেকে ধনীদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, শত্রুতা ও ঘৃণার মানসিকতা দূর হয়ে যায়; যার কারণে সমাজের সর্বস্তরে সম্প্রীতি বিরাজ করে সহমর্মিতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

সর্বশেষ খবর